প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২৫ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:২৪ পিএম
প্রতিবছর হজ করতে যান লাখ লাখ মুসল্লি। ফাইল ছবি
সরকার ঘোষিত ‘হজ প্যাকেজ- ২০২৩’ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং প্যাকেজ কেন কমিয়ে নির্ধারণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান ও অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন।
গত ২৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে হজের খরচ সংক্রান্ত একটি নোটিশ পাঠান। ওইদিন আশরাফ-উজ জামান বলেছেন, নোটিশে হজের মোট খরচ ৪ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সেখানে সরকার সাধারণ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘হজের মতো একটি ফরজ ইবাদতের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা বাধা সৃষ্টির নামান্তর। নোটিশ পাওয়ার পর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।’
রিটে বলা হয়েছে, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা, যা অনেক বেশি। এতে বোঝা যায় যে, সরকার হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়ির মালিকদের অনুকূলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘গেজেটে বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৪ টাকা, যা অনেক বেশি। এটা হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা। আর জমজম কূপের পানির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা খুবই আপত্তিকর। এই বরকতময় পানি বিক্রি করে কোনো সরকার আর্থিক সুবিধা নিতে পারে না।’
রিটে উল্লেখ করা হয়, গেজেটে বিমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে বর্তমান প্লেন ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ৭৬ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। প্রতিবছর সরকার হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে প্লেনের টিকিট কিনতে বাধ্য করে, যা ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোকে অবৈধ সুবিধা দেয়। এছাড়া প্রতি হজ গাইডের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অপ্রাসঙ্গিক। সরকার হজযাত্রীদের এই টাকা অযৌক্তিকভাবে পরিশোধ করতে বাধ্য করে।
রিটে আরও উল্লেখ করা হয়, বাড়ি ভাড়া, পরিবহন খরচ, স্বাস্থ্যবীমা, সার্ভিস চার্জ এবং জমজম কূপের পানিতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা বেআইনি ও অনৈতিক। উভয় সরকারই হজযাত্রীদের ওপর এই ধরনের ভ্যাট আরোপ করতে পারে না। কারণ হজযাত্রীরা ভ্রমণকারী নন, তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর মেহমান। এটি স্পষ্ট যে হজ প্যাকেজ প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি, যা হজযাত্রীদের সেবার জন্য তৈরি হয়নি। বরং এটি মুনাফা অর্জনের নগ্ন স্বার্থে হজযাত্রীদের শোষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই প্যাকেজের এসব কর্মকাণ্ড থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার ইসলামি চেতনা ও নৈতিকতা বজায় না রেখে বিপুল অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে।