প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪ ০৯:২৯ এএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৪ ১০:৫৩ এএম
কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেস করে পানি। বুধবার বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা। প্রবা ফটো
প্রবল বৃষ্টিতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। একই কারণে বন্যা-পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে। বিপদসীমা অতিক্রম করেছে কয়েকটি নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে রয়েছে কালনী, কুশিয়ারা, দুধকুমার, তিস্তা প্রভৃতি। বন্যায় শুধু সিলেটেই ৮ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে জেলার পর্যটনকেন্দ্র। পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন একজন। তা ছাড়া সুনামগঞ্জে সাড়ে ৬ লাখ মানুষসহ অনেক জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক টর্নেডোয় মোংলায় উড়ে গেছে অনেক বসতঘর; পড়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে অনেক গাছপালা। সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ সুরমা বরইকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রক্ষায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার নতুন পানিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরে ধরা পড়ছে দেশি নানা প্রজাতির মাছ।
মৌলভীবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি প্রায় ২ লাখ মানুষ
সোমবার ১৭ জুন) থেকে বুধবার (১৯ জুন) পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এর মধ্যে জেলার রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ৫৭১টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের তিন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৪০ গ্রাম।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত সোমবার ঈদের দিন ভোর থেকে মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্র ভারী বর্ষণ শুরু হয়। যা বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ ছাড়া উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢল এবং টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে জেলার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫ পৌরসভা, ৩৭ ইউনিয়নের ৪৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এসব এলাকায় অনেক রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে ও ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্লাবিত এলাকার মানুষজনের নিরাপদে অবস্থানের জন্য জেলায় মোট ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে চার উপজেলার ৫৭১টি পরিবারকে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। জেলার সর্বত্র পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং সাত উপজেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে জরুরি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পানিবন্দি ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ বরাদ্দ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে দুধকুমার ও তিস্তার পানি
১৯ জুন ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের প্রধান নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যান্য নদ-নদীরও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দিকে ছুটছে। এমন পরিস্থিতিতে নদ-নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে জেলার রাজারহাট উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙনের হুমকিতে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় বাজারসহ অন্তত শতাধিক পরিবার।
নেত্রকোণায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল
গত দুদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, আটপাড়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় এরই মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার ৭টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জেলার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপন, কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বড় নদী উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার দুপুর ১টার দিকে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।
এদিকে কলমাকান্দার মহাদেও, দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, সদর ও বারহাট্টা উপজেলার কংস, মগড়া, খালিয়াজুরির ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে বন্যার পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে যাওয়ায় ৭টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।
রংপুরে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তা, ভাঙনের মুখে ঘরবাড়ি
উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে গঙ্গাচড়ায় কোলকোন্দ ইউনিয়নে তিস্তার পানির তোড়ে ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ১০টি ঘরবাড়ি। ভাঙন ঠেকাতে সেখানে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে করে গত কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। বুধবার বিকাল ৩টায় এ পয়েন্টে ২৮ দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে এবং কিছু স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নে একটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটি মেরামতে গতকাল রাত থেকে সেখানে কাজ চলছে।
দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল শ্রীপুর পৌরসভার রাস্তাঘাট
সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শ্রীপুর পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পৌর নাগরিকরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। বের হলেও জলাবদ্ধতার কারণে চলাফেরায় নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর রাজস্ব আদায়ে লাভবান হলেও প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার এমন দুরবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পৌর শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
জলাবদ্ধতা নিয়ে পৌরবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় শ্রীপুর পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, আপাতত কিছুই করার নেই। পৌরসভা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড়-দুই ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সুনামগঞ্জে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি, নদীতে পানি কমলেও বেড়েছে লোকালয়ে
সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও হাওর অঞ্চল ও পৌর শহরের পাড়া-মহল্লায় বাড়ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এদিকে বুধবার সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হয় ৪০ সে.মি ওপর দিয়ে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে ভোর থেকে একটানা বৃষ্টি হয় সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত।
বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুন পাড়া, শান্তিব্গা, ধোপাখালী, বাঁধনপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, নবীনগর, কাজীর পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়েছে।
জেলা বন্যানিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৪৭ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৪৩৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন।
সিলেটে ৮ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, বন্ধ পর্যটনকেন্দ্র, পানিতে তলিয়ে গেছেন একজন
কয়েক দিন ধরে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে ৮ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নগরীর এক-তৃতীয়াংশের পাশাপাশি জেলার ১২ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নগরীতে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সাবস্টেশন রক্ষায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হয়। বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় নগরীর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অনেক এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বিঘ্নিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে তীব্র স্রোতে আব্দুল হালিম (৫৫) নামে একজন তলিয়ে গেছেন। পেশায় পিকআপ চালক হালিম স্থানীয় বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর গ্রামের মৃত রনই মিয়ার ছেলে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে তিনি তলিয়ে যাওয়ার পর দুপুর ২টার দিকে শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় তার লাশ ভেসে ওঠে। জকিগঞ্জ থানার এসআই মো. মহরম আলী জানান, বন্যার পানিতে একজন নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। লাশ উদ্ধারের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভারী বর্ষণের জন্য সিলেটে ভূমি ধসের আশঙ্কায় সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
বুধবার দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান নগরীর বন্যা উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নগদ ১০ লাখ টাকা, একশ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার সহায়তা প্রদান করেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে সেনা মোতায়েন
সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ সুরমা বরইকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রক্ষায় মঙ্গলবার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের অনুরোধে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি থেকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সেনাসদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ারের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে আসছে।
টেকনাফে ভারী বর্ষণে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত, ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি
কক্সবাজারের টেকনাফে ভারী বর্ষণে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৮ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পাহাড় ধসে প্রাণহানি রোধে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়েছে।
কালনী-কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপরে, হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর বাঁধে ভাঙন
হবিগঞ্জে খোয়াই নদীতে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার বিকালে শহরতলির জালালাবাদ গ্রামের পাশে নদীর বাঁধে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ফলে প্রবল বেগে নদীর পানি জালালাবাদসহ আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করছে। এদিকে সকাল থেকেই খোয়াই, কুশিয়ারা, কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, দুপুর ১টার দিকে খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই পানি নিচে নেমে যাবে।
মোংলায় টর্নেডোতে উড়ে গেছে ঘর, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি
আকস্মিক টর্নেডোতে মোংলায় উড়ে গেছে অনেক বসতঘর। পড়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ভেঙে তছনছ হয়েছে গাছপালা। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আকস্মিক এই টর্নেডো হয়। এতে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটির ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে ও তার ছিঁড়ে দুপুর ১২টা থেকে এখন পর্যন্ত পুরো মোংলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝড় কমলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে সাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলায়। ফলে এক ধরনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মোংলার উপকূলজুড়ে।
কিশোরগঞ্জে নতুন পানিতে ধরা পড়ছে দেশি নানা প্রজাতির মাছ
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে নিচু এলাকার খাল-বিল ও কৃষিজমিগুলোতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে নতুন পানি। ওই পানিতে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আয়োজন করে মাছ ধরছেন শৌখিন শিকারি ও মৌসুমি জেলেরা।
বর্ষার আগমনে বিলে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির মাছ। জমিতে বৃষ্টির পানিতে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা আর কচুরিপানা থাকায় নিচু জমিতে বছরে এক ফসল বোরো ধান চাষাবাদ হয়। এ সুযোগে জলাধারগুলোতে নানা প্রজাতির মাছ প্রজনন করে থাকে। ফলে এসব মাছ বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন ধান চাষিরা। আবার মাছের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে তাদের।
বুধবার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলগুলোর নিচু এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পাশে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ঝাঁকি জাল, টানা জাল, ঠেলা জাল, বেল, পেতে রাখা জাল, চাঁই, বড়শিসহ আরও অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা। কেউ পানি ঢোকার জায়গায় স্রোতের পাশ থেকে দূরে উড়িয়ে দিচ্ছেন জাল। এসব জালে দেশি মাছ বেশি ধরা পড়ছে। ট্যাংরা, চান্দা, পুঁটি, চিংড়ি, বাতাসি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক দিন আগেও যে জমিতে গরু ঘাস খেয়েছে সেই জমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে জেলেরা। এই মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমূল্যে।
দিনের পাশাপাশি অনেকে রাতের আঁধারেও কোঁচা দিয়ে মাছ শিকার করছেন। কোঁচা দিয়ে সাধারণত শিং, ট্যাংরা, কই, মাগুর, চেঙ, শোলসহ বড় আকারের মাছ ধরা পড়ে। সদর উপজেলার ভূবিরচর গ্রামের মাছ শিকারি শালিক মিয়া বলেন, রাস্তার পাশে জমিতে বৃষ্টির পানি ভরপুর থাকে। নতুন পানি থাকার কারণে নানা ধরনের মাছ জন্মায়। আমরা বর্ষার মৌসুমে এসব জমিতে মাছ ধরে থাকি। ধান আবাদের চেয়ে মাছ চাষেই আমাদের লাভ বেশি হয়।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নধার গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, নিজেরা খাওয়ার জন্য মাছ ধরেন। আজকে (গতকাল) প্রথম এসেছেন মাছ ধরতে। এর আগে জমিতে পানি ছিল না। তাই মাছ ধরতে পারেননি। নতুন পানি এসেছে। তবে এখনও তুলনামূলক কম মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্থানীয় জলাশয়-বিলে ইতোমধ্যে পানি আসতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে জলাশয়গুলো ভরে উঠেছে দেশীয় জাতের ছোট-বড় মাছ। জেলেরা এর ওপর নির্ভর করে তাদের সংসার চালিয়ে থাকেন। কিন্তু কিছু কিছু অসৎ জেলে চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করায় দেশীয় মাছের বংশ হুমকির মুখে। এরপরও কেউ ব্যত্যয় ঘটালে আমরা অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
[মৌলভীবাজার প্রতিবেদক, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), কুলাউড়া (মৌলভীবাজার), কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, নেত্রকোণা প্রতিবেদক, রংপুর অফিস, রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক, হবিগঞ্জ প্রতিবেদক, মোংলা প্রতিবেদক, সিলেট অফিস, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিবেদক, মধ্যাঞ্চলীয় ব্যুরো]