সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের ৫০ বছর
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৫৪ পিএম
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। প্রবা ফটো
সংবিধান ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে বিচারপতিদের প্রতি ন্যায়বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, আপামর মানুষের ন্যায়বিচার রচনা করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানে। সেটি নিশ্চিত করা ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের মূল লক্ষ্য। যেখানে জনগণের ইচ্ছা রাষ্ট্রপরিচালনার মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণের অধিকার রক্ষায় গত ৫০ বছর আদালত কোনো ধরনের অসাংবিধানিক কার্যক্রম সমর্থন করেনি। আমাদের স্বাধীনতা ও সেই মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে কাজ করতে হবে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ বছর ‘বঙ্গবন্ধুর ভাবনা সংবিধানের বর্ণনা’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করা হয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সংবিধানে হস্তক্ষেপ করে বিতর্কিত পরিবর্তন এনে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু জনগণ তা মেনে নেয়নি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও জনবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর যে যে দেশে এখনও মানুষ মৌলিক ও ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করছে, সবার পাশে থাকার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মালদ্বীপের প্রধান বিচারপতি উজ আহমেদ মুথাসিম আদনান বলেন, ‘একটি দেশের সংবিধান মানুষের অধিকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য, উচ্চশিক্ষা ও প্রতিরক্ষায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশে।’ তিনি রাষ্ট্রপরিচালনায় সংবিধানের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করে মালদ্বীপের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছাড় দেননি। আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তিনি ছিলেন ভিশনারি লিডার।’ ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের অনেক কিছুতে মিল আছে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধান দেশের সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছে। রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন হয়েছে আমাদের সংবিধানে। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।’ অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। জাতির জনক বলেছেন, রক্তে লেখা সংবিধান। আর সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করে চলেছে। সংবিধানে বলা আছে, কোনো হস্তক্ষেপ ব্যতীত বিচার বিভাগ পরিচালিত হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গকে হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিলে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সেই ইনডেমনিটি বাতিল করে ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করে। সামরিক সরকারের সংবিধান ও তাদের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির প্রমুখ।