× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট, ভিড় নেই বাংলা একাডেমিতে

ফারহানা বহ্নি

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৩ পিএম

আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:২২ পিএম

মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট, ভিড় নেই বাংলা একাডেমিতে

মাত্র এক দশক আগের কথা। বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা তখন শুধুমাত্র বাংলা একাডেমি চত্বরে হতো। মেলাকে ঘিরে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস একাডেমি প্রাঙ্গণ লেখক, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলায় মুখরিত থাকত। বই আর সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের ভিড়ে স্টল ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কেনা ওই সময় দুষ্কর। আবার সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এতে সংকুলান না হওয়ায় ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমির পাশাপাশি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও স্থানান্তর করা হয় বইমেলা। এরপর থেকেই পাল্টে যায় মেলার চিত্র। বর্তমানে দুই স্থানেই মেলা বসলেও এখন মূল আকর্ষণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

আগের মেলা আর এই মেলা নিয়ে কথা বলেন লেখক কবি নাছিমা খান বকুল। তিনি বলেন, আমাদের আগের সময় থেকে বলি। টিএসসি, দোয়েল চত্বরে তখন একটা জৌলুস ছিল। তারপর এখানে দীর্ঘ একটা জায়গায় মেলাটা আসার পর চিত্রটাই পাল্টে গেল। এখান থেকে অন্য কোথাও বইমেলা করার কথা ভাবা যায় না। সময়ের সঙ্গে প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠান বাড়ছে, লেখক-সাহিত্যিক বাড়ছে। এই জায়গাটা ছাড়া আর কোথাও এত সুন্দর করে সবকিছু হবে না। এখাসে সবাই আসে, সব ধরণের মানুষ আসে।

উদ্যানের বাইরে মেলা চলে গেলে তার গুরুত্ব হারাবে বলে মনে করেন অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক। তিনি বলেন, গত সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত ছিল এখানে আর মেলা হবে না। এবার অনেককিছুর পর এখানেই মেলাটা হলো। উদ্যান ছাড়া বইমেলা হওয়ার সুযোগ নেই। এর বাইরে চলে গেলে মেলা তার গুরুত্ব হারাবে।

নিষ্প্রাণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ

সরেজমিনে রবিবার বিকালে দেখা গেছে, লেখক, প্রকাশক আর পাঠকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যখন মুখর রয়েছে তখনই ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এখানে বেশ কিছু স্টল থাকলেও নেই পাঠক দর্শনার্থীদের আনাগোনা। বলা যায় অনেকটাই নিষ্প্রাণ সেখানকার পরিবেশ। খুব প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ এদিকে যান না। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক স্টলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বাংলা একাডেমি চত্বর। তবে এবার বাংলা একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুথানে উঠে স্লোগানে সাজানো হয়েছে, যা ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্টলের কর্মীরা জানান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার মূল মঞ্চ থাকায় কিছু দর্শনার্থী মূল মঞ্চের অনুষ্ঠানে এসে এদিকে ঢু মারেন। তাছাড়া খুব একটা পাঠক এদিকে আসেন না।


ইত্যাদি প্রকাশনার প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, বাংলা একাডেমিতে আসলে মূল ধারার সেই বইগুলো নেই। এখানেই আছে। দেশের সার্বিক পরিবর্তন হলেও নতুন কিছু হয়নি। স্টল বিন্যাস আগের মতোই আছে। আগেও উদ্যানেই ভীড়টা বেশি থাকতো।

গত বছর শঙ্কা ছিল এ বছর মেলা উদ্যানে হবে কি না, যদিও বাংলা একাডেমি জানায় স্থান না পেলে একাডেমির সামনের টিএসসি-দোয়েল চত্বরের রাস্তায় মেলা করা হবে। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া মেলা প্রাণহীন বলেই মনে করে পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা।

মেলায় বই কিনতে এসেছেন শবনম শায়লা। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন মেলাকে ধারণ করছে। প্রকৃতি, খোলা আকাশ, স্বাধীনতা স্তম্ভ, জলাশয়সহ অন্যরকম একটা পরিবেশ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বইমেলার মূল আকর্ষণ হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তাই সবাই এখানে ভিড় করছেন। বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী দুটিই আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটির সঙ্গে ভাষা আর অন্যটির সঙ্গে স্বাধীনতার স্মৃতি জড়িত। কিন্তু সোহরাওয়ার্দীকে বিশেষভাবে ভালো লাগার কারণ এর সৌন্দর্য।

আজকের মেলার চিত্র

রবিবার প্রথম কর্মদিবস থাকলেও মেলা দ্বিতীয় দিনেও মেলা ছিল বেশ জমজমাট। দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কর্মময় দিনেও মেলা উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই ছিল পাঠক-দর্শনার্থীদের আনাগোনা। বিকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে পাঠকদের সমাগম বাড়ে।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, এবার এখন পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ৯টা। আরও অনেক আসবে। সব বই এখনো এসে পৌঁছায়নি। সিরিয়াস বইগুলোই তরুণরা বেশি কিনছে, পাশাপাশি উপন্যাসের দিকেও তরুণদের ঝোক আছে। গতকালের থেকে মানুষের সমাগম বেশি হলেও কর্মদিবস অনুযায়ী ভালো।

তবে মেলায় ঘুরে দেখা যায় এখনো মেলার স্টলের কাজ শষ হয়নি। অনেক প্রকাশনায় নতুন কোনো বই আসেনি। অনেক প্রকাশনায় এলেও হাতেগোনা কয়েকটা বই দেখা যায়। অলস সময় পার করতে দেখা যায় অনেক স্টলের কর্মীদের।


রবিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩টি। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হেলাল হাফিজের রাজনৈতিক পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কুদরত-ই-হুদা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মৃদুল মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন সুমন রহমান।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি রাসেল রায়হান, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন শফিক এবং শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি হাসান হাফিজ এবং জাকির আবু জাফর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবণী এবং শিপন হোসেন মানব। সুমন মজুমদারের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সঙ্গীতমঞ্জুরী শিল্পীগোষ্ঠী’-র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন, প্রিয়াংকা গোপ, ইসরাত জাহান, মিজান মাহমুদ রাজীব, মো. মাইদুল হক এবং নাফিজা ইবনাত কবির। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শিমুল বড়ুয়া (তবলা), রাজিব আহমেদ (কী-বোর্ড), মো. মেজবাহ উদ্দিন (অক্টোপ্যাড), সাইদ হাসান ফারুকী (লীড গীটার), পল্লব দাস (বেইজ-গীটার)। 

সোমবারের আয়োজন

সোমবার, বইমেলার তৃতীয় দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল তিনটায়। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘হায়দার আকবর খান রনো’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন এবং জলি তালুকদার। সভাপতিত্ব করবেন দীপা দত্তআলম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা