আইনজ্ঞদের অভিমত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:০৪ পিএম
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২৫ পিএম
হাইকোর্ট ভবন।
২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। বিচারপতিকে পদ থেকে অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়া-সংক্রান্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘জনস্বার্থমূলক’ মামলাটি এখনও বিচারাধীন আপিল বিভাগে। তাই বর্তমানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আসলে কার হাতে--বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ষোড়শ সংশোধনীর চূড়ান্ত রায় রিভিউতে আটকে থাকায় বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহালের বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। অন্যদিকে আপিল বিভাগে চূড়ান্ত রায় হয়ে যাওয়ায় ক্ষমতা এখন জাতীয় সংসদের হাতেও নেই। বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা কার্যত এখন কারও কাছে নেই। অন্যদিকে বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় সরকার নতুন করে সংবিধান পুনর্মুদ্রণও করছে না।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বার্থমূলক মামলা। কারণ এটা আমাদের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি মামলা। দ্রুত এর সমাধান হওয়া দরকার।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় রিভিউর শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহালের বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে না। আবার আপিল বিভাগের রায়ের কারণে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এখন জাতীয় সংসদের হাতেও নেই। অর্থাৎ এখনও বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা কার হাতে তা স্পষ্ট নয়।’
২০১৭ সালের ৩ জুলাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ে হাইকোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ (বাদ দিয়ে) করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ‘সর্বসম্মতভাবে’ খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে একই বছরের ১ আগস্ট এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এর প্রায় পাঁচ বছর পর আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) শুনানির জন্য আগামী ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ৮ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার জজ এম ইনায়েতুর রহিম শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। এতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন।
২০১৬ বছরের ৫ মে হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ওই বছরের ১১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। তিন বিচারকের ওই বেঞ্চের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। অন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তাতে ভিন্নমত জানিয়ে আলাদা রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ৮ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। সব মিলিয়ে ১১ দিন রাষ্ট্র ও রিট আবেদনকারীর বক্তব্য শোনেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকেরা। শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে ১০ জন সিনিয়র আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন।
তাদের মধ্যে কামাল হোসেনসহ নয়জনই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একই মত পোষণকারীরা হলেন--টি এইচ খান, এএফএম হাসান আরিফ, এম আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এজে মোহাম্মদ আলী, এমআই ফারুকী ও আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অন্যদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে মত দেন শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি। আদালত মোট ১২ জন আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিলেও তাদের মধ্যে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও শফিক আহমেদ মতামত দেননি।
তাদের বাইরে ‘ইন্টারভেনার’ হিসেবে সংবিধানের এই সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখান সাবেক আইনমন্ত্রী ও প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু। পরে সাত বিচারকের আপিল বিভাগ বেঞ্চ ওই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ৩ জুলাই যে রায় দেন, তাতে হাইকোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করে দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ওই বছরের ১ আগস্ট।
প্রবা/জিজি/এমআই