কোটা আন্দোলন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫৫ পিএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪ ১৭:০৬ পিএম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। প্রবা ফটো
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, কোটা প্রথা নিয়ে নির্বাহী আদেশ স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ স্থগিত রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের বোঝা উচিত– রায় যেহেতু নেই, তাহলে আন্দোলন কেন? আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা খুবই পরিষ্কার। শিক্ষার্থীদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, তাদের যদি কিছু বলার থাকলে আদালত তাদের কথা শুনবেন। তারা যেন আদালতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট একটা নির্দেশনা দিয়েছেন– হাইকোর্টের রায় স্থগিত। যে মামলা চলছে, সেই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত এটা স্থগিত থাকবে। তারা (শিক্ষার্থীরা) যেটা চেয়েছিলেন, সেই দিকেই যখন যাচ্ছে, তখন রাস্তায় থেকে তাদের কষ্ট করার দরকার নেই। আদালত সব ধরনের সুযোগ তাদের জন্য রেখেছেন। তাদের কথা শুনতে চাচ্ছেন আদালত। রাস্তায় অবস্থান করার কোনো প্রয়োজন আছে আমার মনে হয় না।’
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে এ মাসের শুরু থেকে আন্দোলন চলছে। এ-সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ থেকে বুধবার আদেশ আসে হাইকোর্টের রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা থাকবে। আগামী সাত আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে কোটা প্রথা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র এক রিট আবেদনে স্থগিত করেন সর্বোচ্চ আদালত।
আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নিচ্ছেন। তারা আজও রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা নির্বাহী আদেশের অপেক্ষায় আছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন। দেশের বিচারবিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সেখান থেকে যে নির্দেশনা এসেছিল, ছাত্ররা মনে করেছেন তাদের যে চিন্তাভাবনা, সেটা থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে তারা রাস্তায় চলে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, তারা খুবই মেধাবী। তাদের চাহিদা আমরা শুনব। কিন্তু শোনারও একটা সীমা থাকে, তারা বোধহয় সেটা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। আজ বেশ কয়েক দিন হলো, তারা একই কাজ করছেন। পৃথিবীর অনেক দেশে এ ধরনের কোটা রয়েছে। অনগ্রসর কোনো জায়গাকে লক্ষ রেখে এ ধরনের কোটা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে।’
কোটা পুনর্বহাল–সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার আদেশের পর এখন কেউ রাস্তা বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবে– ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকে আজ এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল আপনারা যারা যাতায়াত করেছেন, তাদের কী রকম কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি অনুরোধ করছি– কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি, তারা যেন এখানে কষ্ট না করে আদালতে গিয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের পদক্ষেপ কখন আসে? যখন অপারগ হয়ে যায়, অগ্নিসংযোগ করতে যায়, যখন ধ্বংস করতে যায়, যখন জানমালের নিশ্চয়তার অভাব হয়ে যায়, যখন অনৈতিকভাবে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, তেমন কিছু হলে পুলিশ বসে থাকবে না।’
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘এই ধরনের আন্দোলন হলে ঘোলা পানি তৈরির লোকের অভাব হয় না। আমরা যে তথ্য পাচ্ছি– অনেকেই তাদের (শিক্ষার্থীদের) ব্যবহার করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে, দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের ছাত্রসমাজ তাদের কুমন্ত্রণা কানে নেবেন না। যেহেতু এটা মীমাংসার পথে চলে গেছে, তারা ব্লকেড প্রত্যাহার করে ফিরে যাবেন। তবে অগ্নিসংযোগ, জানমালের অনিশ্চয়তা ও অনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ বসে থাকবে না।’
আবেদন-নিবেদন ও আদালতের আদেশের পরও শিক্ষার্থীরা ফিরে না গেলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘প্রথম কথা হলো– তারা শিক্ষিত,মেধাবী। তারা কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবে। নিশ্চয়ই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে তারা ফিরে যাবেন।’