গাজীপুর ও নেত্রকোনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৩ পিএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৮ পিএম
ক্যানসার হাসপাতাল প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। প্রবা ফটো
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে গেল নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত ও নিষাদ হুমায়ূন তার সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর কেক কাটার মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করা হয়। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হুমায়ূন আহমেদের জন্মস্থান নেত্রকোণায়ও বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়।
হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের নুহাশপল্লীতে গতকাল সকালে উপস্থিত ছিলেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। কবর জিয়ারত ও সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সারা দেশেই হুমায়ুন আহমেদের ভক্তরা তার জন্মদিন উদযাপন করছে। আমি প্রতি বছরই এখানে আসি। এখানে এলেই তার সমাধির কাছে যেতে হয় না। নুহাশপল্লীর পুকুর ঘাটে কিংবা গাছগুলোর কাছে গেলে, ঘাসগুলোর মধ্যে হাঁটলে মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ এখানেই আছেন।’
হুমায়ূন আহমেদ তার জীবদ্দশায় একটি ক্যানসার হাসপাতাল গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, এটি আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। হুমায়ুন স্যার বেঁচে থাকলে তার ডাকে সবাই সাড়া দিতেন, তখন হাসপাতাল করা সম্ভব ছিল। কিন্তু আমার ডাকে সবাই সাড়া দেয়নি। আমার দিক থেকে যা করার বা যত জনের কাছে যাওয়া দরকার গিয়েছি, কিন্তু তেমন সাড়া পাইনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কানাডার একদল চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা ক্যানসার হাসপাতালের উদ্যোগ নিতে চান। তবে এটা শুরুর পর্যায় মাত্র, কথাবার্তা হচ্ছে।
নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন জাদুঘর তৈরির বিষয়ে তার ভক্তদের দাবি অনেক দিনের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জাদুঘর এখানে হবে। নকশার কাজ শেষ হয়েছে। তবে এই কাজের জন্য যে অর্থ দরকার সেটির ব্যবস্থা হচ্ছে।
হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন মেহের আফরোজ শাওন
এদিকে লেখকের জন্মস্থান নেত্রকোণায় তার জন্মদিনে ছিল বিভিন্ন সংগঠনের দিনব্যাপী আয়োজন। নেত্রকোণা জেলা শহরে বেলা ১১টায় হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার। পরে জন্মদিনের কেক কাটেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) বিপীন চন্দ্র ও পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদসহ অতিথিরা। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
হুমায়ূন আহমেদের পিতৃভূমি জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে। সকাল ১০টায় স্কুল প্রাঙ্গণে কুরআন খতমের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু করা হয়। পরে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন, জন্মদিনের কেক কাটা, আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কবিতা পাঠ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, কুতুবপুর প্রান্তিক একটি গ্রাম। এ গ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় সুদীর্ঘকাল থেকে শিক্ষা বঞ্চিত ছিল এই এলাকার মানুষ। হুমায়ূন স্যার তার মা আয়েশা ফয়েজের অনুরোধে এখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৬ সালে মাত্র ৪৮ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে হুমায়ূন স্যারের স্বপ্নের স্কুল। বর্তমানে স্কুলে ৩৪৭ ছাত্রছাত্রী এবং ১৮ শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন।
এ ছাড়া জেলার দুর্গাপুর উপজেলার হিমু পাঠাগার নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ও পাঠাগারটির প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন করে।