প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪ ০৯:৪০ এএম
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজের জায়গা প্রবীণ নিবাসে খুঁজে নিয়েছিলেন নুরুল আলম। পেশায় ছিলেন ব্যাংকার। দুই ছেলেই এখন দেশের বাইরে থাকেন। স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় তিনি আছেন বড় ছেলের সঙ্গে। ছোট ছেলেকে নিয়েই কিছুটা সময় তিনি দেশে কাটান। উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তীতে ছেলেকে বাইরে যেতে নিজেই উৎসাহিত করেন।
রাজধানীর তেজগাঁও প্রবীণ নিবাসে কথা হয় নুরুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে আসার পর অনেক টিভি চ্যানেল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এসব দেখে ছেলেরা ফোন করে কান্নাকাটি করে। পরে তাদের বুঝিয়ে বললাম, আমি ভালো আছি।
নুরুল আলমের দুই ছেলের একজন থাকেন কানাডাতে, অন্যজন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এখন পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন। নুরুল আলমের স্ত্রীর একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তিনি কানাডায় ছেলের কাছেই থাকেন সারা বছর। মাঝেমধ্যে দেশেও আসেন। তবে ছেলের কাছে কানাডা যাওয়ার ইচ্ছা নেই নুরুল আলমের। তাই নিজের জায়গা তিনি নিজেই খুঁজে নিয়েছেন। তিনি বলেন, দুইবার ভিসা হয়েছে। দুইবারই শেষ সময় আর যাইনি। দূর দেশে যেতে মন সায় দেয়নি।
তিনি বলেন, ছেলেদের ভবিষ্যৎ আছে। তাদের তো এগিয়ে যেতে হবে। আমাকে নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। আমি যাব না কিন্তু ছেলের ভবিষ্যৎ তো নষ্ট করতে পারি না। ছেলেকে আমিই যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছি।
বাবার ছায়া শেষ বিকালের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়। সে তার সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন। তেমনি সন্তানকে এগিয়ে দেন সামনে চলার পথেও। নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে সন্তানের জন্য বাবার এই ত্যাগের গল্প নূরুল আলমের মতো অসংখ্য রয়েছে।
রবিবার (১৬ জুন) বিশ্ব বাবা দিবস। বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রকাশে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। প্রত্যেক বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে বাবা দিবস পালিত হয়। সেই হিসেবে এ বছরের ক্যালেন্ডারে বাবা দিবস ১৬ জুন।
যেভাবে এলো বাবা দিবস
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্ট এলাকার এক গির্জায় প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের ভাবনা আসে ১৯০৯ সালে। ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না তিনি। ডডের এই ভাবনার জন্ম হয় গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত মাকে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। ডড তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তার কাছে মনে হলো, বাবাদের জন্যও কিছু করা দরকার। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
তবে এই দিবস নিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে মোটেও উৎসাহ ছিল না। বরং তাদের কাছে বিষয়টি ছিল হাস্যকর। ধীরে ধীরে অবস্থা বদলায়। ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। এরপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে।