× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হুমায়ূন আহমেদের একটি অনন্য ঘটনা

ফারুক আহমেদ

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২২ ১৬:২৩ পিএম

আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২ ১৬:৪৩ পিএম

হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বেশ কিছু স্মৃতি আছে। নুহাশ পল্লীতে রমজান মাসে ইফতারে উনার পাঁচতারকা হোটেলের শেফ-এর রান্না করা খিচুড়ির সঙ্গে গরুর মাংসের স্বাদ সহজে ভোলা যাবে না। এ ছাড়া নানা সময়ে উনার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমার সম্পাদনায় বিভিন্ন দৈনিকের ঈদসংখ্যায় উনার উপন্যাস বা গল্প ছাপানোর সৌভাগ্যও হয়েছে। উনি সারওয়ার (গোলাম সারওয়ার) ভাইয়ের সামনে আমার সম্পাদিত 'কালের খেয়া'র প্রশংসা করেছিলেন একবার।

তবে উনার সঙ্গে শেষ কয়েকটি ঘটনা মনে রাখার মতো, কোথায় জানি একটা ভালোবাসার টান তাতে টের পাওয়া যায়। আমি তখন সমকাল ছেড়ে 'সকালের খবর'-এ জয়েন করেছি। স্যারকে জানাতে গেলাম।

স্যার জানতে চাইলেন, অফার ভালো, সুযোগ-সুবিধা ভালো তো?

জানালাম, জ্বি স্যার।

-তাহলে যাও। আমি তোমাকে লেখা দিব।

এই কথা হলো। সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে উনার লেখা পাব, তা আমার জন্য বিরাট আনন্দের ব্যাপার। পরে শুনেছি, সমকাল ছেড়ে দিয়েছি বলে, স্যার ৫/৬ মাস ওখানে লেখা দেননি। যিনি যোগাযোগ করতেন, তাকে স্যার বলেছেন, তোমাদের পত্রিকায় লোকজন থাকে না কেন? ফারুক চলে গেছে কেন, আমি লেখা দিব না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

সকালের খবর-এর উদ্বোধনী সংখ্যায় উনার কাছে একটা ইন্টারভিউ চাইলাম। একটা পুরো সংখ্যাই ছিল ইন্টারভিউ নিয়ে। বললেন, দিবেন, কিন্তু লিখিত। বললেন, তুমি প্রশ্ন লিখে আমাকে দিয়ে যাও, আমি লিখে রাখব। তো সেই লিখিত ইন্টারভিউ-এ দেখা গেল প্রশ্নের থেকে অনেক উত্তরই ছোট। তবু অফিস খুশি, আমিও খুশি। আমার নেওয়া উনার একমাত্র ইন্টারভিউ ওটা।

এরপর যে ঘটনাটা ঘটলো, তা মনে রাখার মতো। আসলে ওটাই উনার সঙ্গে শেষ কথোপকথন বা দেখা। 'সকালের খবর' বড় কলবরে ঈদ সংখ্যা করবে সিন্ধান্ত হলো। স্যারের কাছে উপন্যাস চাইলাম। স্যার বললেন, দেরি করে ফেলেছো, তবে তোমাকে লেখা দিব। সে সংখ্যায় সমরেশ মজুমদার উপন্যাস দিলেন, এবং আরো অনেকে। এক খ্যাতিমান (তখন খ্যাতি ছিল, এখন নাই) কথাসাহিত্যিকের কাছে গল্প চাইলাম। উনি বললেন, ফারুক সকালের খবর-এর তো অনেক টাকা, আমাকে গল্পের জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি কর্তৃপক্ষকে তাতে রাজী করাতে সক্ষম হলাম। উনি গল্প দিলেন এবং উনার চাওয়া অনুযায়ী সম্মানী পেলেন। এদিকে হুমায়ূন আহমেদকে ভয়ে ভয়ে তাগিদ দিই, উনি বলেন, লেখা পাবা। কিন্তু লেখা তো পাই না। ম্যাগাজিনের সব কাজ শেষ প্রায়। স্যারকে ফোন করে বললাম, স্যার আগামীকাল শেষ ফর্মা ছেড়ে দিতে হবে, আপনার গল্পটা লাগবে। উনি বললেন, কাল সকালে চলে আসো।

সকালে পৌঁছে দেখি, গল্প রেডি। উত্তেজনায় আমি কিছু বলতে পারছি না, এমন অবস্থা। সম্মানীর খাম এগিয়ে দিলাম, স্যার ভাউচারে সাক্ষর করে পাশে রেখে দিলেন। যেদিন অন্য কথাসাহিত্যিক এক গল্পে ১০ হাজার চাইলেন, সেই আমি অফিস থেকে হুমায়ূন আহমেদের জন্য ২০ হাজার টাকার বিল পাশ করিয়ে নিলাম। তো সম্মানী দিয়ে, গল্প বগলদাবা করে উনার দখিন হাওয়া থেকে নেমে রিক্সায় অনেকটা পথ এর মধ্যে চলেও এসেছি। স্যারের ফোন, তুমি কত টাকা দিয়েছো?

আমি জানালাম, ২০ হাজার টাকা স্যার।

তিনি বললেন, এতো টাকা কেন! গল্পের জন্য আমি এতো টাকা নিই না। তুমি আসো, টাকা নিয়ে যাও।

আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, স্যার থাকুক পরে অ্যাডজাস্ট করে নিব। মনে হলো এতো পরে লেখা পেতে সুবিধা হবে।

স্যার রাজী হলেন না। বললেন, সেটা পরে দেখা যাবে, তুমি আসো।

অগত্যা যেতে হলো। উনি আমার কাছ থেকে ভাউচারটা নিয়ে কেটে ১০ হাজার টাকা লিখলেন। লিখে তার ওপর স্বাক্ষর করে দিলেন।

অভিভূত হয়ে দেখলাম, একজন প্রকৃত লেখকের নৈতিক শক্তি। আমি এরকম একটা ঘটনা পকেটে নিয়ে অফিসের দিকে ছুটলাম।

প্রয়াণ দিবসে তাকে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা অসম্ভব সব ছোটগল্প আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা