× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুই লাখের বেশি স্মার্ট মিটার ক্রয়ে অনিয়ম

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪ ২৩:৫০ পিএম

আপডেট : ১২ জুন ২০২৪ ১৬:২৮ পিএম

দুই লাখের বেশি স্মার্ট মিটার ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রবা ফটো

দুই লাখের বেশি স্মার্ট মিটার ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রবা ফটো

দরপত্রে যেসব শর্ত দেওয়া আছে, সেসব পূরণ করতে পারেনি একটি প্রতিষ্ঠান। তবু সেখান থেকেই ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার’ কেনার আয়োজন চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবি)। যদিও ওই প্রতিষ্ঠানটির স্মার্ট মিটারের মতো পণ্য সরবরাহের কারিগরি সক্ষমতা নেই। বিভিন্ন নথিপত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানহীন এসব মিটার ব্যবহারে গ্রাহকরা যথাযথ সেবা পাবে না। কারণ এগুলো সহজেই খোলা ও লাগানো যায়। তারপরও ওই প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়েছে।

বিউবি ২০২৩ সালের ২৫ জুন ২ লাখ ১০ হাজার স্মার্ট মিটার কিনতে ৫টি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। এসব দরপত্রে অংশ নেয় পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছেÑ হলি টেকনোলজি লিমিডেট, নিংবো সানসিং স্মার্ট ইলেকট্রনিক কোম্পানি লিমিটেড, আইডিয়াল ইলেকট্রনিক এন্টারপ্রাইজ, হেক্সিং ইলেকট্রনিক লিমিটেড ও সেনজেন স্টার ইনস্ট্রুমেন্ট লিমিটেড। পণ্যের মান নিশ্চিত করতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপি) অনুযায়ী দরপত্রগুলো দুই ধাপে করা হয়। যাতে শুধু কারিগরিভাবে উত্তীর্ণ হওয়া কোম্পানিগুলোরই দরপত্র খোলা হয়। 

এ সময় শর্ত পূরণ করতে না পারায় নিংবো সানসিং স্মার্ট ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেড কারিগরি মূল্যায়নে প্রাথমিকভাবে অকৃতকার্য হয়। কারণ বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানটির মিটারে গুরুতর কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু পরে এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট পরিবর্তন ও জালিয়াতি করে মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে উত্তীর্ণ করা হয়। এভাবে তাদের কাজ দেওয়ার পথ সুগম করে বিউবি। অভিযোগÑ তাদের যন্ত্রাংশ কম দামি ও নকল হওয়ায় মূল্য যে কম হবে, সেটা আগে থেকেই জানতেন বিউবির অসাধু কর্মকর্তারা। কিন্তু আইনবহির্ভূত ও অনৈতিকভাবে অবৈধ সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে গত ২৩ মে নিংবো সানসিং স্মার্ট ইলেকট্রনিক কোম্পানিকে একটি প্যাকেজে নোয়া দেয় বিউবি। 

মানসম্মত নয় মিটারের রিলে

বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা জানান, মিটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ রিলের বিষয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে নিংবো সানসিং। বিউবির দরপত্রের চাহিদা ছিলÑ রিলে হওয়া চাই মানসম্মত এবং খ্যাতনামা কিছু ব্র্যান্ডের। কিন্তু নিংবোর স্যাম্পল মিটারে রিলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, উৎপত্তির দেশ ও ব্র্যান্ড কোনোটাই খোদাই করে লেখা ছিল না। তবে প্রতারণার লক্ষ্যে নিংবো কোম্পানি আলাদা করে খাপ বানিয়ে সেটিতে কেজি ব্র্যান্ডের নাম প্রিন্ট করে দেয়। নকল রিলেতে কেজি ব্র্যান্ডের নামের শুধু একটি ক্লিপ লাগানো ছিল। বিউবির শর্তে নির্ধারিত দিনের পরে আবারও প্রতিষ্ঠানটির মিটার খুলে অল্প কয়েকটিতে কেজি রিলে পাওয়া গেছে। তাদের রিলের মধ্যে এনগ্রেভড ছিল না। অথচ দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যে বিখ্যাত কেজি কোম্পানির রিলে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের মিটার খুলে রিলের মধ্যে ব্র্যান্ডের নামও খোদাই করা পাওয়া গেছে।

নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, দরপত্র বাতিলের আরও কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত ভঙ্গ করেছে এ কোম্পানি। পণ্য কম দামে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা নিম্ন সিলিং এবং কম দামি নন-ব্র্যান্ড রিলে ব্যবহার করেছে। রিজেকশন ক্লজ অমান্য করার কারণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী তাদের দরপত্র গ্রহণ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গত ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল কারিগরি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ ৪টি কোম্পানির দর উন্মুক্ত করা হয়। তাতে পাঁচটি টেন্ডারের মধ্যে নিংবোর দেওয়া দর ‘সর্বনিম্ন’ পাওয়া যায়। এ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো ডেমোন্সট্রেশন রিপোর্টে লেখা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার কমার্শিয়ালের নির্দেশে রিপোর্ট পরিবর্তন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

মিটার ডেমোন্সট্রেশনের সময় যা ঘটেছিল 

জানা গেছে, মিটার ডেমোন্সট্রেশনের সময়ই বিউবির কয়েকজন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করেন, নিংবোর স্যাম্পল মিটার স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে সহজেই খোলা যায়। তাছাড়া নখের সামান্য আঁচড়েই রিলের নাম উঠে যায়। এ ধরনের মিটার গ্রাহকপর্যায়ে বসানোর উপযোগী নয়। কারণ আলট্রাসনিক ওয়েল্ডিং না থাকায় এ মিটার খুলে ভেতরে অসাধু গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল এড়িয়ে ফ্রিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। মিটারের রিলের ওপর নির্ভর করে, বিদ্যুৎ ব্যবহার আর খরচের হিসাব সঠিকভাবে করা যাবে কি না। কম দামি এসব নিম্নমানের রিলে মিটারে ব্যবহার করা হলে সঠিক বিল করা যাবে না এবং গ্রাহক চাইলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে কোনো কোনো গ্রাহক নিজ ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল দিতে বাধ্য হবে। এরপরও বিউবোর একজন কর্মকর্তার চাপে এই কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দুটি কোম্পানির ডেমোন্সট্রেশন রিপোর্ট ডেমোন্সট্রেশন-পরবর্তী সময়ে যোগসাজশে বদল করা হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনও পরে সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করা হয়েছে।

অনুমোদন নেওয়া হচ্ছে আলাদা প্যাকেজ হিসেবে

বিউবো বোর্ডের ক্রয়ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩০ কোটি টাকা। মিটার ক্রয়ের জন্য বিউবো যে পাঁচটি দরপত্র আহ্বান করেছিল, সেগুলোর মধ্যে চারটি ছিল ৫০ হাজার সিঙ্গেল ফেজ মিটার ক্রয়ের। আরেকটি দরপত্র ছিল ১০ হাজার থ্রি ফেজ মিটার ক্রয়ের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই পাঁচটি টেন্ডারের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে প্রতিটি টেন্ডারকে আলাদা প্যাকেজ হিসেবে দেখিয়ে বোর্ডের মাধ্যমে পাস করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিউবো বোর্ডের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে আলাদাভাবে প্যাকেজের অনুমোদন নিয়ে কাজ দেওয়া হচ্ছে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে। বোর্ড সদস্যরাও এই কাজগুলোকে বড় প্রকল্প হিসেবে মনে না করে ছোট স্বল্প সংখ্যক মিটার ক্রয়কাজ হিসেবে সহজে অনুমোদন করে দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগেও বিউবি একবার নিংবো সানসিং থেকে ১৫ হাজার মিটার কিনেছিল। যার প্রতিটাতেই সমস্যা ছিল এবং তা ঠিক করে পুনরায় ফার্মওয়ার পরিবর্তন ও ইন্সপেকশন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। মিটারগুলো যেসব এলাকায় সরবরাহ করা হয়, সেখান থেকে ব্যাপক অভিযোগ আসে। সমস্যায় অতিষ্ঠ হয়ে বিউবোর বিক্রয় এবং বিতরণকেন্দ্রগুলো নিংবোর মিটার বসাতে আপত্তি জানায়। 

দরপত্রে বর্ণিত শর্ত লঙ্ঘন করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্নমানের মিটার ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একটি প্যাকেজে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে নোয়া দেওয়া হয়েছে। যেসব মিটার কেনা হবে, সেগুলো মানসম্মত ও দরপত্রে বর্ণিত শর্ত অনুযায়ীই হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা