হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫২ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৫ পিএম
মেলায় গাজীপুরের শ্রীপুরের মালেক মাস্টার কিন্ডারগার্টেন ও হাই স্কুল থেকে আসা আরেফিন জামান লিখন ও তার বন্ধুরা। প্রবা ফটো
অমর একুশের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে বই মেলায় এসে ভিড় জমায় প্রভাতফেরিতে আসা একুশে চেতনায় উদ্ভাসিত মানুষ। ভোরের সূর্য ভালো করে হেসে ওঠার আগেই প্রভাতফেরিতে আসা মানুষ-জন ভিড় জমান বই মেলার প্রবেশ পথের আনাচে-কানাচে। তারপর সকালের সূর্য হেসে ওঠার প্রারম্ভেই মেলার প্রবেশ পথ খুলে গেলে সুশৃঙ্খলভাবে প্রাণের বই মেলায় প্রবেশ করেন শত-সহস্র মানুষ। সকালের সময় যতই বাড়ে মেলায় বাড়তে থাকে ভিড়। আর সকালের মাঝামাঝি সময়ে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা মেলে উপচেপড়া জনস্রোত। প্রতিবারের মতো এবারও সেই রকমটা হবে বলে মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকরা আশা করেছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো তার উল্টো; ২১ফেব্রুয়ারির দিনে মেলার শুরুতেই প্রায় ‘জনশূন্য’ অবস্থা দেখে প্রকাশকরা এবং প্রকাশনা সংস্থারগুলোর প্রতিনিধিরা ব্যক্ত করলেন চরম হতাশা।
তারা বলছেন- গত বছরও মেলায় ২১ ফেব্রুয়ারির দিন মেলার প্রবেশপথ খুলে ছিল সকাল ৮টায়; এবার সেখানে এক ঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে মেলার গেট খোলা হয় সকাল ৭টায়। এই সময় থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত একদমই দেখা মেলেনি দর্শনার্থীর। বই বিক্রিও হয়নি-একদম।
অমর একুশের দিন বই মেলার এই অবস্থা নিয়ে বইমেলা শুরু করা প্রতিষ্ঠান ‘মুক্তধারা’ প্রেস ম্যানেজার কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ‘মুক্তধারা’র সঙ্গে যুক্ত। বইমেলায় আসি তারও বেশি সময় আগে থেকে; কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারির দিন এত কম জনসংখ্যা দেখিনি-কখনোই।’
তিনি বলেন, এবারের শুরু থেকেই বই মেলায় লোক তুলনামূলক কম আসছে। কিন্তু প্রতিদিনই লোক আসছে। তারা প্রায় সকলেই ছবি তুলছে; সেলফি তুলছে; বই কিনছে না। আজ এখন পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১০টার সময়) আমাদের স্টলে কোন বই বিক্রি হয়নি। অথচ; প্রতিবছর ২১ ফেব্রæয়ারির দিন ১১টা/১২টা বাজলেই বইবিক্রির টাকা পাঠিয়ে দিতাম; কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত বওনিই করতে পারলাম না! এমন পরিস্তিতির মুখোমুখি আগে কখনোই হয়নি।
‘মুক্তধারা’র ঠিক সামনে ‘অবসর প্রকাশনী’র প্যাভিলিয়ন। এই প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, মেলার গেট খুলেছে ৭টায়; এর আগে আমাদের বিক্রয়কর্মীরা বই সাজিয়ে প্যাভিলিয়ন খুলেছে। আর, আমি মেলায় এসেছে ৮টায় সময়। এই সময় থেকে আমার প্যাভিলিয়নে মাত্র দেড় হাজার টাকার বই বিক্রি করেছি! অথচ- প্রতিবার এই সময়ের মধ্যে বই বিক্রি করে কূল-কিনারা পাইনি।
এবারের বইমেলার মূলপ্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণের পুরো মেলা চত্বর ঘুরে দুপুর দুইটার সময় আবার ‘মুক্তধারা’ ও ‘অবসর’ প্রকাশনীতে এসে বই বিক্রির অবস্থা কি জানতে চাইলে তারা জানান, এখনও সকালেরও মতোই অবস্থা। তাকিয়ে দেখেন কোনো লোকজন নাই; যা আছে তা আসলে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনের মেলার লোক নয়। বিক্রিও হচ্ছে না। তবে তারা আশা প্রকাশ করেন বিকালের দিকে মেলায় লোক হবে। কারণ, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। শুক্রবার এবং শনিবার এমনিতেই লোক হয়-মেলায়।
এদিকে, মেলায় ঘুরতে ঘুরতে রমনা কালী মন্দিরের কাছে দেখা হয় এবারের মেলায় প্রথম স্টল পাওয়া শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘দোলন’-এর স্বত্তাধিকারী কামাল মুস্তাফা’র সঙ্গে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে জানান, এত জনশূন্য হবে একুশের সকাল, তা ধারণায় ছিল না। ভেবেছিলাম শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে অনেকে বইমেলায় আসবে; কিন্তু তা হয়নি। আমি ৮টার দিকে এসেছি, সকাল থেকে ফাঁকা মেলায় বসে আছি।’
অপরদিকে, এদিনের দুপুর দেড়টার দিকে এবারের মেলা নিয়ে কথা হয় ‘রাত্রি প্রকাশনী’র স্বত্তাধিকারী আনেয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এবারের মেলায় বিক্রি ভালো হচ্ছে না। তিনি বলেন, মেলার প্রথম সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে বিক্রি হতো। আর; বসন্ত শুরুর দিন ১ফাল্গুনে বই বিক্রি লাফিয়ে উঠতো। এবার সব কেমন যেন হয়ে গেছে। মেলার শুরুর পর আমরা টেনে-টুনে প্রথম সপ্তাহ পার করতাম। আমরা অপেক্ষায় থাকতামÑ বসন্ত উৎসব আর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনের। এবার সেই অপেক্ষা মনে অপেক্ষায় থেকে গেল! কেননা, এবার বসন্ত এবং একুশে ফেব্রুয়ারি শুক্রবারে পড়েছে। তারপরও শুক্রবারের ছুটির দিনের বইমেলার যে আমেজ, তার দেখা মেলেনি। মেলায় ২১ দিন কেটে যাচ্ছে- বই বিক্রি হচ্ছে না। তবে, আমি আশাবাদী- মেলার এ শেষ সপ্তাহে বই বিক্রি হবে।
এবারের বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ৮৪ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতবছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি, আর ইউনিট ছিল ৯৪৬টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে ৩৬টি। গত বছরও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি ছিল।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় করা হয়েছে। সেখানে ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশু চত্বরে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১২০ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর শিশু চত্বরে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১০৯ ইউনিট দেওয়া হয়েছিল।
আজ শুক্রবার; বইমেলার শুরু হয়েছে সকাল ৭টা থেকে এবং মেলা
চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে রাত সাড়ে আটটার পরে আর কেউ নতুন করে মেলায় প্রবেশ করতে
পারবেন না।