বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা
আলাউদ্দিন আরিফ
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৪ ১২:০৮ পিএম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪ ১২:১৪ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। ফাইল ছবি
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার সময় দেশব্যাপী নজিরবিহীন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনার পর গত রবিবার রাত থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার (২২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত শুধু ঢাকাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে ৫১৬ জন। সারা দেশে এই সংখ্যা কয়েক হাজার। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৩০টিরও বেশি। নৈরাজ্যে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে রাজধানীতে চিরুনি অভিযান ও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি স্থানে ব্লক রেইড অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের সাঁজোয়া যানসহ অংশ নিতে দেখা গেছে।
পুলিশ সদর সপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ৩ জন পুলিশ। আহত হয়েছেন প্রায় ১০০০। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ১২১ জন। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন দুজন। আক্রমণ চালিয়ে পুলিশকে হতাহত করার প্রতিটি ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হবে।
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, দুষ্কৃতকারীরা সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, ঔষধ প্রশাসন ভবন, মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, আফতাবনগর ওয়াসা অফিস, রামপুরা থানা, উত্তরাপূর্ব থানা, বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা ও মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। ওইসব এলাকার যেসব সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানাচ্ছে, সহিংসতায় অংশ নেওয়া অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) অপারেশন আনোয়ার হোসেন জানান, এসব নাশকতা ও তাণ্ডবে বিএনপি ও জামায়াতের পদধারী অনেক নেতাকে সামনের সারিতে থেকে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ ধৈর্য ও পেশাদারত্বসহ দায়িত্ব পালন করছে : আইজিপি
গতকাল সোমবার আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন নরসিংদীতে পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান। যাওয়ার সময় তিনি রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ‘দুষ্কৃতকারীদের’ আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। আইজিপি বলেন, ‘কোটা আন্দোলনে নামা ছাত্রদের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতচক্র দেশে তাণ্ডব ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। যারা এই ধরনের তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পুলিশ সদস্যরা ধৈর্য ও পেশাদারত্বসহ দায়িত্ব পালন করে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাব্কি ও শান্তিপূর্ণ ছিল।
এক পর্যায়ে দেখা যায়, ওই আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একশ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতকারী ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স, পুলিশের গ্যারাজ, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহন, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, বিআরটিএ ভবন, সেতু ভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা কারাগারে আক্রমণ করেছে, যাতে সকল অপরাধী ও জঙ্গিরা ছাড়া পায়। দেশে যাতে একটি বিচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুষ্কৃতকারীরা ব্যাংকের এটিএম বুথ পর্যন্ত ভেঙে লুট করে নিয়ে গেছে। ডেটা সেন্টার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আগুন দিয়েছে। ঔষধ প্রশাসন, স্টেডিয়াম, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের মতো ন্যক্কারজনক কাজ করেছে। সাধারণ জনগণের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাসসহ অন্যান্য যানবাহন তারা ভাঙচুর করেছে। পুলিশ তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে।
নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে : কমিশনার
এদিকে গতকাল সোমবার যাত্রাবাড়ী-কদমতলী থানা এলাকা পরিদর্শন করেন ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩০টির বেশি মামলা হয়েছে। দুষ্কৃতকারী সন্দেহে ৫১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অভিযান অব্যাহত আছে। বেশ কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আমাদের অনেক সহকর্মী গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তারপরও পুলিশ পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।’
বিএনপির নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
এদিকে গতকালও বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয়, মহানগরী ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রবিবার ঢাকার আদালতের মাধ্যমে ১৪৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল পাঠানো হয়েছে ১৭০ জনকে। এদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেনÑ বিএনপি নেতা সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পদক বখতিয়ার আহমেদ কচি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেক বক্কর, বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন।
এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল আলম ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল সালাম। তারও আগে গত শুক্র ও শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সীতাকুণ্ডের যুবদল নেতা সলিম মিয়া, জসিম উদ্দিন, রাশেদুল ইসলামসহ অনেককে।
বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতারা জানান, দেশব্যাপী ইন্টারনেটসহ যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে রাখায় কত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে তার হিসাব নেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা বিকল্প উপায়ে হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
জামায়াতের শতাধিক গ্রেপ্তার
জামায়াতে ইসলামীর নেতারা জানিয়েছেন, দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব যোবায়ের এবং কেন্দ্রীয়, মহানগরী ও জেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পল্টন থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত রবিবার রাতে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পেট্রোল বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেনÑ আবু সাঈদ ওরফে বিষু, মনির হোসেন রিপন, শান্ত শাকিব, মনিরুজ্জামান, রাকিব মিয়া, নাসিরুল ইসলাম, রাকিব হোসেন, রাকিব মাদবর, জাহাঙ্গীর আলম ও নায়েব আলী। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
থানায় থানায় চিরুনি অভিযান
সহিংসতা দমনে গত শনিবার রাত থেকেই রাজধানীতে কম্বিং (চিরুনি) ও কম্বাইন্ড (যৌথ) অপারেশন শুরু করেছে পুলিশ। তাদেরকে সহযোগিতা করছে বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। অনেক এলাকায় ব্লক রেইড অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে নাশকতাকারী সন্দেহে বহু মানুষকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতের অনেক নেতার বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী থানা, মুগদা ও বাসাবো থানা, রামপুরা ও হাতিরঝিল থানা, মিরপুর থানা, বাড্ডা ও ভাটারা থানা, উত্তরাপূর্ব এবং পশ্চিম, মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কারণ গত কয়েকদিন এইসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছে বেশি।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, মেস এবং বাসাবাড়িতেও ব্লক রেইড দিয়ে অভিযান চালানোর খবর পাওয়া গেছে। ফকিরাপুল, গুলিস্তান, কমলাপুর, নবাবপুর রোড, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, কলাবাগান, শুক্রাবাদ ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক হোটেলে অভিযান চালানো হয়েছে।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, ‘নাশকতাকারী, দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান ও ব্লক রেইড অভিযান চলছে। এসব অভিযানে যাতে কোনো নিরীহ লোক হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জে গ্রেপ্তার ৩৭
মধ্যাঞ্চল প্রতিবেদক জানান, কিশোরগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলায় ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা, ভৈরব, ও পাকুন্দিয়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক মামলায় আড়াই হাজারজনকে আসামি করেছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে কিশোরগঞ্জে কারফিউ চলার সময় লোকজন নির্ধারিত প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। শহরে সীমিত পর্যায়ে সেনা টহল চলছে।
কক্সবাজারে ৩ মামলায় গ্রেপ্তার ১৩
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া ৩ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সদর থানায় দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ ২টি মামলা ও জাসদ নেতা মোহাম্মদ মাসু বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি তিন শতাধিক।
রংপুরে গ্রেপ্তার ৭৫
রংপুরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরএমপি কমিশনার মনিরুজ্জামান জানান, দুর্বৃত্তরা পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ও সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর করেছে। সেখানে বিএনপি ও জামায়াতের পদধারী নেতাদের সামনের সারিতে থেকে নাশকতায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
গাজীপুরে ১৭ মামলায় আটক ১৬৬
গাজীপুরে ৮ থানায় মামলা হয়েছে ১৭টি। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬৬ জন। মামলায় আসামিদের মধ্যে ৪১৫ জনের নাম রয়েছে। আর অজ্ঞাত আসামি ১৩ হাজার ৪৫০ জন। গাজীপুর মেট্রো পলিটন পুলিশের এসি (মিডিয়া) সুবির কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রাজবাড়ীতে আটক ৮
রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের অভিযানে ৩ জন, বালিয়াকান্দি থানা পুলিশের অভিযানে ২ জন ও গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশের অভিযানে ২ জনসহ জেলায় মোট ৮ জন আটক হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
খুলনায় আটক ৩৩
সোমবার খুলনা মহানগরীর আট থানার পুলিশ নাশকতার অভিযোগে ৩৩ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে নগরীতে ১৬ জন ও ৯ উপজেলায় ১৭ জন রয়েছে। কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক ও পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমানের অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ময়মনসিংহে আটক ১৫
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় ৪, জেলার ফুলপুর থানায় ২ ও গৌরিপুর থানায় ১টিসহ মোট ৭টি মামলা হয়েছে। জ্ঞাত-অজ্ঞাত আসামি ২ হাজার ৪০০। গত কয়েক দিনে পুলিশের অভিযানে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বয়াক লিটন আকন্দ, তার ভাই রতন আকন্দ, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মাছুদ মিঞা সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুরে আটক ২০
দিনাজপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার দুটি মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচিসহ বিএনপি-জামায়াতের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশÑ এমন দাবি করেছেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক বাবু চৌধুরী। তবে কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হোসেন বলছেন, বখতিয়ার কচিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। দুটি মামলায় ৬০ জনের নামসহ ১৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বগুড়ায় ১০ মামলায় আটক ৮৯
কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় বগুড়ায় পৃথক ১০ মামলায় গত কয়েকদিনে মোট ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থক। এদিকে কারফিউ থাকলেও সোমবার শহরে মানুষের চলাচল কিছুটা বেড়েছে। সেনা মোতায়েনের কারণে মানুষের মধ্যে স্বস্তির ভাব ফিরে আসতে শুরু করেছে।
ঢাকার আশুলিয়ায় নাশকতা মামলায় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মী ও রাঙামাটিতে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, আশুলিয়া, খুলনা, রাজবাড়ী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক, রংপুর, বগুড়া ও কক্সবাজার অফিস)