প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩২ পিএম
সংগৃহীত ছবি
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোষাকে তুলে নেওয়ার পর ১০ বছর ধরে নিখোঁজ শাহীনবাগের বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন। তাকে গাড়িতে আগুন দেওয়ার মামলায় আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী এই রায় দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আমার ভাইকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি মামলার আসামি হলে তদন্ত করে তাকে খুঁজে বের করা হোক। ১০ বছর ধরে যার খবরই পাচ্ছি না তাকে কীভাবে সাজা দেয়।
সুমনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ২৫মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সামনে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়ার সময় গাড়ির ভেতরে চালক ছিলেন। তেজগাঁও থানায় করা ওই মামলায় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।
সাজেদুল ইসলাম সুমন ঢাকার শাহিনবাগের সাবেক ৩৮ ও বর্তমান ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সুমনের বিরুদ্ধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমার ভাইকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি কোনো মামলায় আসামি হলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হোক। তুলি আরও বলেন, ১০ বছর আগেই র্যাবের ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যান।
ভাই নিখোঁজের পর থেকে সানজিদা ইসলাম ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি।
সানজিদা বলেন, ‘আমরা তার খোঁজে বিভিন্ন থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ একবারও আমাদের বলেনি যে তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। সেসময় ৪ বার পুলিশ সদস্যরা তাদের বাসায় গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে আগুন দেওয়া ওই প্রাইভেটকারের চালক জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনি কোনো মামলা করেননি। কী হয়েছে তা জানতে পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। তারপর আমাকে একটা সাদা কাগজে সই করতে বলেছিল। আমি এইটুকুই জানি। আমি কাউকে গাড়িতে আগুন দিতে দেখিনি, আমি কেন কাউকে আসামি করে মামলা করব?
তিনি বলেন, আমি ম্যাজিস্ট্রেটকেও একই কথা বলেছি। আমি বলেছি যে, আমি কোনো মামলা করিনি। আমাকে একটি সাদা কাগজে সই করানো হয়েছে।
৪ বছর আগে মৃত তাহেরকেও সাজা দিল আদালত
বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সুমনই নয়, প্রায় চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবু তাহের দাইয়াকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার এ রায় দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
গুম হওয়া আমিনুল ইসলাম জাকিরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। দণ্ডিত আবু তাহের দাইয়া নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
২০১৫ সালে নিউমার্কেট থানার মামলায় আবু তাহের পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে ৫ নম্বর আসামি ছিলেন। এজাহারে ছিলেন ৭ নম্বর আসামি। মৃত্যুর চার বছর পর তাকে সাজা দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপি নেতারা বলছেন, গায়েবি মামলার গায়েবি রায় হয়েছে। এতেই প্রমাণিত, বিএনপি নেতাকর্মীকে সাজা দিয়ে যেসব রায় হচ্ছে, তা সাজানো।
আবু তাহেরের ভাই সাইদ গাজী সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই বিএনপির রাজনীতি করায় দু’বার কারাভোগ করেন। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে এলাকা ছাড়েন। ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি আশকোনা এলাকায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত ভাইয়ের সাজা হয়েছে জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে সাইদ গাজী বলেন, গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা হচ্ছে। পুলিশকে বলেন কবর থেকে তাকে উঠিয়ে এনে জেল দিক।
গুম হওয়া জাকিরকেও সাজা
অপর দিকে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জাকির ২০১৫ সালের এপ্রিলে নিখোঁজ হন। বিএনপির দাবি, সুমনের মতো তাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গুম করেছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাসে তেজগাঁও এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে আগুনের মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সুমন, জাকিরসহ সাতজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী। একই মামলায় আরেক ধারায় আসামিদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলায় চার সাক্ষীর দু’জন পুলিশ সদস্য।