সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দেশের আধুনিক সংবাদপত্রের অন্যতম পথিকৃৎ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার। ২০১৮ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৫ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন তিনি দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে খাবার বিতরণ, দোয়া অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।

মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার উৎকর্ষের কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ছিলেন এ দেশের সংবাদপত্রে সাফল্য ও পেশাদারত্বের প্রতীক।

ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা গোলাম সারওয়ার টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারত্ব, দায়িত্বশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মাধ্যমে নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। 

দেশের সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহসম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজ এলাকা বরিশালের বানারীপাড়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন গোলাম সারওয়ার। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি পত্রিকাটিতে যথাক্রমে প্রধান সহসম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরই দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা বের হয়। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক। আর ২০০৫ সালে তার হাত ধরেই বাজারে আসে দৈনিক সমকাল।

দেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন গোলাম সারওয়ার। সৃজনশীল সাহিত্যেও ছিল তার সাবলীল বিচরণ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার। তার লেখা বইয়ের মধ্যে রঙিন বেলুন, সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা এবং স্বপ্ন বেঁচে থাক উল্লেখযোগ্য।

সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা ও ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন গুণী এই সম্পাদক।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গোলাম সারওয়ারের কবরে গণমাধ্যমকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া পরিবার ও গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মরহুমের জন্মস্থান বানারীপাড়ায়ও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

গোলাম সারওয়ারের ছোট ভাই বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা জানান, গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বানারীপাড়া বায়তুল আমান এতিমখানা ও বানারীপাড়া উত্তরপাড় বেগম ফজিলাতুন নেছা এতিমখানায় আজ দুপুরে কুরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পরে দুই এতিমখানার শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।