হাসনাত শাহীন
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:৫৫ এএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৭ এএম
অমর একুশে বইমেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়। প্রবা ফটো
দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বইপ্রেমীদের প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে বইমেলা’। এই মেলা ঘিরে সবার আশার পারদ থাকে সবকিছুর ওপরে। যে কারণে হয়তো কেউ বন্ধুদের নিয়ে, কেউ আবার পরিবার-পরিজনসহ মেলায় আসেন। সেক্ষেত্রে নানা ব্যস্ততার মাঝে তারা সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র বা শনিবারকে বেছে নেন। এ দুদিন ব্যস্ততা কম থাকার কারণে ছোট-বড় প্রায় সবারই নজর বইমেলাকে ঘিরে থাকে। কিন্তু তাই বলে মেলা শুরুর দিকের কর্মদিবসে এত লোকসমাগমÑ এ যেন কল্পনার চেয়েও বেশি। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার তৃতীয় এবং সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে এমনটাই ঘটেছে।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের রমনা কালীমন্দিরের এলাকায় কথা হয় পাঠক ও তরুণ লেখক সানজিদা সাফার সঙ্গে। তিনি জানালেন, বরিশাল থেকে মেলায় এসেছেন। মেলায় আজই তার প্রথমদিন। এদিন মেলা থেকে বেশকিছু প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছেন; যা থেকে বাছাই করে আগামী সপ্তাহে বা তার পরের কোনো একসময় বইগুলো কিনবেন বলে জানান তিনি।
এবারের মেলার পরিবেশ ও সার্বিক পরিস্থিতি কেমন লাগছে জানাতে চাইলে সাফা বলেন, মেলায় এসে বেশ ভালো লাগছে। মেলার পরিবেশ-পরিস্থিতিও ভালো। অন্যবার মেলার প্রথমদিকে তেমন লোকসমাগম হতো না। আজ মেলার মাত্র তৃতীয় দিন; এমন দিনের এমনই লোকসমাগম দেখে অবাক হয়েছি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এমন একটা মেলা পাব বলেই প্রত্যাশা ছিল।
নিময় অনুসারে সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসের দিন মেলার প্রবেশপথ খোলে বেলা ৩টায়। গতকাল সোমবারও এর ব্যত্যয় হয়নি। এদিন ৩টায় বইমেলার দ্বার খোলার পর থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। সরস্বতী পূজার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এ সময় মেলার দুই প্রাঙ্গণে তরুণ-তরুণী আর শিশু-কিশোরদের প্রাণবন্ত আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বই বিক্রি তেমন দেখা না গেলেও বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে ঘুরে ঘুরে বইপ্রেমী ও পাঠকদের বিভিন্ন বই নেড়ে-চেড়ে দেখতে ও বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। অনেককে আবার নোটবুকে পছন্দের বইয়ের নামও টুকে নিতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছরই মেলার প্রথমদিকে তেমন বিক্রি হয় না। এই সময়ে যারা আসেন; তারা মূলত বই দেখেন, তালিকা সংগ্রহ করেন। মেলার যত দিন যাবে, ততই বইপ্রেমী-পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে; বাড়বে বই বিক্রি।
অন্যদিকে অধিকাংশ প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারীরা জানাচ্ছেন, এবারের মেলার চরিত্র একেবারেই ভিন্ন। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। মেলা শুরুর দিকের অসঙ্গতিগুলো প্রায় কাটিয়ে উঠে মেলাপ্রাঙ্গণ অনেকটা ছিমছাম, পরিপাটি হয়ে উঠেছে। বৃহৎ পরিসরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন পাঠক-বইপ্রেমীরা। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন নতুন আসা বইয়ের পাতায়। এমনভাবে চলতে থাকলে এবারের মেলা আশানুরূপ হবে বলেই মনে হচ্ছে।
মেলায় নতুন বই
গতকাল তৃতীয় দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৩২টি। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, গত তিন দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ৪৫টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ফরহাদ মজহারের বই ‘গণপ্রতিরক্ষা’, অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘পরাধীনতা, রোদেলা প্রকাশন থেকে শেখ সায়মন পারভেজ হিমেলের ‘তারুণ্যের স্বদেশ ভাবনা’, জাগৃতি থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি ও কথাশিল্পী মাজহার সরকারের ‘ঝিকটি ফুলের ক্ষমতা’, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’ এবং অবসর প্রকাশনা থেকে ড. আবদুল মতীনের বই ‘দর্শন সাহিত্য ও সংস্কৃতি’।
মেলার মূল মঞ্চের আয়োজন
বইমেলার মূল মঞ্চে গতকাল অনুষ্ঠিত হলো আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় ‘হায়দার আকবর খান রনো : আজীবন বিপ্লব-প্রয়াসী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশ নেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, জলি তালুকদার এবং অনন্যা লাবণী পুতুল। সভাপতিত্ব করেন দীপা দত্ত।
আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কবিতা পাঠ করেন কবি মোহন রায়হান ও রেজাউদ্দিন স্টালিন। আবৃত্তি করেন মাহমুদা সিদ্দিকা সুমি এবং হ্যাপি হাবিবা। এরপর ছিল ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাঁশরী’র পরিবেশনা।