প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৬ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৬ পিএম
সংগৃহীত
গরম মসলার মধ্যে অন্যতম দারচিনি। রান্নাঘরের অতি পরিচিত এই সদস্য শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এ ছাড়া ত্বক এবং চুলের নানা সমস্যা সমাধানেও এটি কার্যকর। রূপচর্চায় নানাভাবে কাজে লাগাতে পারেন এই মসলাকে। থাকছে কিছু টিপস...
অ্যাকনের জন্য
অ্যাকনে, ব্রন কিংবা পিম্পলের সমস্যায় ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। অ্যাকনের ব্যাক্টিরিয়া ধ্বংস করে ত্বক পরিষ্কার করে এটি। রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি, অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি-সেপ্টিক উপাদান। যা অ্যাকনে নির্মূল করার পাশাপাশি ত্বকের লালচে ভাব দূর করতেও সাহায্য করে। সামান্য দারচিনি গুঁড়া এবং মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। সারা রাত রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের এক্সফোলিয়েশন
মিহি দারচিনি গুঁড়া প্রাকৃতিক এক্সফোলিটের হিসেবে দারুণ কার্যকর। উপরিভাগে জমে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ত্বক সজীব এবং উজ্জ্বল করে তোলে এটি। সামান্য টকদইয়ের সঙ্গে অল্প দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের রন্ধ্রের ভিতর জমে থাকা ময়লা হবে দূর। শুষ্ক ত্বক, অতিরিক্ত সিবাম, ধুলা, তেল প্রভৃতিও দূর হবে। ফেসপ্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। দারচিনি গুঁড়া ১ চা-চামচ, টকদই ২ চা-চামচ এবং সামান্য পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্লেমিশ কমাতে
ত্বকের কোষ তৈরির প্রক্রিয়া এবং রক্ত সঞ্চালনা দ্রুততর করে দারচিনি। তাই এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে পুষ্টির ঘাটতি থাকবে না। এতে ত্বকের রিপেয়ারিং প্রসেসও দ্রুত হয়। ফলে ত্বকে কোনো ক্ষত বা দাগ থাকলে সেটি তাড়াতাড়ি হালকা হয়ে আসে। সামান্য দারচিনি গুঁড়া এবং চন্দন বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট বা মিশ্রণটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে ঈষদুষ্ণ পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে একবার মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাক সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
সেলুলাইটের প্রতিকার
সেলুলাইট আজকাল খুব কমন একটি সমস্যা। ত্বকের ঠিক নিচের স্তরে ফ্যাট জমেই তৈরি হয় এই সেলুলাইট। একবার সেলুলাইট তৈরি হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন। তবে এটি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার খুব ভালো উপায় হলো দারচিনি। প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে পারেন এটি। ফলে শরীরে সেলুলাইট কম তৈরি হবে। সঙ্গে স্ক্রাব তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন। দারচিনির কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে তুলতে সঙ্গে যোগ করতে পারেন সামান্য কফিগুঁড়া। কফিও সেলুলাইট কমাতে কার্যকর। তাই এই উপাদানগুলো এক সঙ্গে ব্যবহার করলে খুব ভালো ফল পাবেন। সমপরিমাণে কফি এবং দারচিনি গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য নারকেল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি সেলুলাইটযুক্ত অংশে ম্যাসাজ করুন। সার্কুলার মোশনে ১০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করতে হবে। প্রতিদিন করতে পারলে ভালো। সম্ভব না হলে একদিন অন্তর ব্যবহার করুন।
এন্টি এজিং
বয়স মোটামুটি পঁচিশের কোঠায় পৌঁছালেই অনেকে ত্বক নিয়ে পড়েন নিত্যনতুন সমস্যায়। বলিরেখা, ফাইন লাইনস ইত্যাদি দেখা দিতে শুরু করে। তবে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে যত্ন নিলে ত্বকের এজিং প্রসেস ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তা ছাড়া নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক থাকবে সুন্দর। বলিরেখা, ফাইন লাইনস, কালো ছোপ অর্থাৎ ত্বকে বার্ধক্যের বিভিন্ন ছাপ প্রতিরোধে ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। এটি বাজারের কেমিক্যালযুক্ত যেকোনো প্রোডাক্টের তুলনায় ভালো। ত্বকে ফ্রি-র্যাডিকালের পরিমাণ কমিয়ে উজ্জ্বল করতে আজ থেকেই ব্যবহার করতে শুরু করুন এটি। পানিতে দারচিনি ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। চা হিসেবেও পান করতে পারেন। এ ছাড়া যেকোনো অ্যান্টি-এজিং ফেসপ্যাকে (ডিম, কলা, মধু, দুধ ইত্যাদি মিশিয়ে বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন) সামান্য দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।
গোড়ালি ফাটা সমস্যায়
শীতকালে ফাটা গোড়ালির সমস্যা নতুন নয়। অনেকে আবার সারা বছরই থাকেন এই সমস্যায়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি। প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে এটি যেমন কার্যকর, তেমনই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। তাই ফাটা গোড়ালির সমস্যাতেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন সিনামন এসেনশিয়াল অয়েল। তবে শুধু এসেনশিয়াল অয়েল কখনই ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করবেন না। ২ ফোঁটা সিনামন এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে ১ চা-চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ফেঁটে যাওয়া অংশে লাগিয়ে রাখতে পারেন। রাতে শোয়ার সময় এই মিশ্রণ পায়ে লাগিয়ে মোজা পরে নিন। প্রতিদিন রাতে এই তেল ব্যবহার করলে কয়েকদিনের মধ্যে গোড়ালি নরম এবং মসৃণ হয়ে উঠবে।
লিপ প্লাম্পার
শুষ্ক ঠোঁটেও ব্যবহার করতে পারেন এটি। ঠোঁটের উপরিভাগে জমে থাকা মৃত কোষ সরিয়ে নরম এবং মসৃণ করতে দারচিনির জুড়ি নেই। আধা চা-চামচ দারচিনি গুঁড়া এবং মধু মিশিয়ে লিপ স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁটে সামান্য ইরিটেশন হতে পারে। তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এতে রয়েছে সিনাম্যালডিহাইড; যা এর গন্ধ এবং এই ইরিটেশনের জন্য দায়ী। এই কমপোন্যান্ট লিপ প্লাম্পিংয়েরও কাজ করে। পাতলা ঠোঁটের জন্য বাজার থেকে দামি লিপ প্লাম্পার না কিনে দারচিনি গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। সামান্য দারচিনি গুঁড়া ঠোঁটে কয়েক মিনিট ঘষে টিস্যু পেপার দিয়ে ঠোঁট মুছে নিন।
স্ক্যাল্প পরিষ্কারে এবং চুলের গ্রোথ বাড়াতে
দারচিনির মিষ্টি গন্ধ স্ক্যাল্প ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করে। তাই শ্যাম্পুর সঙ্গে সামান্য দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন। অথবা পরিমাণমতো পানিতে আধা চা-চামচ দারচিনি গুঁড়া এবং ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি বোতলে ভরে স্ক্যাল্পে স্প্রে করতে পারেন। স্ক্যাল্প হালকা করে ম্যাসেজ করে নিন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এ ছাড়া দারচিনি রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি থাকে না। চুলের গোড়া হয় মজবুত এবং চুল পড়ার সমস্যাও কমে যায়।
প্রাকৃতিক চুলের রঙ হিসেবে
সেলুনে গিয়ে চুলে হাইলাইটস করানো সময়সাপেক্ষ। সঙ্গে হয় খরচ। বাড়িতে বসেই করতে পারেন স্যালুনের মতো হাইলাইটস। দারচিনি এবং মধু এক সঙ্গে প্রাকৃতিক হাইলাইটার হিসেবে কাজ করে। ব্যবহার করে নিজেই দেখে নিন ফল। সাধারণত সেলুনে যে ধরনের হাইলাইটার ব্যবহার করা হয় তার অন্যতম প্রধান উপকরণ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। আর দারচিনিতে প্রাকৃতিকভাবেই এই উপাদান মজুদ রয়েছে। তবে একা দারচিনিতে কিন্তু কাজ হবে না। আধা কাপ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ দারচিনি গুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে এই মিশ্রণ চুলের আগায় লাগাতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একবার এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রনজার হিসেবে
মেকআপ কিটে ব্রনজার না থাকলে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন দারচিনি গুঁড়া। বেশ ন্যাচারাল ফিনিশ আসবে। তবে শ্যাডো হিসেবে দারচিনি গুঁড়া ব্যবহার না করাই ভালো। অসাবধানতাবশত চোখে চলে যেতে পারে।