× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ই-অরেঞ্জ : বিএফআইইউ প্রতিবেদন

প্রবা প্র‌তিবেদন

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩৯ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীন, তার ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ গ্রাহকদের ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ১৩টি ব্যাংক থেকে এসব টাকা সরানো হয়েছে। বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য এসেছে।

বুধবার (২ নভেম্বর) এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান।

তিনি বলেন, বিএফআইইউ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীনসহ তিনজন এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে। আগামীকাল (৩ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার বা আগামী সপ্তাহে এই শুনানি হতে পারে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জ, অরেঞ্জ বাংলাদেশ ও রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৩টি হিসাব খুলে লেনদেন করা হয়। এসব হিসাবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন করা হয়েছে। এই সময়ে ১১১১ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা জমা ও ১১০৯ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ২২২১ দশমিক ৪২ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। আর সোনিয়া ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের নামে ২৪টি হিসাবে লেনদেন করা হয়। ২৪টি হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি প্রায় ১২০ কোটি টাকার লেনদেন করেন। গোয়ান্দা সংস্থা সিআইডির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পরিচালিত সব হিসাব লেনদেন ২০২১ সালের ২৫ জুলাই স্থগিত করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে ই-অরেঞ্জের মালিকনায় সোনিয়া মেহজাবিন থাকলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা (পরে বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন নাহার বিথির নামে হস্তান্তর করা হয়। সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও স্থানান্তর করেন। তারা মোট ১৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে স্থানান্তর/উত্তোলন করেন। গ্রাহকরা অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলেও অর্ডারের পণ্য সরবরাহ না করে সেই টাকায় ব্যক্তিগত সম্পদ ক্রয় করেছেন উদ্যোক্তা, যা প্রতারণার শামিল।

ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত টাকা থেকে বিভিন্ন মার্চেন্টকে সময়ে সময়ে মোট প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এসব মার্চেন্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অল জোনকে ১৮৮.৬৪ কোটি টাকা, বাজাজ কালেকশনকে ১২৬.৩৭ কোটি টাকা, বাবু টেলিকমকে ৮.৭৩ কোটি টাকা, টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডকে ৯.৫৩ কোটি টাকা, এনবিএস ডিস্ট্রিবিউশনকে ১৮.১৭ কোটি টাকা, বাইক ভ্যালি ঢাকা-কে ২.৩৪ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডকে ১৮.৯ কোটি টাকা, এসিআই লজিস্টিকস সার্ভিসেসকে ৩০.৪১ কোটি টাকা, বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডকে ৫.৩৩ কোটি টাকা, গিয়ার এক্স বাংলাদেশকে ১.৮৩ কোটি টাকা, নিলয় মটরসকে ১.৬৯ কোটি টাকা, আজিয়াটা ডিজিটাল সলিউশনসকে ০.৭২ কোটি টাকা, একেএস গ্লোবাল ট্রেডিংকে ১.৫৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যালোচনা অংশে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জ শপ, অরেঞ্জ বাংলাদেশ ও রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক কম মূল্যে গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের লোভনীয় অফার দেওয়া হয়। প্রলুব্ধ করে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ডারের মূল্য বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। পরে জমা করা অর্থ থেকে বিভিন্ন মার্চেন্টকে পরিশোধ করার পাশাপাশি সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ টাকা উত্তোলন ও নিজেদের হিসাবে স্থানান্তর করেছেন এবং নিদের নামে স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করেছেন।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তিনটি কম মূল্যে পণ্য বিক্রির নামে গ্রাহকের অর্ডার করা পণ্যের দাম/টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে এসব মার্চেন্টের কোনো যোগসাজশ রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা আবশ্যক। মার্চেন্ট ছাড়া ই-অরেঞ্জ শপের হিসাব থেকে আমদাদুল হক মিলন, মুনতাছির মামুন, মহসিন রেজা চৌধুরী, ফজলুর হক, মো. জুবায়ের শিকদার, মো. কামরান হাসান, মো. রনি, ফায়মা চৌধুরী অদিতি, মো. মামুন, আনোয়ার হোসেন মামুন কর্তৃক ২৫.৯৪ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যার প্রকৃত সুবিধাভোগী কে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে চেক ক্লিয়ারিং ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে হিসাবধারী সোনিয়া মেহজাবিন ও তার ভাই শেখ সোহেল রানা কর্তৃক মোট ২.২৩ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যা খুবই সন্দেহজনক হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজের প্রতিষ্ঠান রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক হিসাবে ফান্ড ট্রান্সফার করে মোট ৯৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে মো. আফজাল হোসেন, মো. আরাফাত আলী, মো. তরিকুল আলম, সাকিবুল ইসলাম, রানা খান ও মো. হাবিবুল্লাহ জাহিদ নামের ছয়জন গ্রাহক গত মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলতি বছরের গত ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে প্রতিবেদন চান। 

রুলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত বনানী থানার সাময়িক বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বিথি আক্তারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানো ও অর্থপাচারের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বিথি আক্তারসহ অন্যদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে ক্ষতি অনুপাতে আবেদনকারীসহ অন্যান্য প্রতারিত গ্রাহকদের মাঝে সে টাকা বণ্টন বা বিতরণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

ওই আদেশ অনুসারে প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত সোহেল রানাকে গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত করে। ই-অরেঞ্জের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে বুধবার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা