নতুন কাপড়ের বাহারি ঘ্রাণ, চকচকে র্যাম্প, মডেলদের আনাগোনা, ডিজাইনারদের ব্যস্ততা, ফ্যাশনপ্রেমীদের হইচই—সব মিলিয়ে সেই চিরচেনা চিত্র। দুই বছর পর আবার মহাসমারোহে ফিরল ল্যাকমে ফ্যাশন উইক। ১২ অক্টোবর মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘এফডিসিআই ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২২’।
পাঁচ দিনব্যাপী এ জমজমাট আয়োজনে নামিদামি ডিজাইনার আর বলিউড তারকারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ডিজাইনারদের ব্যতিক্রমী আয়োজন, তারকাদের দ্যুতি, দেশ-বিদেশের ফ্যাশনপ্রেমীদের রংবেরঙের পোশাক—সব মিলিয়ে জমজমাট ছিল ফ্যাশনের এ মহোৎসব। বিয়ের ট্রেন্ডি পোশাক, রাজস্থানি সাবেকি এমব্রয়ডারির সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন, সুতির হালকা পোশাকসহ আরও কিছু সংগ্রহ নিয়ে এবারের আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন নবাগত ডিজাইনাররা।
প্রতিবারের মতো এবারের ফ্যাশন উইকের প্রথম দিনের আয়োজক ছিল নামকরা ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (আইএনআইএফডি)। ডিজাইনার অনামিকা খান্নার পোশাক দিয়ে শুরু হয় এবারের আয়োজন। আলোর ঝরনা ও আগুনের ফুলকির মধ্যে তার নকশা করা পোশাক পরে ‘ফাউন্টেন অব জয়’তে হেঁটেছিলেন মডেলরা। আরও ছিল থ্রিডি ফুলের নকশাসহ র্যাপ পোশাক, পায়জামা সেট, জ্যাকেট আর সাদা কুর্তার বাহার।
ল্যাকমের আসরে প্রতি বছরই একঝাঁক নবীন ডিজাইনারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এবারও ‘জেন নেক্সটের’ মাধ্যমে বেশকিছু নবাগত ও প্রতিভাবান ডিজাইনারকে নিয়ে এসেছিল এই ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান। নবীন ডিজাইনার সোমিয়া গোয়েল ‘নিউ লাইট’ সংগ্রহের মাধ্যমে ভেগান ফেব্রিক, পিস সিল্ক, কাপ্রো, ব্লেন্ড ফেব্রিকের ওপর পাশ্চাত্য আর বেশকিছু শাড়ি প্রদর্শন করে। ডিজাইনার অসীম কাপুর আর পূজার ‘আমবি’ সংগ্রহ ছিল সাধুসন্ত দ্বারা অনুপ্রাণিত। আয়োজনে ছিল ক্রেপ, মাশরুম টুইল, অ্যাপ্লিক, জারদৌসি আর সূক্ষ্ম জরির কাজ।
টেকসই ফ্যাশনের আধিপত্য
ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে প্রতি বছর উদযাপিত হয় ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন ডে’। এবারের ল্যাকমের প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল সাবেকি শিল্পকলা, হাতে বোনা তাঁত, হস্তশিল্পের বাহার। ডিজাইনার স্বাতী কাপুর গ্রিক দেবতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ‘ভেনাস’ শিরোনামের সংগ্রহ নিয়ে মঞ্চে এসেছিলেন। হালকা ওজনের চান্দেরি, সেল্ফ স্ট্রাইপ চান্দেরি, মোলায়েম খাদি, মূল কাপড়ের ওপর ব্লকপ্রিন্ট, হাতে তৈরি এমব্রয়ডারি, পুঁতির বাহার তুলে ধরেছিলেন স্বাতী। ডিজাইনার দীক্ষা খান্না উপস্থাপন করেন হাতে বোনা চান্দেরি, খাদি ডেনিমের মিলনে ওয়েস্টকোট, ঘরে পরার রোব, শর্টস, চাপা পেনসিল স্কার্ট, আরামদায়ক জ্যাকেট, ক্রপড ব্লাউজের বাহারি সব পোশাক। ‘জামবান জার্নাল ২.০’ তে জামদানি আর বাঁধনির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন ডিজাইনার ঋদ্ধি জৈন।
সফরকালীন ফ্যাশন
ডিজাইনার রেবি জিন্দালের নকশায় দেখা গেছে ফরাসি চেক আর পদুচেরির ক্যাকটিশিল্প। এমনকি সমুদ্রতটে বিয়ের জন্য কনের পোশাকও ছিল তার সংগ্রহে। সমুদ্রতটে পুরুষের পোশাক হিসেবে ফুলেল রঙিন শার্ট, শর্টস, সমুদ্রের শহরে পরার রোব, টিউনিক আর লুঙ্গি। দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত নকশা ছিল ডিজাইনার ইশা আমিনের সংগ্রহে। তিনি পরিবেশন করেছিলেন ভ্রমণকালীন পোশাকের এক বর্ণাঢ্য সংগ্রহ। এক নয়নাভিরাম আয়োজন রেখেছিলেন ডিজাইনার রীনা সিং। তার সংগ্রহে ছিল গরমে আরামদায়ক আর ভ্রমণ উপযোগী পোশাকের বৈচিত্র্য।
উৎসবের বাহারি আয়োজন
ডিজাইনার শান্তনু ও নিখিল উন্মোচন করেন দাওয়াত এবং উৎসবের পোশাক। ডোরি কাজের মধ্যে বারাক লেস এমব্রয়ডারি, ক্রিস্টাল আর পাথরখচিত লেহেঙ্গার বাহার ছিল তাঁদের নকশা করা পোশাকে। ভারতের সাবেকি নানা শিল্পকলা আধুনিকতার রঙে রাঙিয়ে তুলেছিলেন ডিজাইনার অঞ্জু মোদি। তার করা ‘দময়ন্তী’ সংগ্রহ যেকোনো প্রজন্মকে আকর্ষণ করবে। ডিজাইনার পায়েল সিংঘলের সংগ্রহের লেহেঙ্গা, গাউন, কলিদার সরারা, চোলি, রাফেলড ব্লাউজের ওপর জারদৌসি, অ্যাপ্লিক, মুকাইশ, উলের সুতার কাজ ছিল প্রশংসনীয়। ডিজাইনার গৌরব গুপ্তা আগামী প্রজন্মের দাওয়াতের পোশাকের এক অভিনব প্রদর্শন করেছেন। তাঁর এ আয়োজনে কালো, গাঢ় নীল, সাদা পোশাকের ওপর সিকোয়েন্স, গ্লিটারের কারুকাজ ছিল অনবদ্য।
ল্যাকমের এবারের আসরে শেষ রাতে ফ্যাশন ডিজাইনার রাজেশ প্রতাপ সিংয়ের পোশাক পরে র্যাম্পে হেঁটেছিলেন বলিউড নায়িকা ম্রুণাল ঠাকুর। তার পরনে ছিল কলারওয়ালা সাদা ফুলহাতা শার্ট আর শাড়ি-প্যান্ট।
প্রবা/দেবি/জেও