প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ১৮:২৯ পিএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ১৯:২৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হত্যা, নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন সাংবাদিকরা। শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-(বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে কয়েকশ সাংবাদিক অংশ নেন।
সমাবেশে বিএফইউজে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বলেন, ‘গণহত্যা চালিয়ে এ সরকার গণদুশমনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, যত দ্রুত এ্রই সরকার বিদায় নেবে ততই জাতি এবং দেশের মঙ্গল হবে।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘এই সরকারে হাতে সাংবাদিকদের রক্তে রঞ্জিত। আমাদের চারজন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে, ২০০ জন আহত করা হয়েছে, ৫০ জন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই সরকারে হাত ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। হাজারও গুলিবিদ্ধ ছাত্র মৃত্যু যন্ত্রণায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে। পঙ্গুত্ববরণ করেছে অনেকে। ছাত্র খুন করে আপনি (শেখ হাসিনা) গদিতে আরামে থাকবেন এ খায়েশ দেশের মানুষ পূরণ হতে দেবে না। আপনার গদিতে থাকা হবে না। আপনার পতনের মধ্যে দিয়ে ছাত্র হত্যার ফয়সালা করব।’
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জনগণ এ সরকারের প্রতি গণঅনাস্থা দিয়েছে। আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ গুলি করতে চায় না। যে পুলিশ কৃষকের ছেলে, যে পুলিশ এ মাটিতে খেয়ে বড় হয়েছে, সে পুলিশ গুলি করতে চায় না। হাসিনার নির্দেশে গুলি করতে হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, গুলি করে ছাত্রদের বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ছাত্রের বুকে ৩০ থেকে ৪০টি গুলি করা হয়েছে। ছাত্রদের ওপর আপনার ক্ষোভ কেন? সাংবাদিকদের ওপর আপনার এত ক্ষোভ কেন?
ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেহেদী একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক। কেন তাকে হত্যা করলেন। সে তো কোনো পক্ষের ছিল না। সন্তানহারা মায়ের কান্নায় আল্লাহর আরশ কাঁপছে। আপনার (শেখ হাসিনা) বুক কাঁপছে না। আপনার কি একটুও ভয় জাগে না। ছাত্রদের রক্ত দেখে আমাদের হৃদয় খান খান হয়ে হয়ে গেছে। প্লিজ এবার পদত্যাগ করে জাতিকে মুক্তি দিন।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন গতকালকেই হয়ে গেছে। এ সরকারের যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম বা মানবতাবোধ থাকতো তা হলে ছাত্র হত্যার পর পরই পদত্যাগ করতো। জনগণ গর্জে উঠেছে, আপনাকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।’
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘এই সরকারের লোকেরা যাতে পালাতে না পারে জনগণকে পাহারা দিতে হবে। আমার ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে পালাতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের সব রেলপথ, রাজপথ, সড়ক পথ, বিমান পথ, নৌপথ বন্ধ করে দিতে হবে। এই হত্যার খুনের বিচার করতে হবে। নাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। দেশের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। এই জাতির কাছে, মানবতার কাছে অপরাধী হয়ে থাকব। সেটা আমরা হতে চাই না।’
রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী ,সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজের সহসভাপতি ও ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি একেএম মহসিন, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ আহমেদ, শাহনাজ পলি, এরফানুল হক নাহিদ, এম এ নোমান, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শাহীন হাসনাত, রাশেদুল হক ও দিদারুল আলম।
সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করেন সাংবাদিকরা। মিছিলটি হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, পুরান পল্টন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়। এ সময় ‘দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগানে সাংবাদিকরা মুখর করে তোলেন রাজপথ।