প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৩ পিএম
অবশেষে প্যারিসের ঐতিহাসিক ও মনোমুগ্ধকর স্থাপনা চ্যাপেল সেন্ট জন দ্য আর্কে পর্দা উঠলো জুরহেমের শরৎ/শীতকালীন ২০২৫ সংগ্রহ ‘সোলারিস’–এর। ঐতিহাসিক চ্যাপেলটির নান্দনিকতার সাথে জমকালো এই আয়োজন উপস্থিত সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল পুরোটা সময়।
ভোরবেলা আকাশের রঙ বদল থেকে শুরু করে সারা দিন ব্যাপী নানাভাবে বদলায় সূর্যের রঙ। সূর্যের কিরণ কীভাবে দীপ্তি ছড়ায়, কীভাবে সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় এর সবই কিন্তু গভীর পর্যালোচনার বিষয়। আর এই নিরীক্ষাধর্মী কাজটি সুনিপুণ হাতে পোশাকের গায়ে ফুটিয়ে তুলেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও জুরহেমের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনীর। পুরো সংগ্রহ জুড়ে ছিল বিলাসবহুল আমেজ, প্রতিটি নকশা ছিল নজরকাড়া।
‘সোলারিস’ সংগ্রহটি তৈরি করা হয়েছে ক্রমশ এক রঙ থেকে আরেক রঙে রূপান্তরের সম্মোহন আর সেই সঙ্গে টেক্সচার ও অলঙ্করণের এক মনোমুগ্ধকর মেলবন্ধনে। সাদা থেকে সোনালী, সোনালী থেকে গভীর সবুজ। রঙের বদলে ধরা পড়েছে সূর্যের আলাদা আলাদা মুহূর্তের সৌন্দর্য। ভোরের আলো ও সূর্যোদয় বোঝানোর জন্য বেছে নেয়া হয়েছে সাদা রঙ, যা ধবধবে সাদা মুক্তার নকশায় সজ্জিত। এরপর সোনালি রঙ সংযোজিত হয়েছে ঝলমলে বিডওয়ার্ক ও চকচকে স্টোন এমবেলিশমেন্টের মাধ্যমে, যা সূর্যের "গোল্ডেন আওয়ার"-এর উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করে। আরও খানিকটা অগ্রগতির সাথে সাথে সবুজ রঙ সোনালির সঙ্গে মিশে গেছে, যা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর সবুজ ভূদৃশ্যের অনুরূপ। অবশেষে, গভীর কালো রঙ সূক্ষ্ম অলঙ্করণ ও বিডওয়ার্কের মাধ্যমে রাতের আকাশের বিশালতাকে প্রতিফলিত করেছে। এই কাজগুলো করা হয়েছে দেশীয় সিল্ক ও বিদেশি কাপড়ে। বিড ও সূচিকর্মের অলংকরণে প্রতিটি পোশাক হয়ে উঠেছে নজরকাড়া। পুরো কালেকশনের প্রতিটি কাজ দেখলেই দক্ষতার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যায়। কেমন ছিল আয়োজন
শো শুরু হয় সাদা পোশাক দিয়ে, যা প্রশান্তি ও কমনীয়তার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। প্রথম মডেল মুক্তার রূপরেখায় সজ্জিত একটি লম্বা কেপ পরে আসেন, যা শুরুতেই সংগ্রহের সূক্ষ্ম কারুনৈপূণ্যের বার্তাটি সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। পুরুষদের পোশাকের সাজসজ্জায় মুক্তা ফুটে উঠতে থাকে, যা এতে সূক্ষ্ম জাঁকজমকপূর্ণ সৌন্দর্য যোগ করে।
সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ পুঁতির কাজ, পাথর আর সিকুইনের মাধ্যমে সোনালির দেখা মেলে সাদা পোশাকে। এরপর ধীরে ধীরে রানওয়ে ভেসে যায় সম্পূর্ণ সোনালি পোশাকের স্বর্ণালী আভায়। সেই আভায় বিকিরিত হয় শক্তি ও ঐশ্বর্য। নজরকাড়া এই লুকগুলো শোয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু মুহূর্ত রচনা করেছে। পুরো সংগ্রহে স্তরবিন্যাস বা লেয়ারিংয়ের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। টেইলর করা স্যুটের ওপর পরানো ছিল কোট আর পার্কা। ক্রপড জ্যাকেটের ব্যবহার স্ট্রাকচার্ড সিলুয়েটে দিয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সবুজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এখানে। এই রঙে পুরুষদের জন্য বন্ধগলা ও কর্সেট পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাককে নতুন করে আলোচিত করে তুলেছে। শো এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো স্থান করে নেয় এই সংগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। গতিশীল স্তরবিন্যাস বা লেয়ারিং এবং আভিজাত্যপূর্ণ কাপড়ের তৈরি পোশাক দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে দীর্ঘ সময়। শেষ লুকটি ছিল সাহসী সৃজনশীলতার মূর্ত প্রতীক। একজন মডেল পরেছিলেন পাথর বসানো একটি ভারী কাজের পুঁতি বসানো জ্যাকেট, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল এক দীর্ঘ, নাটকীয় ট্রেন।
জুরহেমের সৃজনশীল ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনির তাঁর এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানান: “ফ্যাশনের সূতিকাগার বলে পরিচিত প্যারিসের মতো শহরে জুরহেম ফল/উইন্টার ২৫ সংগ্রহ প্রদর্শন করেছে। এই সুযোগ সত্যিই অসাধারণ। তাও আবার প্যারিস ফ্যাশন উইক চলাকালীন সময়ে আমি এই সংগ্রহ উপস্থাপন করতে পেরেছি। এই স্থানের পুরো আবহে যে উচ্ছ্বাস অনুভূত হচ্ছে, তা আসলেই আমার কল্পনার অতীত। ফ্যাশন, সৃজনশীলতা আর এবং শিল্পনৈপূণ্য প্রকাশে যেন ডুবে আছে গোটা প্যারিস শহর। অন্যদিকে এই ঐতিহাসিক চ্যাপেলে জুরহেমকে উপস্থাপিত হতে দেখার অনুভূতির আসলে কোনো ব্যাখ্যা হয় না। উপরন্তু দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল অভূতপূর্ব। সবাই আমাদের কাজকে সত্যিকার অর্থে ভালোবেসেছে এবং প্রশংসা করেছে। অসাধারণ সব ফ্যাশনব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, যাঁদের কাছ থেকে আমি সীমাহীন অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
জুরহেম প্যারিসে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আপ্লুত করেছে। সবসময়ই আমাদের সৃজনশীল শৈল্পিকতার মধ্যে এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছি আমরা। আর তার প্রতিফলন আমরা এমন এক জায়গায় এত জোরালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছি, যেখানে ফ্যাশনের প্রকাশে যেমন সাহসিকতা তেমনি পরিশীলিত আমেজের দেখা মেলে। সত্যিই মনে হচ্ছে আমরা আরও বড় কিছুর খুব কাছাকাছি আছি। এই অভিযাত্রা, এই যে বৈশ্বিক ফ্যাশনের জগতে নিজেদের উত্তরণই সবচেয়ে বেশি উচ্ছসিত করছে আমাদেরকে। আমার কাছে প্যারিস এক স্বপ্নের শহর; তবে এও আমি জানি এটা কেবলই শুরু।"
“এই অনুষ্ঠানটি হাউস অব ভেনডমের আয়োজনে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চ্যাপেল সেন্ট জন দ্য’আর্কের মতো স্থাপনার প্রাঙ্গণে এই আয়োজন যেন আমাদের ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সামিল”, বলেন মেহরুজ মুনির। জুরহেমের স্বতন্ত্র নান্দনিকতা আর সৃজনশীলতা প্যারিসে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। আর এই পুরো বিষয়টিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে “সোলারিস”। এই সংগ্রহ জুরহেম ব্র্যান্ডকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিতে দারুণ একটি উদাহরণ হয়ে থাকলো।