হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৭ এএম
সৃজনশীল সাহিত্যের প্রভাববিস্তারি শাখা হলো ছোটগল্প। ছোটগল্পের পাঠক প্রিয় লেখকদের বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকেন বছরজুড়ে। নবীন লেখকদের ভালো ছোটগল্পের প্রতিও থাকে তাদের আগ্রহ। অমর একুশে বইমেলায়ও ছোটগল্প গ্রন্থের প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যার দিকে তাকালেও তার প্রমাণ মেলে।
গতকাল সোমবার মেলার ১৭তম দিন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার তথ্যমতে, সংখ্যাগত দিক থেকে নতুন বইয়ের মধ্যে কবিতার বই বেশি। বিক্রির ক্ষেত্রে উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, মহীয়সীদের জীবনী ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর চেয়ে পিছিয়ে আছে। বিক্রির দিক থেকে অন্যবারের মতো এবারও এগিয়ে উপন্যাস। এরপরই অবস্থান ছোটগল্পের।
তবে গতকাল পর্যন্ত বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র ও জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, এবারের মেলায় গত কয়েক বছরের তুলনায় বই প্রকাশের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে ছোটগল্প। গত বছরও যেখানে প্রকাশ ও বিক্রির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল; এবার সেখানে গতকাল পর্যন্ত বই প্রকাশের হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ছোটগল্পের বই। সোমবার ১৭তম দিন পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৬৩৪টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতার বই ৫৪৯টি। এছাড়া উপন্যাস ২৬৯টি এবং গল্পের বইয়ের সংখ্যা ২০০টি।
গল্পের বই প্রকাশের দিক থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে প্রকাশকরা বলছেন, ছোটগল্প ইদানীং কম বিক্রি হয়। যারা ছোটগল্প দিয়ে লেখার সূচনা করেছিলেন, তারা এখন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকছেন। তাদের উপন্যাসও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের এখানেও চিরায়ত গল্পের বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে নতুন গল্পকারদের বইয়ের চেয়ে পুরোনো ও জনপ্রিয় লেখকদের গল্পের বই বেশি প্রকাশ করছি।
এবারের মেলার উল্লেখযোগ্য কিছু ছোটগল্পের বই : প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘দহসি জীবন’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, পাপড়ি রহমানের ‘হেমন্তের দিনে’, জিয়া হাশানের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, মুম রহমানের ‘অন্ধকারের গল্পগুচ্ছ’, ইরফান তানভীরের ‘সাহেবজাদা’, সালমান সাদিকের ‘একুরিয়াম’, আজহার শাহিনের ‘অপেক্ষার ট্রেন’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে তাপস রায়ের ‘রসিক শরৎচন্দ্র’, কমলেশ রায়ের ‘শাপে বর’, সুজন বড়ুয়ার ‘গল্পগুলো এত মজার’, ফারহানা ফেরদৌসী ইমতিয়াজের ‘আকাশ যেখানে শেষ হয়’, মাহবুবুল হকের ‘দুখু আর সুখু’, সাজ্জাদ আলীর ‘টুকরো কথা, স্বরলিপির ‘সম্পর্কের জলছাপ’ ও কিঙ্কর আহ্সানের ‘আরব’। অন্যপ্রকাশ এনেছে বিশ্বজিৎ
ঘোষের ‘প্রত্যাবর্তন’, জুবায়ের আমিনের ‘আমি ও বিকেলের সোনালী রোদ’, মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’, সালেহ উদ্দিন আহমদের ‘বেচু সরদারের ট্রুথ কমিশন’, কানিকা রশীদের ‘উল্লাস’, খন্দকার আলী কাওসারের ‘প্রেমে প্রহসনে’, হাসানুজ্জামান রিপনের ‘বলা বাহুল্য’ এবং শাহনাজ রবের ‘পরমারা ও অন্যান্য’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থ। বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’, নাসরীন জাহানের ‘বখতিয়ারের বানরগুলি’, ঝুমকি বসুর ‘ছাতিম ফুলের গন্ধ’, দীপেন ভট্টাচার্যের ‘এক হাজার ছয় শ আঠারো নম্বর শহর’, সনোজ কুণ্ডুর ‘সবুজ দ্বীপের নোঙর’, জোবায়ের মিলনের ‘মাথাহীন মানুষের দেশে’।
এছাড়াও কথা প্রকাশ এনেছে আহসান হাবিবের ‘জীবনের গল্প, গল্পের জীবন’, আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘রূপ-নারানের কূলে’, শাহনাজ মুন্নীর ‘প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর’, দন্ত্যস রওশনের ‘গল্পবেলা’, আফসানা বেগমের ‘অন্তরালের ঘোরে’, দিলওয়ার হাসানের ‘কুকুর কাহিনি’, প্রশান্ত মৃধার ‘নির্বাচিত গল্প’, মাসুদ খন্দকারের ‘ফিলিপাইনের লোকগল্প’। অনন্যা এনেছে স্বকৃত নোমানের ‘নির্বাচিত গল্প’, তানভীর রানা মুস্তাফিজের ‘শুকনো পাতায় বৃষ্টির গান’, ইকবাল খন্দকারের ‘নিশি ঘাতক’। বেহুলা বাংলা এনেছে জামান মনিরের ‘টুকলুর স্মার্ট ঘড়ি’, সাদাত সায়েমের ‘মীনের অসুখ ও অন্যান্য গল্প’ ও হাফেজ আহমেদের ‘উলঙ্গ শহর’।
এছাড়াও প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপি থেকে এসেছে অন্তিক মাহমুদের ‘ভুলা’, বিভাস থেকে মৃত্তিকা গুণের ‘নির্ভার-স্ব’, বাতিঘর থেকে শাহীন আক্তারের ‘মানচিত্র’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে খান মুহাম্মদ রুমেলের ‘হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যার দিকে’ ও ইকবাল খন্দকারের ‘খুনির মুখোমুখি’। ঐকতান থেকে মীনা পারভীনের ‘হাসি’। দি রয়েল পাবলিশার্স থেকে শাওন আসগরের ‘হ’, গাইডেন্স থেকে ফাতেমা স্বর্ণা ‘আয়নার রংধনু’। শব্দশিল্প থেকে সুষমা সরকারের ‘দ্বিতীয়’। নব সাহিত্য প্রকাশনী থেকে চন্দ্রা তরফদারের ‘মিলি’, অম্বয় প্রকাশ এনেছে পার্থ প্রতিম দের ‘ধূলিশয্যা’, অন্যধারা থেকে আশরাফ আহমেদের ‘শেষ অধ্যায়’, মাছরাঙা প্রকাশন এনেছে প্রদীপ্ত দেব চৌধুরীর ‘চক্র’, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে মেহবুবা হক রুমার ‘পঁচিশে পঞ্চরস’, আগামী প্রকাশনী এনেছে সাবরিনা নিপুর ‘সুতো’, পুঁথিপ্রকাশ এনেছে হাজেরা খাতুনের ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’ ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ‘বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প’।
মেলার মূল মঞ্চের আয়োজন : গতকাল বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আল মাহমুদ : জীবন ও কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মজিদ মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন মুসা আল হাফিজ এবং কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব সাদিক। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলার লেখক বলছিÑ অনুষ্ঠানে নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি মতিন বৈরাগী এবং কবি ফজলুল হক তুহিন।
আজকের মেলার অনুষ্ঠান : আজ মঙ্গলবার বইমেলার ১৮তম দিনে মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম : শহীদ কাদরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।