হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১২ পিএম
প্রবা ফটো
একুশের শাণিত চেতনার বইমেলা শুধু বই বিকিকিনির প্রাঙ্গণই নয়, এ যেন বইয়ের উৎসবের মিলনমেলা। এই মিলনমেলার একই প্রাঙ্গনে পাওয়া যাচ্ছে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, সায়েন্সফিকশন, থ্রিলার, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ,শিশুতোষ, ভ্রমণ, জীবনী, অনূবাদ ও ধর্মীয় বইসহ সবধরনের বই। এবারও তার ব্যতয় হচ্ছে না।
এবারের মেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছ- প্রতিবারের মতো এবারও সব ধরনের বইয়ের মধ্যে প্রকাশনার দিকে সবচেয়ে বেশি ‘কবিতা’র বই ও বিক্রি দিক থেকে ‘উপন্যাস’ এগিয়ে থাকলেও প্রকাশনার সংখ্যায় তৃতীয় এবং বিক্রির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘গল্প’র বই।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারের বাঙালির প্রাণেরমেলা ‘বইমেলা’র শুরু থেকে আজকের ১৭তম দিন পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে সেই সত্যত্যাই পাওয়া গেছে। মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশকরাও বলছেন- সংখ্যাগত দিক থেকে নতুন বইয়ের মধ্যে কবিতার বই বেশি থাকলেও বিক্রির ক্ষেত্রে উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কবিতা, মহীয়সীদের জীবনী ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী’র চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বিক্রির দিক থেকে অন্যাবারের মতো এবারও সবচেয়ে এগিয়ে আছে উপন্যাস, ঠিক এরপরেই বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘ছোটগল্প’ বা গল্পের বই।
প্রকাশকরা আরও বলেছেন, নতুন গল্পকারদের বইয়ের চেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় লেখকদের গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তাদের ভাষায়, গল্পের বই এবার তেমন ভালো যাচ্ছে না। তবে, বিগত কয়েকবছরের মতো এবারও উপন্যাসের পরেই গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে; যার অধিকাংশই চিরন্তন সব লেখকদের বই। আর এই উপন্যাস বিক্রির দৌড়ে এবারও এগিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, বনফুল, আক্তারুজ্জামন ইলিয়াসসহ দেশের চিরন্তন সব সাহিত্যিকরা।
এদিকে, সোমবার ১৭তম দিন পর্যন্ত বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র ও জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্য মতে বইপ্রকাশের সার্বিক চিত্রে উঠে এসেছে এবারও গল্পের বই প্রকাশের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছে। একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য মতে এবারের বইমেলার এপর্যন্ত মোট নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৬ শত ৩৪টি। আর, এসব প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে সংখ্যার দিক সব থেকে বেশি এসেছে- কবিতা’র বই (৫৪৯টি), এরপরে আছে উপন্যাস (২৬৯টি) এবং তৃতীয় স্থানে আছে গল্পের বই; যার সংখ্যা ২০০টি।
এবারের বইমেলার কিছু নতুন ছোট গল্পের বই: প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে- আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘দহসি জীবন’, হাসনাত আবদুল হাই’য়ের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, পাপড়ি রহমানের ‘হেমন্তের দিনে’, জিয়া হাশানের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, ডি সাইফের ‘ম্যানিকুইন’, মুম রহমানের ‘অন্ধকারের গল্পগুচ্ছ’, ইরফান তানভীরের ‘সাহেবজাদা’, সালমান সাদিকের ‘একুরিয়াম’, আজহার শাহিনের ‘অপেক্ষার ট্রেন’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে- তাপস রায়ের ‘রসিক শরৎচন্দ্র’, কমলেশ রায়ের ‘শাপে বর’, সুজন বড়ুয়ার ‘গল্পগুলো এত মজার’, ফারহানা ফেরদৌসী ইমতিয়াজের ‘আকাশ যেখানে শেষ হয়’, মাহবুবুল হকের ‘দুখু আর সুখু’, সাজ্জাদ আলী’র ‘টুকরো কথা, স্বরলিপি’র ‘সম্পর্কের জলছাপ’ ও কিঙ্কর আহ্সানের ‘আরব’। অন্যপ্রকাশ এনেছে- বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘প্রত্যাবর্তন’, জুবায়ের আমিনের ‘আমি ও বিকেলের সোনালী রোদ’, মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’, সামছুদ্দীন মাহমুদের ‘টার্ক দ্বীপের সাদা দৈত্য’, সালেহ উদ্দিন আহমদের ‘বেচু সরদারের ট্রুথ কমিশন’, কানিকা রশীদের ‘উল্লাস’, খন্দকার আলী কাওসারের ‘প্রেমে প্রহসনে’, হাসানুজ্জামান রিপনের ‘বলা বাহুল্য’ এবং শাহনাজ রবের ‘পরমারা ও অন্যান্য’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থ। বিদ্যাপ্রকাশ নিয়ে এসেছে- মোহিত কামালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’, নাসরীন জাহানের ‘বখতিয়ারের বানরগুলি’, ঝুমকি বসুর ‘ছাতিম ফুলের গন্ধ’, দীপেন ভট্টাচার্যের ‘এক হাজার ছয় শ আঠারো নম্বর শহর’, সনোজ কুণ্ডুর ‘সবুজ দ্বীপের নোঙর’, জোবায়ের মিলনের ‘মাথাহীন মানুষের দেশে’।
কথা প্রকাশ এনেছে- আহসান হাবিবের ‘জীবনের গল্প, গল্পের জীবন’, আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘রূপ-নারানের কূলে’, শাহনাজ মুন্নী’র ‘প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর’, দন্ত্যস রওশনের ‘গল্পবেলা’, আফসানা বেগমের ‘অন্তরালের ঘোরে’, দিলওয়ার হাসানের ‘কুকুর কাহিনি’, প্রশান্ত মৃধা’র ‘নির্বাচিত গল্প’, মাসুদ খন্দকারের ‘ফিলিপাইনের লোকগল্প’ এবং মো. মেহেদী হাসানের ‘মোল্লা, হোজ্জা বা আফিন্দির গল্প’। মেঘদূত থেকে এসেছে- সামছুন নাহারের ‘কদম ফুল’, খন্দকার ফাহমিদা ফেরদৌসের ‘সোনাপুর চা বাগান ও একটি হলুদ শাড়ি’ ও মাকসুদা বীথি’র ‘নির্মক্ষিক’। অনন্যা এনেছে- স্বকৃত নোমানের ‘নির্বাচিত গল্প’, তানভীর রানা মুস্তাফিজের ‘শুকনো পাতায় বৃষ্টির গান’, ইকবাল খন্দকারের ‘নিশি ঘাতক’, শাহআলম সাজুর ‘চার গোয়েন্দা ভয়ংকর জঙ্গলে’, বেহুলা বাংলা এনেছে- জামান মনিরের ‘টুকলুর স্মার্ট ঘড়ি’, সাদাত সায়েমের ‘মীনের অসুখ ও অন্যান্য গল্প’ ও হাফেজ আহমেদের ‘উলঙ্গ শহর’, আবিষ্কার থেকে এসেছে হাসান হাফিজের ‘সাত দেশের রূপকথা’ ও তওফিক মুজতাবা, জুনায়েদ সাদেকের ‘আবার নরকুম্ভীর’।
এছাড়াও প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপি থেকে এসেছে- অন্তিক মাহমুদের ‘ভুলা’, বিভাস থেকে- মৃত্তিকা গুণের ‘নির্ভার-স্ব’, বাতিঘর থেকে- শাহীন আক্তারের ‘মানচিত্র’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে খান মুহাম্মদ রুমেলের ‘হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যার দিকে’ ও ইকবাল খন্দকারে ‘খুনির মুখোমুখি’, বাংলা প্রকাশ থেকে ইন্দিরা দাশের ‘লাড্ডু ও তার বন্ধুরা’, ঐকতান থেকে মীনা পারভীনের ‘হাসি’, দি রয়েল পাবলিশার্স থেকে শাওন আসগরের ‘হ’, গাইডেন্স থেকে ফাতেমা স্বর্ণা ‘আয়নার রংধনু’, অমর প্রকাশনী থেকে আবদুল মাজেদের ‘পঞ্চভূত’, শব্দশিল্প থেকে সুষমা সরকারের ‘দ্বিতীয়’, সংযোগ থেকে শফিক হাসানের ‘সংসার সুখের হয় পুরুষের গুণে’, নব সাহিত্য প্রকাশনী থেকে চন্দ্রা তরফদারের ‘মিলি’, অম্বয় প্রকাশ এনেছে পার্থ প্রতিম দে’র ‘ধূলিশয্যা’, অন্যধারা থেকে আশরাফ আহমেদের ‘শেষ অধ্যায়’, মাছরাঙা প্রকাশন এনেছে প্রদীপ্ত দেব চৌধুরীর ‘চক্র’, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে মেহবুবা হক রুমার ‘পঁচিশে পঞ্চরস’, আগামী প্রকাশনী এনেছে সাবরিনা নিপুর ‘সুতো’, পুথিপ্রকাশ এনেছে- হাজেরা খাতুনের ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’ ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ‘বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প’, ঝিঙেফুল এনেছে- শান্তা মারিয়ার ‘পাখিটা এলিয়েন ছিল’ এবং নবান্ন প্রকাশনী এনেছে- সফিকুল ইসলামের ‘দৈত্য পাহাড়ের পিশাচ’সহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশিত আরও বেশ কিছু গুল্পের বই।