সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার কাউন্সিল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ২২:১৭ পিএম
সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। প্রবা ফটো
‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যমের হতে পারছে না। সত্য তুলে ধরতে না পারায় সংবাদমাধ্যম দিন দিন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। যা সংবাদমাধ্যমকে অস্তিত্বের সংকটে ধাবিত করছে। গণমাধ্যম সব সময় জনগণের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু কীভাবে জানি না, জনগণের সঙ্গে গণমাধ্যমের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কালে কালে সে দূরত্বটা বাড়ছেই শুধু। আমরা জানি না আমাদের মিডিয়া মালিকরা তা অনুধাবন করছেন কিনা!’
শুক্রবার (৮ মার্চ) সকালে সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এসব বলেন।
সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি মির্জা সেলিম রেজার সভাপতিত্বে শহরের টিএমএসএস অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা।
সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল ওয়াদুদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক গনেশ দাস, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সভাপতি মতিউল ইসলাম সাদী, বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার কার্যনির্বাহী সদস্য (সদ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক) এস এম আবু সাঈদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সভাপতি সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিন রশিদ শাইন, দৈনিক নয়া দিগন্তের বগুড়া অফিস প্রধান আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক করতোয়ার স্টাফ রিপোর্টার রাহাত রিটু, দৈনিক বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার জহুরুল ইসলাম, দৈনিক মানবজমিনের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রতীক ওমর, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সহসভাপতি আ: রহিম, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সদ্য নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ ফেরদৌস রহমান, মাহফুজ মন্ডল, টিএম মামুন, মৌসুমী আক্তার প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদি শাসনের কারণে সংবাদমাধ্যম গণমুখি সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকের কাজ রাজনীতি করা নয়। তবে ভালোর পক্ষে কল্যাণের পক্ষে থাকতে হবে। সাংবাদিকরা হবে সত্যের পন্থি। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলবে। বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকারহরণ, ভোটাধিকারহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ণ, শোষণ, অবিাচরের বিরুদ্ধে কথা বলবে সাংবাদিকরা। এজন্যই গণমাধ্য আর সাংবাদিকদের ভরসার শেষ ঠিকানা মনে করে সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতা না থাকায় সংবাদমাধ্যম আজ গণমুখি সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে। সরকার নানাধরণের কালাকানুন তৈরি করে গণমধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে। আজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ততটুকুই আছে যতটুকু সরকারের পক্ষে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, অধিকাংশ মিডিয়ার মালিক হয় রাজনীতিক না হয় ব্যবসায়ী। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মিডিয়াকে ব্যবসায়িকভাবে টিকিয়ে রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে বাক্স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক তথ্য অধিকার হরণকারী কালা কানুন মেনে চলার পথ বেছে নিয়েছেন এসব মালিকরা। মোর্দা কথা মিডিয়াকে ব্যবসায়ীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এখানে সরকারি দলের নেতা, এমপি-মন্ত্রী, প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা কিংবা সচিবদের অপব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে, প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে, রাষ্ট্রীয় খরচের মডেল নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা করা যায় না, প্রশ্ন তোলা যায় না। ফলে চুরি, লুণ্ঠন, জালিয়াতি, ঘুষ, তদবির, চাঁদাবাজিকেন্দ্রিক দুর্বৃত্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’র মৌলিক দায়বদ্ধতার বিষয় অনুপস্থিত। সমালোচনার সীমা রেখা এতোটা সীমিত করা হয়েছে যে, কিছু কিছু ব্যক্তির নাম মুখেও আনা যায় না।আইন করে কোন কোন নেতার সমালোচনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে! ফলে সংবাদমাধ্যম ‘গণমানুষ’কে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না বরং প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন সরকার ও সরকারি দলের সার্বিক রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করছে।’