হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
একুশের স্মৃতিবিজড়িত বাঙালির প্রাণের আবেগ জড়ানো ‘অমর একুশে বইমেলা’ প্রতিবারই বিপুল মানুষের সাংস্কৃতিক আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলনের মধ্যে দিয়ে অমর একুশে চেতনাকে উত্তরোত্তর শাণিত ও সম্মৃদ্ধি করে আসছে।
মেলাটি এখন রাজধানী ঢাকা থেকে অন্যান্য শহরে এবং শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে, গ্রাম-গঞ্জ থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে, এমনকি দেশের বাইরের বাঙালিদের মধ্যেও যেমন বাঙালির চেতনাকে সম্মৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনি একটি সংস্কৃতিক ধারাও তৈরি হচ্ছে। যে কারণে বইমেলা উপলক্ষে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি জুড়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসে।
বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক অংশে অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের বইমেলার বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ১৩তম দিনেও তার ব্যতয় হয়নি।
আগামীকাল শুক্রবার বইমেলার ১৪তম দিন। এদিনে শুরু হচ্ছে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ছয়ঋতুর শেষ ঋতু ঋতুর রাজা ‘বসন্ত’। অর্থ্যাৎ সব বাঙালি আর তরুণ-তরুণীদের কাছে প্রিয় ঋতু বসন্তের প্রথম দিন; প্রাণের ১লা ফাল্গুন। প্রাণের এই পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে বিগত কয়েকবছর ধরে মিশেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। এ কারণে মেলাপ্রাঙ্গণ বাসন্তি সাজে সেজে উঠবে এটাই যেন বলে দিচ্ছে- গতকয়েকদিন ধরে বইমেলাকে ঘিরে থাকা বাসন্তি সাজে তরুণ-তরুণীদের চপল উপস্থিতি আর দখিণা বাতাস গায়ে মেখে প্রকাশনায়-প্রকাশনায় বই কেনার ধুম।
আজ সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার শিশুদের সাথে তরুণ-তরুণীদের মাথায় ফুলের ব্যান্ডপরে প্রাণবন্ত উপস্থিতি-উচ্ছল-উজ্বল চলন সবকিছুই এবারের মেলার সকলদিনকে পিছনে ফেলে দিলো। পিছনে ফেলে দিলো সকল দিনের বেচাকেনাকেও।
‘বসন্ত’ ভালোবাসা প্রকাশের অন্যন্য এক ঋতু। অবশেষে; আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পেরুলেই বছর ঘুরে হাজির হবে ষঢ়ঋতুর দেশের শেষ ঋতু ঋতুরাজ বসন্তের প্রথমদিন। বাঙালির কাছে এ শেষ ঋতুই যে হয়ে আসে সবকিছু নতুন করে-নতুন উদ্দ্যোমে শুরু করার ঋতু হয়ে। যে কারণেই প্রকাশকরা আশা করছে, শুক্রবার লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠবে বইমেলা। আজকের চেয়ে বই বিক্রি হবেও অনেক-অনেক বেশি। তাছাড়া শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে সকল বয়সী বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের জন্য বইমেলার প্রবেশদ্বার খুলবে সকাল ১১টায় এবং চলবে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
মেলার মূলমঞ্চের আজকের অনুষ্ঠান
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান: প্রেক্ষাপট ও অভিমুখ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- সারোয়ার তুষার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- যোবায়ের আল মাহমুদ এবং নুসরাত সাবিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন- মাহবুব মোর্শেদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক পর্বে ছাত্রসমাজ এগিয়ে এসেছে এবং রাজনৈতিক পরিণতির অভিমুখ নির্ধারণ করেছে। বৃহত্তর জনগণ ছাত্রশক্তির ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পদাঙ্ক অনুসরণে বাধ্য হয়েছে। ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অতীতে অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র-জনতার আত্মদান ও বিসর্জনের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি। জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ী ছাত্রশক্তি এ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন। তাই এবার তারা রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করতে চায়। ছাত্র-জনতার সফলতা/ব্যর্থতার ওপর রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
আলোচকদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যত গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্রতর হয়েছে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান। ফ্যাসিবাদী শক্তি দীর্ঘদিন এদেশের জনগণকে অবদমিত করে রেখেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের অবদমিত আকাক্সক্ষার বিস্ফোরণ ঘটেছে। জনগণ ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই এই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ২৪-এর অভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। এর তাৎক্ষণিকতা, এর আকস্মিকতা সবকিছু মিলিয়ে এটি ছিল একটি সফল গণ-অভ্যুত্থান।
এরপরেই সন্ধ্যায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে আবৃত্তি পরিবেশন করেন- আবৃত্তিশিল্পী রবিউল আলম এবং নাসিম আহমেদ। আজ ছিল শাকিল আহমেদের পরিচালনায় ‘আবৃত্তি সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং সারমিন ইসলাম জুঁইয়ের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘ঋদ্ধস্বর আবৃত্তি একাডেমি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, অনন্যা আচার্য, ফাহমি ফেরদৌস, ফারহানা শিরিন, সঞ্জয় কবিরাজ, নিপা ভট্টাচার্য, ইন্দিরা রুদ্র এবং কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), এ বি এম তানবীর আলম সজীব (কী-বোর্ড), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি) শেখ ফয়েজ পুলক (অক্টোপ্যাড) এবং রিচার্ড কিশোর (গীটার)।
এদিকে, মেলার লেখক বলছি মঞ্চের আয়োজনে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ফাতিমা তামান্না এবং কবি মুহাম্মদ আবদুল বাতেন।
আগামীকালের মেলার অনুষ্ঠান
আগামীকাল শুক্রবার; ১লা ফাল্গুন; অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। এদিনের মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষ্যে রাত ৯টার পরিবর্তে মেলা চলবে চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। এর মধ্যে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আহমদ ছফা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তাহমিদাল জামি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নূরুল আনোয়ার এবং সাজ্জাদ শরিফ। সভাপতিত্ব করবেন সলিমুল্লাহ খান।