বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩ ২২:০০ পিএম
হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ। প্রবা ফটো
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নামাঙ্কিত ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও নবীন কথাসাহিত্যিক মাহবুব ময়ূখ রিশাদ।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে এই পুরস্কারের নবম আসর বসে।
এতে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে ‘রাইরিন্তার শেষ উপহার’ গল্পগ্রন্থের জন্য মাহবুব ময়ূখ রিশাদ হুমায়ূন আহমেদের নামাঙ্কিত এ পুরস্কার পান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলনের শংসাবচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। মাহবুব ময়ূখ রিশাদের শংসাবচন পাঠ করেন বিচারকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আজ পুরস্কারপ্রাপ্তির আনন্দের সঙ্গে আমার মন বিষাদে ছেয়ে আছে। তিনি বড় অকালে চলে গেছেন। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি আরও লিখতেন, বাঙালি পাঠক তার সৃষ্টিশীলতায় উজ্জ্বীবিত হয়ে থাকত। আমি মন্ত্রমুগ্ধ থাকতাম, আবিষ্ট হয়ে থাকতাম, সেটাই হতো আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার।’
মাহবুব ময়ূখ বলেন, ‘আমার গল্পে আমি ম্যাজিক ক্রিয়েট করতে চাই। সে হোক বাস্তব কিংবা অবাস্তব। হুমায়ূন আহমেদের নামাঙ্কিত এ পুরস্কার আমাকে সে পথে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. আবদুল বারী জানান, এ বছর সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা এবং নবীন সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এবার সাহিত্য পুরস্কারের বিচারদের সভাপতি কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন হুমায়ূন আহমেদের ভাই অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, স্ত্রী অভিনেত্রী-পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের আরেক ভাই কার্টুনিস্ট, কথাসাহিত্যিক আহসান হাবীব, বাংলা একাডেমি সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, নন্দিত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, কবি বিমল গুহ, অভিনেতা-নির্দেশক ম হামিদ, কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শামা রহমান শোনান তিনটি রবীন্দ্রসংগীত ‘আজি বিজনঘরে নিশীথরাতে’, ‘আজ জোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’ এবং ‘সার্থক জনম আমার’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশের সাহিত্যের জন্য আমাদের হুমায়ুন আহমেদের খুবই দরকার ছিল। হুমায়ুন আহমেদ যদি আজকে থাকতো তাহলে হয়তো সামগ্রিকভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আরও সামনে যেতে পারত।আমি এইটুকু আশাবাদী যে হুমায়ুন আহমেদ থেকে শুরু করে ইমদাদুল হক মিলনসহ নবীন সাহিত্যিক এবং তার বাইরেও যে বিশাল এক সাহিত্যিক গোষ্ঠী আমাদের গড়ে উঠছে তারা পৃথিবীর বুকে বাংলা ভাষার যে অবস্থান, সেই অবস্থানকে বাংলা সাহিত্যের অবস্থানে পরিণত করবে, বাংলা সাহিত্যকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যে পরিণত করবে সেই প্রত্যাশা আমি ব্যাক্ত করতে পারি।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারদের সভাপতি, কথাশিল্পী ও ইমিরেটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ইমদাদুল হক মিলন বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। আমি নিশ্চিত ইমদাদুল হক মিলন আরও লিখবেন। মাহবুব ময়ূখ রিসাদ ভিন্ন ধারার লেখক। বিচিত্র অধিবাসীদের নিয়ে তার গল্প। তার ভাষা তার চিত্রকর্ম নির্মাণ খুবই অসাধারণ।’
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ যখন তার প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে লিখেন, প্রথম পাঠক হিসেবে সে পাণ্ডুলিপি পড়েছিলাম আমি। তখন আমি সূর্যসেন হলে থাকি। আমি সে পাণ্ডুলিপি নিয়ে এক বসায় পড়ে ফেললাম গোটা উপন্যাস। পরে যখন সে উপন্যাসটি ছাপা হয়, তার প্রচ্ছদ এঁকেছিলাম আমি। আমি প্রথম মানুষ যে প্রথম অনুভব করি, বাংলা সাহিত্যে এমন কেউ আসছেন যার কোনো তুলনা নেই।’