দীপক দেব, কক্সবাজার থেকে
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪ ১৬:২০ পিএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪ ১৭:২৩ পিএম
কক্সবাজার, লালমনিরহাট ও ভোলার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন। বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এসব জেলার সঙ্গে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : পিএমও
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ ঘর পেয়ে মানুষের জীবন বদলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের ঘর করে দিয়েছি তাদের জীবন বদলে গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এজন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের আবাসন কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২ পরিকল্পনার আওতায় মঙ্গলবার (১১ জুন) সারা দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করার আগে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় নিজ সম্পত্তি হিসেবে এই ঘরের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রত্যেকের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বেলা ১১টায় সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান।
বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষে কল্যাণে ও সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সেবক হিসেবেই বাবার মতো সেবা করে যাব। এই দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জীবন পাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আশ্রয়ণের মাধ্যমে মানুষের যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় সম্প্রতি রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড়ে কোথায় ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়েছি, তথ্যসংগ্রহ করেছি। তাদের ঘর করে দেব। ক্ষতিগ্রস্তদের উপকরণ দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেকে ঘর যাতে করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। প্রত্যেক এলাকা থেকে তথ্য নিয়েছি।
এ সময় আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে যারা ঘর পেয়েছেন এটি তাদের নিজেদের সম্পত্তি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যে ঘর পাচ্ছেন এটা আপনাদের নিজের সম্পত্তি, এটার যত্ন নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব।
জাতির পিতা স্বপ্ন পূরণ করাই নিজের লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসব। সেই নাগরিক সুবিধা আমরা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। পাশাপাশি রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বিদ্যতের ব্যবস্থা করা, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। যার সুফল মানুষ ভোগ করছে।
এ সময় চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমানোসহ তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন গণমুখী পদক্ষেপ ও অর্জন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোথাও পিছিয়ে থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব– কথা দিয়েছিলাম, গড়েছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে পথচলা শুরু হবে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
কোথাও যাতে অনাবাদি জমি না থাকে, সেজন্য দেশের মানুষের প্রতি তার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা কারও কাছে ভিক্ষা করে চলতে চাই না, হাত পেতে চলতে চাই না। যতটুকু সম্পদ তা কাজে লাগিয়ে মাথা উঁচু করে চলব। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার।
এ সময় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ সময় এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ভিত্তিহীন মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সেদিন এর প্রতিবাদ করেছিল এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলা জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেন। নতুন ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারা দেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫৮টি এবং উপজেলা হলো ৪৬৪টি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন।
প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা-পাকা বাড়ি দেওয়া হচ্ছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী– আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বুধবার (১২ জুন) আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ ও ভূমিহীনদের ঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন (একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসাবে)।
প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সারা দেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।