গাজা পরিস্থিতি নিয়ে রুশদি
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৫৯ পিএম
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৩২ পিএম
সালমান রুশদি। ২২ অক্টোবর ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলায়। ছবি : সংগৃহীত
জার্মানিতে সদ্যসমাপ্ত ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলায় পুরস্কার নিতে সশরীরে হাজির হয়েছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান উপন্যাসিক সালমান রুশদি। এতে ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ওপর হামলা, লেখালেখি, নতুন উপন্যাসের পাশাপাশি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
রুশদির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে সাহিত্য কী ভূমিকা রাখতে পারে?
উত্তরে এ উপন্যাসিক বলেন, চলমান যুদ্ধে সাহিত্যের ভূমিকা বেশ গৌণ। দেখুন, আমি কিন্তু সাহিত্যের শক্তিকে সব সময় বড় করে না দেখাতে চেষ্টা করি। বিপুল সংখ্যাক মানুষ যে অবর্ণনীয় ব্যথা-বেদনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাকে ধরতে চাওয়াটাই লেখকদের কাজ। বিশ্ব মনোযোগ চলমান ঘটনার দিকে যথার্থভাবে ফেরাতে চেষ্টা করাই তাদের সাধনা হতে পারে। যুগে যুগে লেখরা এটাই করছেন। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র লেখকরা তাই করছেন বলে আমার ধারণা। কোনো সমস্যার প্রকৃতি বোঝতে চাওয়া, সমস্যার গভীরে যেতে চাওয়াটাই লেখকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এরপর মিডনাইটস চিলড্রেনের লেখকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হয়, চলমান মূহুর্তে শব্দ তার শক্তি হারিয়েছে, তাহলে আপনি কি তাই বলতে চাচ্ছেন?
একটু ব্যাখ্যা করে ৭৬ বছর বয়সি রুশদি জবাব দেন, এমন কিছু বিষয় আছে যা শব্দ করতে পারে না। এ মুহুর্তে আমি সেই সব বিষয় নিয়ে ভাবছি। দুঃখজনক হলো, সাহিত্য যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে না।
(একটু থেমে) যুদ্ধে সত্যকে সবার আগে হত্যা করা হয়। কারণ যুদ্ধ শুরু হলে প্রত্যেক পক্ষ তাদের মতো করে সত্য হাজির করে। প্রপাগাণ্ডা চালায়। তাই যুদ্ধের সময় ফিকশন থেকে ফ্যক্ট আলাদা করতে পারা বেশ কঠিন।
এ কারণেই যুদ্ধে সময় ফ্যক্ট প্রতিষ্ঠা করাটাই প্রতিবেদক ও সাংবাদিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের মতো কঠিন সময়ে সাংবাদিকতা এমনটি করতে পারলে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে সমাদর পাবে। বিশ্ববাসীর জন্য এর চেয়ে বড় সেবা আর হয় না।
১৯৪৭ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণকারী রুশদি তরুণ বয়সেই ব্রিটেনে পাড়ি জমান। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তার মিডনাইটস চিলড্রেন বুকার পুরস্কার লাভ করে। ১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বের করে তিনি সমানতালে আলোচিত ও সমালোচিত হন। গত ফেব্রুয়ারিতে তার সর্বশেষ উপন্যাস ভিক্টরি সিটি বের হয়।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কের অদূরে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় দর্শক সারি থেকে এক যুবক দৌড়ে দিয়ে রুশদিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এতে তার ডান চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সুস্থ হলেও এক সময় রুশদির রাইটারস ব্লক তৈরি হয়। অর্থাৎ তিনি কিছু লিখতে পারছিলেন না। তবে তা এখন কেটে গেছে। ছুরিকাঘাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এখন ‘নাইফ’ নামের একটা উপন্যাস লিখছেন। আগামী বসন্তে তা বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অদম্য সাহস। জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসা। এবং গল্পের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে সমৃদ্ধ করার জন্য ২২ অক্টোবর রুশদিকে ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলায় পিস প্রাইজ অব দ্য জার্মান বুক ট্র্যাড দেওয়া হয়।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে, দ্য ওয়্যার