× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাঠকদের আগ্রহে চিরায়ত সাহিত্যের বই

হাসনাত শাহীন

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৩ পিএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৩ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

অমর একুশের চেতনাকে সামনে রেখে প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’র প্রতিষ্ঠাতা শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয় বইমেলা। এরপরের বছর তার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলা একাডেমি ও স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স; পরে আরও অনেকে যুক্ত হয়। যা আমাদের কাছে আজ ‘অমর একুশে বইমেলা’ নামেই পরিচিত। যে মেলাÑ আমাদের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার প্রাণে দোলা দেয়। ভিড় ঠেলে প্রয়োজনীয় বইটি হাতে পাওয়ার পর আনন্দে চিক চিক করে ওঠে মুখ। স্বাধীন বাংলাদেশের সমবয়সী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মেলা মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ১৮তম দিনেও দেখা তেমনই দৃশ্য। মেলায় আহামরি ভিড় নেই, কিন্তু বই কেনার লোক ছিল যথেষ্ট।

মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়প্রতিনিধিরাও জানান একই কথা। তারা বলছেন, মেলা এখন প্রায় শেষের পথে চলে এসেছে। এই সময়ে যারা মেলায় আসবেন তারা বই কিনতেই আসবেন। এখন যত দিন যাবে ততোই এমনই হবে; দর্শনার্থী কমবে- বই বিক্রি বাড়বে।

কি ধরনের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে- জানতে চাইলে তারা জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ফেসবুক, সেলিব্রিটি, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিউ বাণিজ্যের এই সময়ে সবকিছুকে ছাপিয়ে চিরায়ত সাহিত্যের বইগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে।

এদিন বিকাল ৩টা থেকে শেষ পর্যন্ত মেলায় ঘুরে দেখা যায়Ñ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, জহির রায়হান, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ্দের জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি। পাঠকের চাহিদা থাকায় প্রকাশকরাও জনপ্রিয় এসব লেখকদের চিরায়ত বইগুলোর নতুন সংস্করণ এনেছেন এবারের মেলায়ও। মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে চিরায়ত নন-ফিকশনধর্মী বইয়ের বিপুল সমাহার লক্ষ্য করা যায়।

বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মীরা জানান, বর্তমানের জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের পরেই পাঠকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেÑ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রেমেন্দ্রমিত্র, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, আহমদ ছফা ও হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখকদের বইগুলো।

জোনাকী প্রকাশনী এনেছেÑ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  ‘ক্ষণিকা’, ‘যোগাযোগ’, ‘চোখের বালি’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘উপন্যাস সমগ্র’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘একা এবং কয়েকজন’, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ‘কবি’, ‘গণদেবতা’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’, ‘পথের পাঁচালী’, সমরেশ মজুমদারের ‘প্রিয় আমার’, ‘স্বপ্নের বাজার’।

ঐতিহ্য এনেছেÑ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৌকাডুবি’, ‘ছিন্নপত্র’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘সাম্য’, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘চরিত্রহীন’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ ইত্যাদি।

বাঁধন পাবলিকেশন্স এনেছে- বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ ও ‘আরণ্যক’, আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ ইত্যাদি।

অন্যধারা এনেছেÑ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপাল কুণ্ডলা’ ও ‘দুর্গেশনন্দিনী’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ ও ‘পরিনীতা’, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘সুন্দরবনে সাত বৎসর’ এবং মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’সহ বেশ কয়েকটি বই।

অবসর প্রকাশনী থেকে এসেছেÑ প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাশঙ্কর, শরৎ রচনাবলী, রবীন্দ্র রচনাবলীসহ বেশ কিছু বই।

চিরায়ত বই প্রকাশে কপিরাইটের প্রয়োজন হয় কি না- এমন প্রশ্নে জোনাকী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পেরিয়ে গেলে কোনো কপিরাইটের প্রয়োজন হয় না। আমাদের প্রকাশনায় ৪০ শতাংশ চিরায়ত বই বিক্রি হয়। যতই ফেসবুক সেলিব্রিটি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রভাব থাকুক চিরায়ত সাহিত্যের চাহিদা ও গুরুত্ব কখনোই কমবে না বলেই মনে করি।’

প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য’র ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘চিরায়ত বই চির নবীনের মতোই। কেবল মেলা নয়, এসব বই সারা বছরই চলে।’

বিকালে মেলা প্রাঙ্গনে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিনাত হায়দার খানের সঙ্গে। তিনি অবসর প্রকাশনী থেকে তার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ শীর্ষক বইটি কিনছিলেন। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে ও তারুণ্যের উচ্ছাসের এই বয়সে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই কেনা প্রসঙ্গে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় লেখক; তার বই আমাকে আমার প্রেমে-দ্রোহে-বেদনায় অন্যরকমভাবে টানে; নতুন কিছু শেখায়-পথ দেখায়। এছাড়া আমি চিরায়ত লেখকদের বই-ই বেশি পড়ি। কেননা, চিরায়ত সাহিত্য পড়লে অন্তত কিছু জানা যায়। ফেসবুক সেলিব্রিটিদের উদ্ভট টাইপের কুরুচিপূর্ণ বইগুলো আমার ভালো লাগে না। জ্ঞান অর্জনের জন্য যেহেতু বই। অতএব জ্ঞান অর্জন করতে হলে ভালো মানের বই-ই পড়তে হবে।’

মেলার নতুন বইয়ের তথ্য: বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগ জানায় মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৯টি। এ নিয়ে ১৮ দিন পর্যন্ত মেলায় মোট নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১ হাজার ৭২৩টি।

মেলার মূলমঞ্চের আয়োজন: বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বেলাশেষের শহীদ কাদরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- তারানা নূপুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- শামস আল মমীন এবং আহমাদ মাযহার। সভাপতিত্ব করেন- হাসান হাফিজ। এরপরে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি মো. ফজলুল হক এবং কবি আশিকুল কাদির।

আজ ছিল মো. মিজানুর রহমানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা’ এবং সবুজ শামীম আহসানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কৃষ্টিবন্ধন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী নোশিন তাবাসসুম স্বরণ, মো. মমিনুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, মো. আলতাফ হোসেন, রুশিয়া খানম, আজিজুল হক খান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন, মো. আব্দুস সাত্তার খান (তবলা), এ কে আজাদ মিন্টু (কী-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।

বুধবারের অনুষ্ঠান: বইমেলার ১৯তম দিনের মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টায় পর্যন্ত। এর মধ্যে বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবর্ষ: রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন- জুলফিকার শাহাদাৎ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন- শাহাবুদ্দীন নাগরী। সভাপতিত্ব করবেন- সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা