শেরপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ০৯:১৯ এএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ১১:০৯ এএম
দেশ রূপান্তরের শেরপুরের নকলা উপজেলা প্রতিনিধি শফিউজ্জামান রানা। প্রবা ফটো
দৈনিক ‘দেশ রূপান্তর’-এর শেরপুরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিন আগে সাজা দেওয়া হলেও আজও মেলেনি তার সাজার রায়ের কপি। ফলে এখনও আপিল করতে পারেনি রানার পরিবার।
এ ঘটনায় আপিলের উদ্দেশ্যে সাজার আদেশের অনুলিপি পেতে শনিবার সকাল ৯টার দিকে শেরপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার। তার সঙ্গে পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন। কিন্তু দিনভর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অপেক্ষা করেও আদেশের অনুলিপি পাননি। ফলে হতাশ হয়ে তারা ফিরে আসেন।
এদিকে ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নকলার ইউএনওকে সাজার আদেশের অনুলিপি দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউএনও বলেন, সাজার নথি পাঠানো হয়েছে। এ খবর শুনে আইনজীবী ও রানার পরিবারের সদস্যরা আপিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তবে সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও নথি আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে দুপুর পৌনে ২টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আইনের বিধান অনুযায়ী তিনি (রানা) সব রকমের আইনি সুবিধা পাবেন।’ আপিলের জন্য সাজার নথি কেন দেওয়া হচ্ছে না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন তথ্য কমিশনার বিষয়টি অনুসন্ধানে এসেছেন। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’
ঘটনাটি তদন্ত করতে আসা তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুকের কাছে রায়ের কপি না পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার সাজার কপির সঙ্গে আমাদের অনুসন্ধানের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এদিকে সাজার আদেশের কপি পেতে রানার পরিবারের পক্ষে করা আবেদনে ঘষামাজা করে কপি পাওয়ার তারিখ ১০ দিন পিছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের দাবি, ৭ মার্চ রানার পরিবারের পক্ষে তার স্ত্রী নকলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ বরাবর কপি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণ করে আদেশের কপি প্রদানের তারিখ লেখা হয় ১০ মার্চ। পরে তা ঘষামাজা করে ১০ মার্চকে ২০ মার্চ করা হয়।
রবিবার (১০ মার্চ) শেরপুর জেলা কারাগারে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রানার বক্তব্য রেকর্ড করেন তথ্য কমিশনার মো. শহীদুল আলম ঝিনুক। দুপুরে রানার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী বন্যা আক্তার ও ছেলে মাহিমের সঙ্গে দেখা করে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। এ সময় তার স্ত্রীর কাছ থেকে তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিক রানার করা আবেদনের দুটি কপিও সংগ্রহ করেন তিনি।
পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে তার গোপনীয় শাখার সহকারী (সিএ) শিলা আক্তার, ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ও সাজা প্রদানকারী কর্মকর্তা নকলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফের সঙ্গে তিন ঘণ্টা কথা বলেন এবং মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করেন।
এদিকে তথ্য কমিশনারের আসার খবর পেয়ে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অফিসের কাজ ফেলে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সন্ধায় তথ্য কমিশনার ইউএনওর কক্ষ থেকে বের হলে তার সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেন সমবেত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি কারও সঙ্গে কথা বলেননি।
রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে সম্পূর্ণ বিনা দোষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন আপিলের জন্য রায়ের কপি চেয়ে আবেদন করেও কপি পাচ্ছি না। রায়ের কপি না দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের কি রায়ের কপি পাওয়ার অধিকার নেই? আমি আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার স্বামীর দ্রুত মুক্তি চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমিটি না থাকায় ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্বে আছেন ইউএনও। তিনি মদদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশকে মাঠে নামিয়ে মূল ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছেন।’
এ বিষয়ে জানতে সোমবার (১১ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নকলার ইউএনও কার্যালয়ে সাংবাদিকরা অপেক্ষা করলেও ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ও তার সিও শিলা আক্তারকে তাদের কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন সাংবাদিক রানা। ৫ মার্চ মঙ্গলবার তিনি আবেদনের রিসিভ কপি চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। কিন্তু কপি না দিয়ে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, কাগজপত্র তছনছ ও একজন নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রানাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ। এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, তথ্য চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।