× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রকাশনায় নারীরাও, তবে হাতে গোনা

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৩ এএম

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০২ এএম

প্রকাশনায় নারীরাও, তবে হাতে গোনা

এবারের বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে ৫৩৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নারীরা পরিচালনা করেন, এমন প্রকাশনীর সংখ্যা হাতে গোনা যায়। মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন প্রকাশক নারী। তারা বলছেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নারীরা প্রকাশনায় আসছেন না। যারা এসেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ এসেছেন উত্তরাধিকারসূত্রে, কেউ এসেছেন প্রাণের টানে। অবশ্য এমনও আছেন, যারা প্রকাশনায় যুক্ত হয়েছেন একেবারেই পেশাদারি চিন্তা থেকে।

একাধিক নারী প্রকাশক জানান, প্রকাশনায় নারীদের সম্পৃক্ত হওয়ার একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজের অনেকেই এখনও প্রকাশনায় নারীদের অংশগ্রহণকে স্বাভাবিকভাবে দেখেন না। বিশেষ করে বইমেলার সময় এলে দিনরাত ছাপাখানা ও বাঁধাইখানায় বারবার ছোটাছুটি করতে হয়, আবার অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্যও ছোটাছুটি করতে হয় নানান স্থানে। সংসার সামলানোর পাশাপাশি এত কিছু করে ওঠা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। প্রকাশনাশিল্পের কাজ জটিল বলেও অনেকে এ পেশায় আসতে দ্বিধা করেন।

রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ২০১৫ সালে জঙ্গি মৌলবাদীদের হাতে প্রাণ হারান জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ডা. রাজিয়ার স্বামী ফয়সাল আরেফিন দীপন। এরপর দীপনের ফেলে যাওয়া স্বপ্নের হাল ধরেন তার স্ত্রী ডা. রাজিয়ার রহমান জলি। পেশাগত জীবনে একজন চিকিৎসক হলেও তিনি প্রকাশনাটি চালিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের সঙ্গে। ডা. রাজিয়া বলেন, ‘জাগৃতি’ যেমন তার ভালোবাসার জায়গা, তেমনি তার প্রতিবাদের ভাষাও।

ঝুমঝুমি প্রকাশনীর প্রকাশক শায়লা রহমান তিথি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি করতাম। পড়ালেখা শেষ করে অনেক দিন চাকরিও করেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত অফিস করতে গিয়ে দেখেছি আমার লেখকসত্তা মারা যাচ্ছে। এরপর চাকরি ছেড়ে ‘ঝুমঝুমি’ নামের একটি পত্রিকা বের করি। এভাবেই প্রকাশনায় আসা। ২০১৬ সাল থেকে প্রকাশনা শুরু করলেও মেলায় অংশগ্রহণ করছি ২০২০ সাল থেকে।’ তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি, তাই প্রকাশনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছি। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলে নারী প্রকাশকদের সংখ্যা আরও বাড়বে।’ 

অভ্র প্রকাশের সমা খান বলেন, ‘লেখকসত্তা বাঁচিয়ে রাখতেই প্রকাশনায় আসা। নানা সংকটের মাঝেও সামাজিক ও পারিবারিক নানা সমস্যা রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

নারী প্রকাশকদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বলাকা প্রকাশনের কর্ণধার শরীফা বুলবুল। তিনি বলেন, ‘পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা প্রকাশনার মতো সৃজনশীল ক্ষেত্রকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ধাক্কা সামলাতে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভীষণ বেগ পেতে হয়। তাই অনেক সময় ভালো বই প্রকাশ করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তা ছাড়া উপযুক্ত প্রণোদনা কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নারী প্রকাশকদের দেওয়া হচ্ছে না। পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে নারী উদ্যোক্তারা দাঁড়াবে কী করে?’

একসময় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন সুবর্ণ প্রকাশনীর প্রকাশক শাহরিন হক। কিন্তু বাবা আহমেদ মাহফুজুল হকের মৃত্যুর পর হাল ধরতে হয় তাকে। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই প্রকাশনা-সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে পরিচয় ছিল তার। কারণ বাসার নিচেই ছিল প্রেস ও বাইন্ডিং কারখানা। বইয়ের প্রুফও দেখতেন তিনি। শাহরিন হক বলেন, “এটা সৃজনশীল একটি পেশা। এই পেশায় প্রকাশক নারী নাকি পুরুষÑএটা খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। তবে এটা ঠিক যে অন্য সব পেশার মতোই এই পেশায় ‘নারী’ হিসেবে আমাদের অল্পবিস্তর প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স লিমিটেড (ইউপিএল), জাগৃতি, চিলড্রেন বুক কালেকশন, চয়ন প্রকাশন, ধ্রুপদী পাবলিকেশন্স, পেন্ডুলাম পাবলিশার্স, আনন্দম, চিত্রা প্রকাশনী, জলধি, প্রত্যয়, চিত্রা, আনন্দম, ঝুমঝুমি, অধ্যয়ন প্রকাশন, বলাকা প্রকাশনী, বৈভব, আনন্দম, অভ্রসহ কয়েকটি প্রকাশনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা।

প্রকাশনাশিল্পে নারীদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়ে প্রবীণ প্রকাশক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ওসমান গণি বলেন, ‘প্রকাশনা ব্যবসা কোনো ডাল-চালের ব্যবসা নয়। এখানে লেখাপড়া করে অভিজ্ঞতা, পেশাদারত্ব ও কমিটমেন্ট নিয়ে আসা উচিত। যারা এসব দায়িত্ববোধ নিয়ে আসবেন তাদের আমরা স্বাগত জানাই।’

অনেকটাই গোছানো এখন মেলাপ্রাঙ্গণ

কয়েক দিন মেলায় আসা লেখক-দর্শনার্থীদের অভিযোগ ছিল মেলাপ্রাঙ্গণের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে। অব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী, পড়ে থাকা জঞ্জাল, অসম্পূর্ণ স্টল, শৌচাগার, ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ, মোড়ক উন্মোচন কেন্দ্র ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা শুনতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। গতকাল মেলার পঞ্চম দিনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এদিন মেলাপ্রাঙ্গণ অনেকটাই গোছানো মনে হয়েছে। বিকাল থেকে পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

মেলার গেট নিয়ে আপত্তি ৬৩টি প্রকাশনীর

মেট্রোরেলের কারণে বাংলা একাডেমির বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার গেট এবার আরও দক্ষিণ দিকে সরানো হয়েছে। এতে উদ্যানের এ অংশে মেলায় অংশগ্রহণকারী ৬৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মূল স্রোতের বিপরীতে পড়ে গেছে। গত রবিবার একাডেমিকে লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো এ কথা জানিয়েছে। তারা লিখিতভাবে জানিয়েছে, একুশে বইমেলার শুরু থেকে মেলার তৃতীয় দিন পার হওয়ার পরও উল্লেখিত গেটটি এ বছর বন্ধ আছে। ফলে এসব প্রকাশনী মূল স্রোতের বাইরে পড়ায় লোকসমাগম না হওয়ার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সোমবারের নতুন বই

গতকাল নতুন ৭০টি বই এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে পাঠক সমাবেশ এনেছে মোজাফ্ফর হোসেনের গল্প ‘আদি পাপের পরের পাপ’, আগামী প্রকাশনী এনেছে এম আবদুল আলীমের মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ’ ও মুস্তাফা মজিদের ভাষাবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মারমা জাতিসত্তা’, কথাপ্রকাশ এনেছে ধ্রুব এষের কাব্যগ্রন্থ ‘হিরণ মিত্র : সহজপাঠ’, ঐতিহ্য এনেছে মহিউদ্দিন আহমদের ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’, অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে মোশতাক আহমেদের কিশোর গোয়েন্দাবিষয়ক গ্রন্থ ‘রূপার সিন্দুক’ অনন্যা এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের গল্পগ্রন্থ ‘অন্ধকার নামতে পারেনি’, শ্রাবণ প্রকাশনী এনেছে জুনাইদ আহমেদ পলকের ভাষণসমগ্র ‘জাতীয় সংসদে’।

মেলামঞ্চের আয়োজন

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদ রহমান। যুগান্তর সম্পাদক ও লেখক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ইসরাইল খান এবং তপন বাগচী।

লেখক বলছি

‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি নাসির আহমেদ, কবি ইসলাম রফিক, শিশুসাহিত্যিক চন্দনকৃষ্ণ পাল এবং লোকসাহিত্য গবেষক সৈয়দা আঁখি হক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, সরকার মাসুদ এবং মাসুদ পথিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, সাফিয়া খন্দকার রেখা এবং শামস্ মিঠু। দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর শিল্পীরা। এ ছাড়া ছিল নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্যালোক’ এবং ‘নৃত্য নিকেতন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ইয়াসমীন মুশতারী, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, লীনা তাপসী খান এবং সায়ন্ত মিশকাত জামি। 

আজকের আয়োজন

আজ মঙ্গলবার বইমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশ নেবেন শাহিদা খাতুন এবং সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আবদুল খালেক। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা