প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২ ১৮:১২ পিএম
ফাইল ফটো
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ নিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে জমা দেওয়া তিনটি প্রতিবেদনকেই ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য পেশ করেন।
হাইকোর্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন বিষয়ে বলেন, ‘আপনাদের প্রতিবেদনে দেখালেন, ই-অরেঞ্জ অনেক টাকা উত্তোলন করেছেন, তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল? তার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা? ওই টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। আপনাদের এই প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এই প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। এটা খাপ ছাড়া।’ আর সিআইডির রিপোর্টের বিষয়ে আদালত বলেন, ‘তাদের রিপোর্টেও পরিষ্কার ও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিপোর্টে তারা পাশ কাটিয়ে গেছে।’
ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে গত বছর মার্চে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে এ বছর ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে প্রতিবেদন চান।
রিটকারীদের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম আদালতকে বলেন, ‘রিপোর্টে সব তথ্য সঠিকভাবে আসেনি। এজন্য পূর্ণাঙ্গ একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাইছি। একটা ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে এত টাকা লেনদেন হচ্ছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে, এরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে কি না সেটা তো এনবিআরের দেখা উচিত। আর বিএফআইইউর কাজটা কী?’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘এসব লোকের কারণেই ঝামেলা হচ্ছে। দেশে কত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাস্তাঘাটের কী উন্নয়ন হয়েছে। দেখলে মনে হবে না দেশের মধ্যে আছি। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের কারণে এখন সংকট তৈরি হচ্ছে।’ আদালত বলেন, ‘আমরা কাজ করছি জনগণের জন্য। দেশ সোনার বাংলা হোক সেটা আমরা চাই।’
এরপর হাইকোর্ট ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীনের ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে বিএফআইইউ দেওয়া প্রতিবেদন সংশোধন করে ফের দাখিল করতে বলে আদেশের জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদেশের বিষয়ে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বিএফআইইউর প্রতিবেদনে সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজসহ আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, তাদের লেনদেন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য, এছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বর্ণনাসহ সবকিছু পরিষ্কার করে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আদালত আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন করে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশপ্রধানকে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না তা জানাতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।