হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২০ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
‘কবিতাতো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোন অসুখে
নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে-
পথিক- এ পথে নয়, ভালবাসা এই পথে গেছে’
কবি হেলাল হাফিজ তার এক কবিতায় কবিতা নিয়ে বলতে গিয়ে এভাবেই বলেছেন। আসলে-ই কি তাই! যদি তাই না হবে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক আর সাহিত্য সমালোচকরা কেন বলবেন যে, ‘কবিতা-ভালবাসাসহ যাপিত জীবনের বার্তা তুলে ধরে। হৃদয়ের কথা আর আবেগের পাশাপাশি জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবাদের হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে এই ‘কবিতা’।
সেই ‘৫২-র ভাষা আন্দোলনের আগে ও পরে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ যত আন্দোলন হয়েছে সেসব আন্দোলনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই কবিরা রচনা করেছেন নানান সব কবিতা। তারই একটা উদাহরণ সেই ১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে দেশের স্বনামখ্যাত কবি-গবেষক-প্রাবন্ধিক আবদুল গাফফার চৌধূরী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি...’ অমর কবিতা।
যে কবিতাটার সাথে সূর যোগ হয়ে এখন আমাদের প্রভাতফেরির গান-এ পরিণত হয়েছে। সেই অমর একুশের চেতনাবাহী বাংলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এবারের ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’-এর যত দিন অতিবাহিত হচ্ছে, আসছে-শতাধিক নানা ধরনের নতুন বই। তবে, পাঠকদের আগ্রহে যা-ই থাকুক না কেন; প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিদিনই সবচেয়ে বেশি আসছে এই কাব্যগ্রন্থ বা কবিতা’র বই।
মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশকরা এবং বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তারাও জানাচ্ছেন একই কথা। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে এবারের বইমেলার আজ ১২ তম দিনে মোট বই এসেছে ৯১৭টি। এর মধ্যে কবিতার বই-ই এসেছে ২৮০টি। তারা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে যেসব বই একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে জমা দিয়েছে সেখান থেকে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরেই বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সংখ্যা অনেক বেশিই হবে।
কবিতার বই বিক্রি কেমন হচ্ছে জানাতে চাইলে- বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, কবিতার বই তেমন বিক্রি হয় না। যা বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই পুরোনো বরেণ্য কবিদের বই। নতুনদের কবিতার বই কম বিক্রি হয়। যারা বেশি কবিতা ভালোবাসেন এবং যারা কবিতা লেখেন বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাই মূলত নতুনদের কাব্যগ্রন্থ কেনেন।
মেলার নতুন বইয়ের তথ্য
এবারের বইমেলার উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতার বই- ‘ঐতিহ্য’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে- মুহাম্মদ আবু বকরের ‘হোগলা বনের স্বর’, শান্তা এফ আরা’র ‘দ্য লৌন এক্সপ্রেস’, উম্মে রায়হানা’র ‘মাংসাশী ধুতুরার ঘ্রাণ’, মেস্বাহ কামালের ‘পৃথিবী বিশেষণহীন একদিন’, হাসান রনি’র ‘ফেরার মরশুম’ ও সৈয়দা নীলিমা দোলা’র ‘মফস্বলীয় ইন্টেন্সিটি’ সহ বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ। ‘অনন্যা’ প্রকাশ করেছে- কবি শিহাব শাহরিয়ারের ‘ব্রক্ষ্মপুত্র দাঁড়াও’, আবদুল হাই শিকদারের ‘আমরা মানুষ আমরা এসেছি’, জাকির আবু জাফরের ‘মন এখন বিপ্লবের নদী’। ‘কাকলী’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে- কবি হাসান হাফিজের কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসা তার ভাষা’ ও মমতা মজুমদারের ‘তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো’। ‘অক্ষর-পত্র’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে শাহনাজ পারভীন মিতা’র ‘অনুরণন ঝরা পাতার’; বইটি পরিবেশক ‘পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.’। ‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে- খালেদা আক্তার রিনু’র ‘যে অনিন্দ্য বিরহ আমার’, মালেক মুস্তাকিমের ‘আধেক জীবন আধেক ধুলো’, আশরাফ আহমেদের ‘গাছ নেই ছায়া পড়ে আছে’ ও সাম্যনাথী ভৌমিকের ‘শরশয্যা’ ইত্যাদি। ‘আগামী প্রকাশনী’ প্রকাশ করেছে- ফরহাদ মাজহারের ‘আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ কিপ্লবের সামনে’ এবং মুহম্মদ মাহবুব উল ইসলামের ‘বরাদ্দের শূন্য ভাণ্ডে’ ইত্যাদি। ‘কথাপ্রকাশ’ প্রকাশ করেছে- কবি মতিন রায়হানের ‘দায় ও দহনের বর্ণমালা’, আতাউল হক সিদ্দিকী’র ‘সনেটসমগ্র’, খসরু পারভেজের সম্পাদনায় ‘বাংলাদেশের পাঁচ দশকের কবিতা’ ও দেশের বিভিন্ন সময়ের ৫০জন নারী কবির বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে অনুদিত ‘৫০ বাংলাদেশি ওমেন পোয়েটস ইন ইংলিশ’ শীর্ষক কাব্য সংকলন; এ বইটির কবিতা বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন- নবীনা দাশ এবং সম্পাদনা করেছেন- আলম খোরশেদ। ‘ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’ নিয়ে এসেছে- কবি সৈকত হাবিবের ‘কাব্য সংগ্রহ’, সায়ীদ আবুবকরের ‘নরক নগরে’, অন্ত মিলনের ‘চোখের ভেতরে নূহের প্লাবন’, ইমন ভদ্রের ‘আগুনের ফুল’, তানজিনা ফেরদৌসের ‘খামবন্দি প্রেমের রসায়ন’সহ বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ। ‘সময় প্রকাশন’ থেকে এসেছে- শাহাবুদ্দীন নাগরী’র ‘লক্ষ লক্ষ দেবদূত’ ও ফরিদা রানু’র ‘প্রকম্পিত পথে কৃষ্ণচূড়া’। ‘জাগৃতি প্রকাশনী’ থেকে বের হয়েছে- কবি মাজহার সরকারের ‘ঝিকটি ফুলের ক্ষমতা’, ঝর্না রহমানের ‘দেহের মাদল’, প্রদীপ কুমারের ‘জীবন নদীর বাঁকে’ ও ইভা ওসমানের ‘তোমাকে ছুঁয়ে থাকে আমার কবিতা’সহ বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ। ‘আদর্শ’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে- মাহবুব সিদ্দিকী’র অনুবাদে ভারতের বেনারসের বিখ্যাত কবি কবীর-এর কাব্য ‘কহেন কবীরে’ ও আহদে দীন রুমির ‘জীবন কিংবা জিজ্ঞাসার জার্নাল’। ‘রোদেলা’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে- শওকত হায়দার খানের ‘অন্তরে দ্বৈরত’ ও মইফুল আলমের ‘দৈনিক দূর্বাঘাস’ শীর্ষক দু’টি কাব্যগ্রন্থ।
এছাড়াও ‘বিদ্যাপ্রকাশ’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে- মিনহাজুল হকের ‘হরিণ ঠেকানোর দিন’ ও সায়ন্থ সাখাওয়াৎ-এর ‘অপেক্ষায় আসেনি প্রতিক্ষায় কাটাবো জীবন’, ‘বাতিঘর’ থেকে- মাহবুব কবিরের ‘ওপরে ওঠার সিঁড়ি’, ‘রাত্রি প্রকাশনী’ থেকে- এম এইচ মাহির-এর কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেম বিদ্রোহ’ ও জান্নাতুন নাঈম মায়িশা’র ‘নক্ষত্রের রেইনকোট’, ‘মাওলা ব্রাদার্স’ প্রকাশ করেছে- লায়লা ফারজানা’র ‘নীল ইগুয়ানা’।
মেলার মূলমঞ্চের আজকের আয়োজন
আজ বুধবার ১২তম দিনে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে- ‘স্লোগান: বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারাবাহিকতায় বাকশাল গঠন, বাংলা সাহিত্যের দায় ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- হাসান রোবায়েত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মঈন জালাল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ফরহাদ মজহার। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে, মেলার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ফয়েজ আলম এবং কবি সৈয়দ রনো।
আগামীকালের মেলা
আগামীকাল বৃহস্পতিবার; বইমেলার ১৩ম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর, রাত সাড়ে আটটার পরে আর কেউ নতুন করে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, এদিনের মেলায় বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা অনুষ্ঠিত এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।