প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ২১:০৮ পিএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৫০ পিএম
জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিদেশে থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের আইনি লড়াইয়ের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। সোমবার (১০ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী পলাতক থাকায় তাদের পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করে আইনি লড়াই করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এ পর্যন্ত কোর্টে হাজির না হয়ে আইনি লড়াই করার কোনো নজির নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে করোনাকালে দেশের বাইরে থেকে দুজন (রণ হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার) আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। তখন আদালত কিন্তু সে দুজনের আবেদন খারিজই শুধু করেনি, তাদের জরিমানাও করেছিলেন। এ ছাড়া একজন আইনজীবী এ রকম একটা (সারেন্ডার না করা) মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট কিন্তু একপর্যায়ে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন। তাই পলাতক থেকে মামলা আইনি লড়াই করার সুযোগ নেই।‘
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়ে।
গত ২৯ মার্চ এই মামলায় পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। দুজনের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে শুনানিতে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তিনি। তবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, ‘তাদের আইনের আশ্রয় নিতে কে নিষেধ করেছে? তিনি থাকবেন লন্ডনে রাজকীয় ভবনে, আর বলবেন তাকে আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত (অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক থাকলে) থাকার পরও তার আইনজীবী নিয়োগের আবেদন আদালতের সময় নষ্ট ও আদালত অবমাননার সমান।’
গতকাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। পলাতক আসামিদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করতে শুনানি করেন তাদের আইনজীবী। অন্যদিকে দুদক এর বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার তারিখ ঠিক করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। এ দিন বিদেশে থেকে আসামিরা আইনজীবী নিয়োগ করে আইনি লড়াই চালাতে পারবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ওই মামলা হয়। পরের বছর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়ে। মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। তবে এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দাকে বিচারিক আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল করেন জোবায়দা। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।