মোংলা (বাগেরহাট) ও কয়রা (খুলনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪ ০৯:৪৬ এএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪ ১৭:২৪ পিএম
চার ফুট উঁচু জোয়ারে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের বস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার করমজল বন্য প্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের সামনে থেকে তোলা। প্রবা ফটো
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ বনভূমি। এতে বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জোয়ারের নোনাপানিতে বনভূমির সঙ্গে তলিয়ে গেছে শতাধিক মিঠাপানির পুকুর। এসব পুকুর থেকে বনের প্রাণী ও বনজীবীরা খাবার পানি পেতেন। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মিহির কুমার দো বলেন, ঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে পানির অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে। রবিবার (২৬ মে) দুপুরের জোয়ারের পানি সুন্দরবনের সব নদ-নদীতে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো স্থানে পানির উচ্চতা ছিল ৫ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত। সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাই এ সময় তলিয়ে যায়।
করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ওসি আজাদ কবির রবিবার দুপুরে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানির চাপ আরও বাড়বে। তবে বন্য প্রাণীর কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
আজাদ কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুরো সুন্দরবনের বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে থাকা বনরক্ষীদের এরই মধ্যে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এরই মধ্যে মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি কাজ ও রোগীদের কথা চিন্তা করে মোংলা নদীতে ফেরি চালু রাখা হয়েছে।’
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি রবিবার দুপুর থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেশি বেড়েছে পশুর নদে। মোংলায় এই নদে দুপুরে বিপৎসীমার ৫ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া বলেশ্বর ও ভৈরব নদে বিপৎসীমার ২-৩ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে রবিবার বিকালে সুন্দরবন-সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার হড্ডা গ্রামে কয়রা নদীতে একটি হরিণ শাবক ভেসে এসেছে। পরে বনরক্ষীরা শাবকটি নিয়ে বনের মধ্যে টহল ফাঁড়ির পুকুরের উঁচু পাড়ে ছেড়ে দেন।
কয়রার হড্ডা গ্রামের বাসিন্দা উত্তম মণ্ডল জানান, রবিবার বিকালে তারা দেখেন, পাশের কয়রা নদীতে একটি হরিণ শাবক ভেসে আসছে। শাবকটি ভেসে লোকালয়ের পাড়ে উঠে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ হড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে চলে যায়। সেখানে কয়েকটি কুকুর শাবকটিকে তাড়া করে। তখন তারা সেটিকে উদ্ধার করে নদীর বেড়িবাঁধে নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয়রা বন বিভাগকে জানালে তারা হরিণ শাবকটি নিয়ে যায়।
সুন্দরবনের নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদীগুলোয় জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। পানিতে বনের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যাচ্ছে। হরিণ শাবকটি যেখানে ছিল, সেখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় সেটি ভেসে লোকালয়ে চলে আসে বলে ধারণা করছেন। শাবকটি নিয়ে এসে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ির উঁচু পুকুরের পাড়ে ছেড়েছেন তারা।