প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রতিবেদনের পর রুল শুনানি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ২৩:৩৪ পিএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩ ১১:৪৪ এএম
‘এক্সকাভেটর দিয়ে পটিয়ায় পাহাড়-টিলা সাবাড়’ শিরোনামে গত ২১ মে দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে এলে সেদিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদনসহ চট্টগ্রামের পটিয়া ও চন্দনাইশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়। একই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ তৌহিদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আনোয়ার পারভেজ, স্থানীয় মোহাম্মদ হারুন, জসীম, জাহিদুল ইসলাম ও মহিম উদ্দীনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেই আদেশ অনুসারে বৃহস্পতিবার (১ জুন) তারা বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হন।
পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলার ইউএনও’র উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এক কোদাল মাটি কেটে নিলেও আইনে সর্বোচ্চ যে শাস্তি আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড় কাটলে মনে করবেন, আপনার শরীরে আঘাত লাগছে—এই অনুভূতি নিয়ে কাজ করবেন। কোনো ধরনের অবহেলা দেখলে পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। সুন্দরভাবে কাজ করেন।’
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস নয় বলেও উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস–আল–হারুনী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পটিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুল মামুন ও চন্দনাইশের ইউএনও মাহমুদা বেগম ওই দুই উপজেলায় পাহাড় কাটা প্রতিহত করার বিষয়ে কার্যক্রমসহ সচিত্র প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন। শুনানির পুরো সময় ওই ছয় ব্যক্তি আদালতের নির্দেশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস–আল–হারুনী।
ছয়জনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান রাজীব প্রধান।
দুই ইউএনওর উদ্দেশে শুনানির শুরুতে আদালত বলেন, ‘উপজেলাকে নিউক্লিয়াস বলা যায়। আমাদের উন্নয়ন সেখান থেকেই শুরু হয়। আপনারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে থাকেন।’
এরপর আদালতের জিজ্ঞাসার জবাব দেন ইউএনওরা।
পটিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুল মামুন ও চন্দনাইশের ইউএনও মাহমুদা বেগমের দাখিল করা প্রতিবেদনে মাটি কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিবরণ উল্লেখ রয়েছে।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘১ মাস, ১৫ দিন (বিনাশ্রম) দিয়েছেন। মনে হচ্ছে জাটকা ইলিশ ধরেছেন, যে কারণে ৫–১০ হাজার করে জরিমানা করছেন। জাটকা ইলিশ ধরা পেয়েছেন যে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইনে কী আছে, এক কোদাল কাটলে এই জরিমানা, দুই কোদাল কাটলে এই জরিমানা—স্ল্যাব দেওয়া আছে? সর্বোচ্চ সাজা কত?’
তখন ইউএনও বলেন, সর্বোচ্চ দুই বছর। আদালত বলেন, তাহলে এক মাস কেন? কী ধরনের চর্চা? পরিবেশের জন্য জেল দিলে সর্বোচ্চটাই দিতে হবে।
কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ তৌহিদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘পাহাড়ের মাটি কেটেছেন কেন? আপনি জনপ্রতিনিধি না?’ তখন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। পরে একপর্যায়ে তৌহিদ বলেন, ভুল হয়ে গেছে।