প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৭ পিএম
শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন। এই সুরের মূর্ছনায় চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে উদ্যোক্তা ভূমির মেলা আয়োজন শীতের হাওয়া।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সুনামকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় ফ্যাশনশিল্প খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও ডিজাইনারদের উন্নয়নে গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বরঙ উদ্যোক্তা ভূমি। বিশ্বরঙের কর্ণধার প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহার নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছে এই উদ্যোক্তা ভূমি। নকশা থেকে শুরু করে উৎপাদন এবং বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দিকনির্দেশনা প্রদান, প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে বিপণনে সহায়তা করা এবং সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে নতুন ও পুরোনো উদ্যোক্তাদের গুণগত উন্নয়নই উদ্যোক্তা ভূমির লক্ষ্য।
অন্তত ১ হাজার ৫০০ উদ্যোক্তা থেকে ৩০ জনকে বেছে নিয়ে উদ্যোক্তা নিয়ে আয়োজিত হয় এবারের প্রদর্শনী শীতের হাওয়া। ১৮ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে ছিল নানা আয়োজন। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল ২০ ডিসেম্বর বিশ্বরঙের ৩০ বছর পূর্তি উদ্যাপন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয় ব্যক্তিত্ব লেখক ও পরিচালক আবুল হায়াত ও তাঁর সহধর্মিণী শিরিন হায়াত, জনপ্রিয় মডেল ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ, অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ, নাতাশা হায়াত, শবনম ফারিয়া, হিমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকা তথা জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। সাত দিনের আয়োজনে প্রায় প্রতিদিনই ছিল আগ্রহী দর্শক ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ১৮ ডিসেম্বর সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী জুটি শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নিপা এবং অভিনয়শিল্পী ও স্থপতি অপি করিম, বয়ন উদ্যোক্তা নীলকমল বসাক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।পণ্যের অভিনব সমাহার আকর্ষণ করেছে ক্রেতাদের। আচারি আর দীঘলের স্টলে ছিল বেশ ভিড়, আমলকী, জলপাই, তেঁতুল, আমের ভিন্নধর্মী আচারের ফ্রি টেস্টিং সবাই উপভোগ করছিল। বিক্রিও হয়েছে বেশ। দেশীয় উপাদানে তৈরি গয়নার পসরা নিয়ে বসেছিল মিথিস আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস, মুয়াজ কালেকশন, আমি আমরা, দয়িতা। প্রচুর নবীন ও জেন–জি ক্রেতাদের দেখা গেল গলা, কান কিংবা আঙুলে পরে ঘুরছেন এসব দেশীয় গয়না। টি গার্ডেন, পিঠার আড্ডা, ওয়েল ফুডের স্টলে মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্রেতা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্মীরা। মাধবী মার্ট, জুট হ্যাভেনের পণ্য কিনছিলেন অনেকেই, প্রশংসাও করছিলেন ক্রেতারা। রিংকিস অ্যাট্যায়ারের মণিপুরি পণ্যের বিক্রি ছিল ভালো। আজুরার ন্যাচারাল ডাইয়ের কাজ, যাদুর হাটের প্যাচওয়ার্কের কাজ পছন্দ হয়েছে ক্রেতাদের।
কথা হয় বিশ্বরঙ উদ্যোক্তা ভূমির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মাসুমা আক্তার মিথিলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাত দিনের আয়োজনের শেষ দিনে এসে বলতে পারি, আমরা অনেকাংশে সফল। বিশ্বরঙের ৩০ বছর পূর্তির আয়োজনের অংশ হতে পারা অনেক আনন্দের। আমরা চাই এই যাত্রা চলতে থাকুক সামনের দিনগুলোতেও।’
প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল প্রবীণদের নিয়ে চারুকলা প্রাঙ্গণে বিশেষ চা–চক্র। সেখানে স্মৃতিচারণা মুগ্ধ করে উপস্থিত অতিথিদের। আয়োজন শেষে বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা ও তাঁর সহধর্মিণী শম্পা সাহা উত্তরীয় পরিয়ে সম্মানিত করেন এই প্রবীণদের।
বিপ্লব সাহা জানান, ‘তারকা থেকে সাধারণ মানুষ সবার ভালোবাসায় গড়ে উঠেছে আজকের বিশ্বরঙ। প্রবীণদের সম্মান জানাতে আলাদা কালেকশন “শ্রদ্ধা” রয়েছে। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বিশ্বরঙ চেষ্টা করেছে মানুষের পাশে থাকার। আমার অবিশ্বাস্য লাগছে, মনে হচ্ছে এই তো সেই দিন শুরু করেছিলাম, দেখতে দেখতে ৩০ বছর পার হয়ে গেল। এর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক মানুষের আদর, ভালোবাসা, আস্থায় আজকের বিশ্বরঙ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
বিশ্বরঙের ৩০ বছর নিয়ে বিপ্লব আরও বলেন, ‘যারা স্বপ্নবাজ মানুষ, তাদের সব উদ্যোগ সতেজ থাকে। কারণ, একটার পর একটা স্বপ্ন তৈরি হতে থাকে, তাই ক্লান্তি আসে না। আজকের এই আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না, যদি না দেশের মানুষের ভালোবাসা পেতাম। বিশ্বরঙ পরিবার অনেক বড়; এখানে অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, তারকা, ডিজাইনার, ভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আর বয়নশিল্পীরা এই পরিবারের অংশ। যাঁরা বিভিন্ন উৎসবে বিশ্বরঙের পোশাকের জন্য অপেক্ষা করেন। আমি তাঁদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি চারুকলার কাছে কৃতজ্ঞ, এখানে পড়াশোনার সুবাদেই আমি আজ এমন কিছু করতে পেরেছি। সে কারণেই ৩০ বছর পূর্তির এই আয়োজন চারুকলা প্রাঙ্গণে করা। একদিন আমি থাকব না কিন্তু বিশ্বরঙ থাকবে, সবার ভালোবাসায় এগিয়ে যাবে।’
এর আগের দিন ছিল মূলত আনুষ্ঠানিক সমাপনী। এদিন উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনয় ব্যক্তিত্ব দিলারা জামান ও সংগীতশিল্পী সোমনূর মনির কোনাল। এবারের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে প্রশংসাপত্র তুলে দিয়ে সম্মান জানানো হয় উদ্যোক্তাদের। প্রশংসাপত্র তুলে দেন দুই অতিথি।
উদ্যোক্তা ভূমির পথচলা শুরু হয় গেল সেপ্টেম্বরে। বিশ্বরঙের বনশ্রী আউটলেটে তিন দিনের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। ‘শরৎ হাওয়া’ শিরোনামের সেই প্রদর্শনীর সাফল্যই বলতে গেলে দ্বিগুণ পরিসরে শীতের হাওয়া আয়োজনে সহায়ক হয়েছে। শরৎ হাওয়ার মতো শীতের হাওয়াতেও প্রচারণা সহযোগী ছিল হাল ফ্যাশন।