অটোমোবাইল
শরিফুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৬ পিএম
সময়ের প্রয়োজনে বেড়েছে গাড়ির চাহিদা। দাম কম থাকায় অনেকে ঝুকছেন হাইব্রিড গাড়ির দিকে। এই আয়োজনে তাই থাকছে পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির।
মাহমুদুল হাসান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বার্থে তাকে সময়মতো অফিসে পৌঁছতে হয়। আর তাতেই ঘটে নানা বিপত্তি। তার মতে, সকালে গণপরিবহনে অফিস যাতায়াতের জন্য প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। প্রায়ই সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে বেগ পেতে হতো। তবে তিনি জীবনের প্রথম যে গাড়িটি কিনেছেন, সেটি পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ি। টয়োটা এক্সিও নামে এ গাড়িটি তিনি প্রায় তিন বছর ধরে চালাচ্ছেন। তিনি জানান, যেসব গাড়ি জীবাশ্ম জ্বালানি বা তেলের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে চলতে পারে, সেগুলোকে হাইব্রিড গাড়ি বলা হয়ে থাকে। জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত ও হাইব্রিড গাড়ি দুটো দুই প্রযুক্তির। হাইব্রিড গাড়িতে একটি ব্যাটারি থাকে ইঞ্জিনের সঙ্গে আর একটি ব্যাটারি থাকে হাইব্রিড ব্যাটারি। হাইব্রিড ব্যাটারি চার-পাঁচ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত সাপোর্ট দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণ কমাতে হাইব্রিড গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে শুল্কহার কমানোর পর এ ধরনের গাড়ির দাম কমার পাশাপাশি এর চাহিদাও বেড়েছে বলছেন গাড়ি ব্যবসায়ীরা। গাড়ি কেনার সময় দেখা যায় এর নিঃসরণ হার কেমন। কম নিঃসরণ হয় এমন গাড়িই পরিবেশের জন্য ভালো। যুক্তরাজ্যে ডিজেলচালিত গাড়ি দিন দিনই কমছে। সে দেশের সরকার ২০৪০ সাল নাগাদ ডিজেলচালিত গাড়ি ও ভ্যান বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছে।
প্রকৌশলী ইমরান খানের ব্যক্তিগত গাড়িটিও হাইব্রিড। তিনি জানান, হাইব্রিড গাড়ির শুল্কহার কমায় এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে এ ধরনের গাড়ি কেনার প্রবণতা বেড়েছে। তিনি বলেন, গাড়ি কেনার আগে একটা ভীতি ছিল যে, হাইব্রিড কিনলে এর পার্টস পাব কিনা, ব্যাটারির কী হবে ইত্যাদি। কিন্তু এখন যন্ত্রাংশ বেশ সহজলভ্য হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে গাড়ি মেরামতের কাজ যারা করেন, তাদের অধিকাংশই এখন হাইব্রিড গাড়ি মেরামত এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে শিখেছেন। ইমরান খান রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড গাড়িটি কিনেছিলেন ১৮ লাখ টাকায়। তবে তিনি হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তাকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এখন হাইব্রিড গাড়ির জন্য উপযুক্ত মেকানিক এবং গ্যারেজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বাড়লেও চাহিদার তুলনায় তা এখনও কম। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেও মাঝেমধ্যে সমস্যার মুখে পড়তে হয়।
হাইব্রিড গাড়ির সবচেয়ে বড় সুবিধাÑ এতে তেল বা গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি কম প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের গাড়ির ব্যাটারি আলাদাভাবে চার্জ দেওয়ার মতো অবকাঠামোর অভাব থাকায় সুবিধা পুরোপুরিভাবে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে টয়োটা জাপানের বাজারে নিয়ে আসে প্রিয়াস নামের একটি হাইব্রিড গাড়ি। এতে একটি ছোট গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের পাশাপাশি রয়েছে একটি ইলেকট্রিক মোটর। উন্নতমানের কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে যখন প্রিয়াসের ইলেকট্রিক ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়, ঠিক তখনই শুধু এটি গ্যাসোলিন ইঞ্জিন ব্যবহার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ ধরনের হাইব্রিড গাড়ি প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় হোন্ডা। এ ধরনের পরিবেশবান্ধব গাড়ির উৎপাদন উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশে ইলেকট্রিক গাড়ির কর মওকুফ করে দেয়। ২০১০ সালে জেনারেল মোটরস শেভরোলেট ভোল্ট নামক একটি হাইব্রিড গাড়ির সঙ্গে বিশ্ববাসীর পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি একটানা ৩৫ কিলোমিটার গ্যাসোলিন এবং ব্যাটারি ব্যবহার করে চলতে পারত।