× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এমসি কলেজে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’

ত্বরান্বিত তদন্ত, মন্থর বিচারকাজ

কাওসার আহমদ, সিলেট

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৮ পিএম

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১২ পিএম

সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত আট আসামি। সংগৃহীত ফটো

সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত আট আসামি। সংগৃহীত ফটো

স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে– জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে এই ঘটনার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন শাখা ছাত্রলীগের নেতা। অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের মধ্যে তিনজন হয়েছেন বহিষ্কার। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

শিক্ষাঙ্গনে আবারও ধর্ষণকাণ্ডের অভিযোগ– শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের সঙ্গে সমালোচনার ঝড় তুলছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সামনে এসেছে পুরোনো এমন ন্যক্কারজনক ঘটনাও। তিন বছর আগে সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের  সেই ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার তদন্ত শেষ হয় দুই মাসের মাথায়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলেও তার পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি এখনও। দ্রুত সময়ে তদন্ত শেষ হলেও বিচার কাজ চলছে ধীর গতিতে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাইলে হস্তান্তর করার জন্য উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে দক্ষিণ সুরমার এক যুবক তার নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছিলেন। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন তারা। এ সময় কয়েকজন যুবক তাদের ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে তাদের জিম্মি করে গাড়িতে তুলে কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তারা।

ঘটনার দুই মাস ৮ দিন পর ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর আটজনকে অভিযুক্ত করে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলায় সাক্ষী রাখা হয়েছে ৫২ জনকে। ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ, গণধর্ষণ ও গণধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আটজনের বিরুদ্ধে একই আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর পর দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনও মামলাটির স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। 

মামলাটির দ্রুত বিচারকাজ শেষ করে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা।

তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনা লজ্জাজনক ও ন্যক্কারজনক। এ ঘটনার বিচার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি হলে সমাজে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে, আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আট আসামিকে গ্রেপ্তারের পর সবার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সিলেট ওসমানী মেডিকেলের ওসিসির মাধ্যমে ডিএনএ সংগ্রহ করে ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে পাঠায় পুলিশ। নমুনা সংগ্রহের প্রায় দুই মাস পর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন এসে পৌঁছায়। আট আসামির সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন।

অভিযুক্তরা হলেন– সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার বাসিন্দা সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের অর্জুন লস্কর, দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের রবিউল ইসলাম, কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) মাহফুজুর রহমান মাসুম, সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মিজবাউল ইসলাম রাজন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়– আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সি ওই নারীকে সরাসরি ধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। আট আসামির সবাই ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের সক্রিয় কর্মী।

ঘটনার দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর চেয়ে ২০২২ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত নির্দেশ দেন– এক মাসের মধ্যে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে হবে। এরপর এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

এ ব্যাপারে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুনেছি উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি বদলির জন্য। কিন্তু মামলাটি আমাদের আদালতে আসেনি।’

বিচারকাজে ধীরগতির জন্য বাদী ও স্বাক্ষীদের অবহেলা রয়েছে বলে মনে করেন সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী। তা ছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা হস্তান্তরের নির্দেশ পরে স্থগিত করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

পিপি ইশতিয়াক আহমদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভিকটিম ও সাক্ষী, কেউই ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকেন না। চলতি মাসেও মামলার নিয়মিত ধার্য তারিখ রয়েছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা