দেখতে সুন্দর এ ফলটি গ্রীষ্মকালে মেলে যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। বাঙ্গির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা জেনে নিই-
দেশি ফল বাঙ্গি অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকলেও ফলটি খুব বেশি সুস্বাদু না হওয়ায় অনেকের আবার অপছন্দের তালিকায়ও রয়েছে। কিন্তু পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এ ফলটির রয়েছে অনেক উপকারিতা। লাইফস্প্রিংয়ের পুষ্টিবিদ নিগার সুলতানা বলেন, ‘বাঙ্গি ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি ফল। গরমে শরীরের জন্য যা অত্যন্ত উপকারী।’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফলটি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়Ñবেলে ও এঁটেল। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে কিছুটা বালু বালু লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলক মিষ্টি।
পুষ্টি উপাদান
বাঙ্গির প্রায় ৯০ শতাংশই জলীয় অংশ। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এ ছাড়া বাঙ্গিতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
উপকারিতা
- বাঙ্গি থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পানি, যা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীর ঠান্ডা রাখে।
- গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। বাঙ্গি এ পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে এবং শরীর হাইড্রেটেড রাখে।
- গরম ও অতিরিক্ত রোদের কারণে সানবার্ন, ফিট হাইপার পাইরেক্সিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। বাঙ্গির রস এসব সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। ফলে এ ফল শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এ ফলে রয়েছে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই মানুষের জন্য বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বাঙ্গি বিশেষ উপকারী ফল।
- বাঙ্গিতে কোনো চর্বি নেই। যারা দেহের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিশেষ চিন্তায় ভোগেন, তারা এ ফল খেতে পারেন নির্দ্বিধায়। দেহের ওজন কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাঙ্গির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
- বাঙ্গিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
- বাঙ্গিতে চিনির পরিমাণ রয়েছে খুব কম, তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
- বাঙ্গিতে প্রচুর ফাইবার থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। অর্থাৎ হজমশক্তি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়ক বাঙ্গি।
- বাঙ্গিতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টের রোগীরা শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স করার জন্য খাদ্যতালিকায় বাঙ্গি রাখতে পারেন।
- বাঙ্গিতে রয়েছে ভিটামিন বি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটল। এ উপাদান নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়।
- বাঙ্গিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত এবং হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধে সাহায্য করে।
- অ্যাসিডিটি, খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে বাঙ্গি।
- ত্বকের ব্রণ কিংবা একজিমা সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য বাঙ্গি অনেক বেশি উপকারী। বাঙ্গি ব্লেন্ড করে একটি পাতলা কাপড়ে ছেঁকে রসটুকু বের করে নিন। এ রস আপনি লোশনের মতো ব্যবহার করতে পারেন। এতে ব্রণ ও একজিমার সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।
যেভাবে খাবেন
বাঙ্গি কেটে ছোট ছোট টুকরো করে অথবা শরবত বা স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন। অনেকেই বাঙ্গিতে চিনি মিশিয়ে খান। চিনি দিয়ে খেলে বাঙ্গির উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় না। কারণ চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরবত বা স্মুদি তৈরির ক্ষেত্রেও চিনি পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে চিনির বিকল্প উপাদান যেমন গুড় অল্প পরিমাণে যোগ করা যেতে পারে।
সতর্কতা
বাঙ্গির তেমন কোনো অপকারিতা নেই। কিন্তু অপকারিতা নেই মনে করে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ অতিরিক্ত বাঙ্গি খেলে সুগারলেভেল ওভারলোড হতে পারে। এ ছাড়া যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে, তাদের বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। কারণ কিডনি রোগীদের অতিরিক্ত পটাশিয়াম নেওয়ার ক্ষমতা কম।