প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:২২ পিএম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৫৯ এএম
নিহত স্কুলছাত্র তৌহিদুল ইসলাম। ফাইল ছবি
‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’-খ্যাত রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্কুলছাত্র তৌহিদুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলার সুবিচার নিশ্চিতে নিয়মিত তদারকি ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি আইনজীবী (পিপি), তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদারককারী সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) জনস্বার্থে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন (মানিক)।
২৬ নভেম্বর সকালে বসুন্ধরার ‘পি’ ব্লকের একটি ঝোপঝাড় থেকে উদ্ধার করা হয় কুরআনে হাফেজ ও ভাটারার ডুমনি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র তৌহিদুল ইসলামের গলাকাটা লাশ। তার আগে ২৩ নভেম্বর তৌহিদুলকে অপহরণ করা হয়। তৌহিদুল পরিবারের সঙ্গে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ডি ব্লকের বাড়িতে থাকত। তার বাবা মোহাম্মদ নবী হোসেন বসুন্ধরা গ্রুপের হয়ে জমি কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়। তৌহিদুলের ঘটনায় প্রথমে ভাটারা থানায় অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলা করেন তার বাবা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধারের পর সেটিকে হত্যা মামলা হিসেবে নেয় পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
তৌহিদুলকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে বসুন্ধরার নিজস্ব ও বিশ্বস্ত নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাবা নবী হোসেন জানিয়েছেন, অপহরণ করার পর ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তারা মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করেন। কিন্তু তারপরও ছেলেকে ফিরে পাননি। পরিবারের ধারণা, জুয়েলের একার পক্ষে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। জুয়েলের সঙ্গে আর কারা জড়িত সে তথ্য পেতে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। এরই মধ্যে ভাটারা থানা থেকে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।
হাইকোর্টের দেওয়া রুলে ভাটারা থানায় তৌহিদুলের বাবার করা মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ নিয়মিত তদারকির জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট আদালত, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, ডিসি গুলশান, ডিসি (ডিবি) গুলশান, আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাকে পাঠাতে বলা হয়েছে।
স্কুলছাত্র হত্যার ঘটনায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ রাজধানীজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বসুন্ধরার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী-বেষ্টিত আবাসিক এলাকায় তাদেরই নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় অনেকে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে।
তৌহিদুলের পরিবারের দাবি, জুয়েল রানা কাউকে না কাউকে আড়াল করছে। তার একার পক্ষে নিখুঁত এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তার নেপথ্যে বড় ধরনের চক্র জড়িত। সেই গডফাদার কে বা কারা, এটা জানা অত্যন্ত জরুরি। তাদের আশা, ডিবি পুলিশের সঠিক তদন্তে তৌহিদুল হত্যায় জড়িত প্রকৃত গডফাদারকে সামনে আনা যাবে।
তৌহিদুলের মা চম্পা বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’একজন মা বলতে পারে তার কোন ছেলে কেমন। আমি জানি আমার ছেলে সম্পর্কে। একটা খোলা মাঠে কারও একার পক্ষে তাকে খুন করা সম্ভব নয়। সে যদি চিৎকার করত বা দৌড়ে পাশে যে মাদ্রাসায় হেফজ সম্পন্ন করেছে ওখানে চলে আসত, তাহলেও তাকে মারা সম্ভব ছিল না। সেখানে সবাই আমার ছেলে ও আমার স্বামীর পরিচিত। আমাদের সন্দেহ সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে আরও লোকজন জড়িত ছিল। সে মুখ খুলছে না। সে হয়তো একাই নিজের কাঁধে দায় নিয়ে অন্য কাউকে বাঁচাতে চাইছে।’
তিনি বলেন, ’যখন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার শুরু তখন থেকে আমার স্বামী বসুন্ধরার সঙ্গে জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। আমাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কারও শত্রুতা না থাকলেও ভেতরে ভেতরে কেউ শত্রুতা করে থাকতে পারে। কার ভেতরে কী আছে সেটা তো আমরা বলতে পারব না। আমার ছেলেকে আর পাব না। তবে কারা খুন করেছে, জুয়েলের সঙ্গে আর কারা ছিল, সেটাও আশা করি পুলিশ খুঁজে বের করবে।‘
তৌহিদুলের বাবা নবী হোসেন বলেন, ‘জুয়েল রানার একার পক্ষে তৌহিদুলকে খুন করা সম্ভব নয়। এ হত্যায় শক্তিশালী একটি চক্র জড়িত বলে আমার সন্দেহ। মামলাটি ডিবিতে নেওয়া হয়েছে। আদালতও আদেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, পুলিশ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করবে।’
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, ’মামলা ডিবিতে স্থানান্তরের নির্দেশ আসার পর কেস ডকেট ডিবিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’