× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষা দেব : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:০৬ পিএম

আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৪৪ পিএম

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। প্রবা ফটো

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। প্রবা ফটো

পরিবেশ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে কেউ হয়রানির শিকার হলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষা দেবেন বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেছেন, শুধু পরিবেশ সুরক্ষা নয়, মুক্ত গণমাধ্যম, গণমাধ্যমের সুরক্ষা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়েও আমাদের অঙ্গীকার আছে এবং থাকবে। 

শনিবার (৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। 

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি, পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। এর জন্য প্রধানত দায়ী উন্নত বিশ্ব। এর প্রধান ভুক্তভোগী যারা হতে যাচ্ছে এরমধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ একটি লিডারশিপ রোল নিয়েছে ভুক্তভোগীদের পক্ষে। কাজেই এখানে আমাদের সরকারিভাবে যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য যে সাংবাদিকতা সেই সাংবাদিকতাকে আমরা প্রণোদনা, উৎসাহ, সমর্থন ও সুরক্ষা দিতে চাই। এখানে কোনো বিরোধের জায়গা আমি দেখি না। তবে হ্যাঁ, ক্ষেত্রবিশেষে তৃণমূলে বিভিন্ন ধরনের ব্যত্যয় ঘটে। সেই ব্যত্যয়গুলোকে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা তুলে ধরবেন। সরকারের অবস্থান পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে যেমন অনেক ক্ষেত্রে অপরাজনীতি আছে, বিভিন্ন পেশায় যেমন কিছু নেতিবাচক দিক আছে, তেমন তথ্যের সাঙ্গেও আমরা অপতথ্যের বিস্মৃতি অনেক সময় দেখি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও আমরা অপসাংবাদিকতা দেখি। এটি শুধু আমি বলছি না, আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরাও বলেন। সব সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নেই, সেগুলো বন্ধ করে দেন।’

আলী আরাফাত বলেন, ‘মফস্বলের সাংবাদিকতা একটু কঠিন। ঢাকায় তো বিভিন্ন ধরনের প্রটেকশন পাওয়া যায়। এই কঠিনটা যাতে সহজতর হয়, সেই পদক্ষেপ আমরা নেব। আবার এটাও সত্যি, মফস্বলে অপসাংবাদিকতার চর্চা অনেক হয়। যেখানে পেশাদারিত্বের অভাব দেখা যায়। এই অপসাংবাদিকতার চর্চা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে পেশাদার সাংবাদিকদের। তারা (সাংবাদিক সংগঠন) নিজেরাই এই কথা বলছেন। তারা বলছেন, এখানে শৃঙ্খলা আনা দরকার, আমরা (সরকার) বলছি না। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশনসহ এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়েও বিশাল দাবি আছে। গণমাধ্যমকর্মী আইন গত সংসদে পাশ হওয়ার কথা ছিল। শেষের দিকে এসে এটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে গিয়েছিল। আমি সেই গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে নতুন করে আবার কাজ শুরু করছি। যতগুলো সাংবাদিক সংগঠন আছে সবাইকে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি সংগঠন থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি দেওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে বসে গণমাধ্যমকর্মী আইনটি পর্যালোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করে আমরা দ্রুততম সময়ে সংসদে পাশ করার ব্যবস্থা করব।’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয, উন্মুক্ত হয়ে আছে। এখানে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা ও আইনকানুন নেই। সাংবাদিক বন্ধুরাই বলছেন, এখানে শৃঙ্খলা আনা দরকার। তবে আমরা প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যম যত মুক্ত হবে, তার স্বাধীনতা যত চর্চা করবে এবং অপতথ্যের বিপরীতে যত তথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে ততই সমাজে গুজব, অপপ্রচার এগুলো রোধ হবে।’

সরকারের কোনো ব্যত্যয়-বিচ্যুতি থাকলে সেগুলোও ধরিয়ে দিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সব সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে যখন সমালোচনার নামে অপতথ্য, মিথ্যাচার, অপপ্রচারের মাধ্যমে এক ধরনের এজেন্ডা বেইজড, সিস্টেমেটিক মিথ্যাচার ছড়ানো হয়, সেগুলো আমরা বুঝি কে করছে, কারা করছে, কেন করছে। সেই বিষয়গুলোকে আমরা নিন্দা জানাই। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাই এবং জানাব। কারণ আমরা মনে করি না, সরকার যারা পরিচালনক করছেন, তারা সবাই ফেরেস্তা। সবাই মানুষ। আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে, ব্যত্যয়-বিচ্চুতি থাকতে পারে, ব্যর্থতা থাকতে পারে। সেগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম আছে, এটি গণমাধ্যমের দায়িত্ব। গঠনমূলকভাবে ধরিয়ে দিলে, সেটি স্বীকার করে নিতে এবং সেগুলো শুদ্ধ করে নিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি আরও বলেন, রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট যেটা আছে আছে, সেটা আমি পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্বাস করি। রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে কোনো গণমাধ্যম জনগণের পক্ষে যে তথ্য চাইবে সেটা আমি তড়িৎ গতিতে দিতে বাধ্য থাকব। এ ধরনের মানসিকতা তৈরি করার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা ওরিয়েন্টেশন করব। 

এসময় পরিবেশ সাংবাদিকতায় নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন সম্পাদকরা—

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি ও সমকালের প্রকাশক একে আজাদ এমপি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পথ দিন দিন আরো নিম্নমুখী হচ্ছে। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও গোষ্ঠীর চাপে সুস্থ সাংবাদিকতার পথ ক্রমশসংকুচিত হচ্ছে। সাংবাদিকেরা কাজ-করতে-পারছেন না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ২০২৩ সালে ২৯০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে জেলা ও মফস্বল পর্যায়ে সাংবাদিকতা ভীষণ বিপজ্জনক পেশা হয়ে উঠছে। সাংবাদিকেরা মামলা-মোকদ্দমা-হুমকি সামলাবে নাকি নিজেদের কাজ করবে।’

তিনি বলেন, আমি এমন সাংবাদিককে চিনি যিনি কিনা পরিবেশ বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ করায় ১৩টি মামলায় শিকার হয়েছেন। সবগুলি মামলাই করা হয়েছে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। ভূমিদস্যু, নদীদস্যু, বালুদস্যু এবং অরণ্য ও পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতার সামনে বড় বাধা হয়ে উঠেছে পরিবর্তিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ), যা এখন সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে পরিচিত। ৫ বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৪৫১ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হন ৯৭ জন। এ ধরনের আইন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অপকর্মকেই সুরক্ষা দেয়। অথচ সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। এই যখন অবস্থা তখন সাংবাদিকদের একটি অংশ সেলফ সেন্সরশিপে চলে গিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে চান। আমাদের প্রশ্ন হলো সাংবাদিকতা কি অপরাধ? জনস্বার্থে তথ্য অনুসন্ধান এবং তা প্রকাশ করতে গিয়ে কেন তারা ‘অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবেন?

সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে যে সংকট চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট পরিবেশ বিপর্যয়। এগুলো মানব সৃষ্ট বিপর্যয়। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হলে অনেক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। কারণ পরিবেশ ধ্বংসকারী অনেকেই গণমাধ্যমের মালিক। ঢাকার চারপাশে যারা দখলকারী তাদের প্রায় সবারই মিডিয়া রয়েছে। আবার আইন প্রণেতারও পরিবেশ দূষণের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হলে নানা চ্যালেঞ্জ আসে। পরিবেশ নিয়ে লেখা অনেক কঠিন। 

দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, পরিবেশ নিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা ও আগ্রহ কম। কারণ বিষয়টি জনপ্রিয় না। আবার পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে টেকনিক্যাল অনেক বিষয় জানতে হয়। সচেতন জায়গা থেকে কথা বলার সুযোগ কম।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তী পৃথিবীর লড়াই ক্লাইমেট চেঞ্জ।  এই খাতে বেসরকারিভাবে অনেক কাজ হচ্ছে। গ্লোবাল উইন্ডো খুলেছে। সুতরাং পরিবেশ নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ তৈরি হচ্ছে। 

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের আন্দোলনে একটি জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করি। কিন্তু তাদের বক্তব্য সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেন সাংবাদিকরা। আবার পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা করে অনেক সাংবাদিক ডিজিটাল এক্টের মামলার শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতার জন্য আমাদের আরো বেশি চর্চা করতে হবে। আমাদের দেশের মানচিত্রকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশ সাংবাদিকদের শক্তিশালী ভূমিকা প্রয়োজন। 

সমাপনী বক্তব্যে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, আমাদের দেশে নয়টি আইন আছে যা স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রভাবিত করে। কিন্তু সাংবাদিকদের সহায়ক কোন আইন নেই। পরিবেশ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকক করলে কোন সাংবাদিক হয়রানীর শিকার হবেন না এজন্য সরকারি একটা আইন অথবা আদেশ জারি করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, পরিবেশ সাংবাদিকতা করে আমরা সরকারের সহায়ক হতে চাই। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাংবাদিকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সাংবাদিকরাই ১০ টি বড় আর্থিক অপরাধ তুলে ধরেছে। এইগুলোর অনুসন্ধান বাংলাদেশ ব্যাংকই করেছে। এইসব অপরাধে সামগ্রিক ইমপ্রেক্ট ৩৫ হাজার কোটি টাকা। 

এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা