প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৯ পিএম
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫১ পিএম
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবন গ্রিন কোজি কটেজে আগুনের ঘটনায় মারা যাওয়া সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনের পরিচয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে- পরিচয় নিয়ে এই জট না খুললে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। নিশ্চিত না হয়ে লাশ হস্তান্তর করা হবে না।
জানা যায়, এই নারী সাংবাদিকের মরদেহ গতকাল রাতে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলানোর পর ডেথ সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি দেখে মরদেহ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ শনিবার সকালে আবার উঠে আপত্তি। ফলে হস্তান্তর না করে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মরদেহ মর্গে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
বৃষ্টি খাতুন বা অভিশ্রুতির সহকর্মীরা শনিবার সকালে দাবি করেন, ওই নারী সাংবাদিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এ নিয়ে বৃষ্টির পরিচয়সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়। এরপরই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেন।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ওই নারী সাংবাদিকের নাম নিয়ে জটিলতার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পরিচয় নিশ্চিত হলেই মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।’
ডিএনএ পরীক্ষার ব্যাপারে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পরিচয় নিশ্চিত না হলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।’
নিহত এই সাংবাদিকের চাচাতো ভাই হিসেবে পরিচয় দেওয়া টিটু আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গতকাল রাতে বৃষ্টির মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু সে ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মরদেহ হস্তান্তর হলে আপনারা জানতে পারবেন। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এখন মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। আমরা মরদেহ ফিরে পেতে লিখিত আবেদন করেছি।’
তরুণ এই সাংবাদিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ’-এ একসময় কাজ করতেন। শুক্রবার সকালে অনলাইনটির প্রধান প্রতিবেদক গোলাম রাব্বানী বৃষ্টির মরদেহ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ওই নারী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন।’
এরপরই সবুজ শেখ নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, ওই সাংবাদিক তার মেয়ে। তার নাম বৃষ্টি খাতুন। পরে সবুজ শেখের দাবি ও নিহতের এনআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্টের সূত্রে দেখা যায়- অভিশ্রুতি নামে পরিচিত ওই নারীর জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম আছে বৃষ্টি খাতুন।
পরে সবুজ শেখের হাতেই বৃষ্টির মরদেহ হস্তান্তরের আলোচনা ওঠে। বিষয়টি নিশ্চিত করে শুক্রবার রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার বলেছিলেন, ‘সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃষ্টির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান।’
এর আগে মেয়ের মৃত্যুর খবরে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় ছুটে আসেন বাবা সবুজ শেখ। মরদেহ দেখে মেয়ের পরিচয় শনাক্ত করেন তিনি।
সবুজ শেখ ও স্বজনরা তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাকে বৃষ্টি খাতুন বলে দাবি করছিলেন। তবে বৃষ্টি ওরফে অভিশ্রুতির কিছু বন্ধু ও সহকর্মী অন্য তথ্য দিচ্ছিলেন।পরে পরিচয় নিশ্চিত হতে শুক্রবার ওই নারী সাংবাদিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
তাতে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বাবার নাম সবুজ শেখ, আর মায়ের নাম বিউটি বেগম। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, ওই সাংবাদিকের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে।