হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০৫ পিএম
প্রবন্ধের পাঠক থাকলেও সৃজনশীল বইয়ের তুলনায় প্রবন্ধের বইয়ের বিক্রি কম এবারের বইমেলায়
বিষয়-বৈচিত্র্যের দিক থেকে ভিন্নতা নিয়ে বইমেলায় প্রতিদিনই আসছে প্রচুর নতুন বই। সৃজনশীল বইয়ের পাশাপাশি মননশীল বা প্রবন্ধের বইও প্রকাশিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবন্ধের পাঠক থাকলেও সৃজনশীল বইয়ের তুলনায় প্রবন্ধের বইয়ের বিক্রি কম। কিন্তু রুচিশীল, সাহিত্যমনা পাঠকের কাছে প্রবন্ধের বইয়ের চাহিদা বেশি।
যদিও প্রকাশকদের দাবি, দিন দিন মননশীল বইয়ের পাঠক বাড়ছে। তারা বলছেন, প্রবন্ধের বই লেখাটা যেমন সৃজনশীল, পরিশ্রমলব্ধ কাজ, প্রবন্ধের বই পড়ার জন্যও পাঠককে তৈরি হতে হয়। ভালো প্রবন্ধের বই পাঠককে সমৃদ্ধ করে। তাই সংখ্যায় কম হলেও অনেকের আগ্রহ প্রবন্ধের বইয়ের প্রতি এবং সেই পাঠক সংখ্যা ধীরে হলেও বাড়ছে।
এ বিষয়ে দেশের মননশীল বইয়ের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা ‘অবসর প্রকাশনী’র ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে পাঠের আগ্রহ বাড়ছে পাঠকের মাঝে। গল্প-কবিতা-সায়েন্স ফিকশন শুধু নয়; অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাসসহ নানা বিষয়। সেসব বইয়ের বিক্রি তুলনামূলক কম; কিন্তু পাঠক রয়েছে। আর সেই পাঠক চাহিদা দিন দিন কমছে না বরং বাড়ছে।
রোদেলা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রিয়াজ খান বলেন, চিন্তাশীল পাঠকই আসেন মননশীল বা প্রবন্ধের বইগুলো কিনতে। তাদের কথা চিন্তা করেই আমাদের প্রকাশনা থেকে নিয়মিত প্রবন্ধের বই প্রকাশ করছি। কোনো কোনো প্রবন্ধের বই গল্প ও উপন্যাসের বইয়ের চেয়েও বেশি চাহিদা থাকে। তাই আমরা চেষ্টা করি ভালো প্রবন্ধের বই প্রকাশ করতে। আর পাঠকের রুচির গঠনে প্রবন্ধের বই খুবই জরুরি। আর সারা বছরই কিছু কিছু প্রবন্ধের বই বিক্রি হয়। মেলায়ও কম-বেশি প্রবন্ধের বই চলে।
এবারের বইমেলার গতকাল ১৬তম দিনে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী নতুন বই এসেছে ১০৪টি এবং প্রবন্ধের বই এসেছে মাত্র ৫টি। এবারের মেলার গতকাল ১৬তম দিন পর্যন্ত মোট বই প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৫২১টি এর মধ্যে মননশীল বা প্রবন্ধের বই এসেছে ৬২টি। আর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের বইয়ের মধ্যে রয়েছেÑ বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক মোজাফ্ফর হোসেনের ‘ব্রাহ্মসমাজে ইসলাম সাহিত্যের সক্রিয়তাবাদ ও অন্যান্য’, অনন্যা থেকে গোলাম মাওলা রনির ‘কি দেখেছি কি দেখছি’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে ‘অতীত থেকে অধুনা : বাংলাদেশের নারী লেখক’, কথাপ্রকাশ থেকে ওয়াসি আহমেদের ‘টিকিটাকা’, বিভাস থেকে তালুকদার সারোয়ার জাহান আরেফিনের ‘ভাটি বাংলার লোককাহিনী ও লোকসংস্কৃতি’, এমদাদ খানের ‘পূর্ববঙ্গ মৈমনসিংহ গীতিকা (২য় ও ৩য় খণ্ড)’, মজিবর রহমানের ‘বাংলা বাঙালি বাংলাদেশ’, রণেন সরকারের ‘একাত্তরের পটভূমিকায় ও অন্যান্য’, পালক পাবলিশার্স থেকে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের ‘শিক্ষার তিন ভুবনে’, আফসার ব্রাদার্স থেকে ফারহানা মাহিনের ‘আহমদ ছফার উপন্যাস : সময়ের শিল্পায়ন’, ঐতিহ্য থেকে আবদুল হাই ভুঁইয়ার ‘স্বার্থপরতার অর্থনীতি’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘শুদ্ধতম কবি’, জাকারিয়া প্রীণনের ‘কবির সোনালি অন্ধকার’, আলেয়া রেহমানের ‘লেখালেখি’, মো. মহিউদ্দিনের ‘গেস্ট রুম থেকে বলছি’ ও আসাদ চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের উর্দু সাহিত্য’, বাংলা প্রকাশ থেকে এসেছে ড. মাহবুব হাসানের ‘গদ্যের ম্যাজিক’, আবিষ্কার প্রকাশনী থেকে এসেছে গোলাম কিবরিয়া’র ‘বাংলাদেশী জাতীয়তার প্রেক্ষাপট’, আলী সানোয়ার ও দেলোয়ার হাসানের ‘র-রক্ষীবাহিনী-র্যাব ও অন্যান্য’, ‘গাজীউল হাসানের ‘রাজনীতির অগ্নিপুরুষ: ভাসানী’, সাহস পাবলিকেশন্স থেকে শহীদুজ্জামানের ‘আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের তত্ত্বাবলি’, শোভা প্রকাশ থেকে আফরোজা খাতুনের ‘বাংলা সাহিত্য ও সংগ্রামে নারী’, ফরিদ উদ্দিন নীরদের ‘সিরাজ সিকদার হত্যার অপ্রকাশিত অধ্যায়’ ও আবদুল হাই শিকদার ‘জানা-অজানা মওলানা ভাসানী’, কারুকাজ প্রকাশনী থেকে আতাউর রহমান মিটন ‘সময় বিচিন্তা’ ও রেজাউল করিম সিদ্দিকের ‘অন্তরালের কথা’, আগামী প্রকাশনী থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজী ‘তিন ভুবনের চাঁদ’, ম্যাপ লেখনী থেকে সিলভীয়া’র ‘শিক্ষার আপন সত্তা’, রোদেলা প্রকাশনী থেকে এসেছে ড. মিজানুর রহমান ‘রহু চন্ডালের হাড়’ ও শেখ সায়মন পারভেজ হিমেলের ‘তারুণ্যের স্বদেশ ভাবনা, পাঠক সমাবেশ থেকে আবু সাইদ খানের ‘মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য’, স্বরলিপি পাবলিকেশন থেকে ড. সাহেদ মন্তাজের ‘নজরুল ও বিবিধ প্রসঙ্গ’, আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে কাজী জহিরুল ইসলামের ‘প্রমিত উচ্চারণের ভেতর’, প্রতিভা প্রকাশ থেকে সুমন সুবহানের ‘ফুটনোটে জলছাপ’, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে সেলিম জাহানের ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’, বেহুলা বাংলা থেকে আহমেদ উল্লাহের ‘অমুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে মুহাম্মদ (সা.)’, রইশ উদ্দীন আহমদের ‘এক অদম্য পথিকের গান’, ছিন্নপত্র প্রকাশন অথই নূরুল আমিনের ‘আমার যুদ্ধ কলমে’ ও সরকার আজিজের ‘শ্বাসমূলের নিশ্বাস’ ইত্যাদি।
মেলার মূলমঞ্চের আয়োজন : গতকাল রবিবার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জহির রায়হানের সাহিত্যকর্মে ঐতিহাসিক ঘটনার ‘বিচার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহুল আহমদ। আলোচনায় অংশ নেন মশিউল আলম এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব হাসান। আলোচনা শেষে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বইমেলার আজকের কর্মসূচি : আজ সোমবার বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম : আল মাহমুদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মজিদ মাহমুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মুসা আল হাফিজ ও কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব সাদিক। এরপর একই মঞ্চে সন্ধ্যায় শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।