× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আলমগীরের বদলে আল আমিন গ্রেপ্তার

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ২২:০৫ পিএম

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ০০:০৮ এএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রংপুরে কিশোরী হত্যা মামলার রায়ের পর দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির পরিবর্তে আল আমিন নামে এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের দাবি, মামলা চলাকালে গত আট বছরে কোনো তদন্তে কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি। হঠাৎ করে পলাতক আসামির স্থলে তাকে গ্রেফতার করে যাবজ্জীবন সাজা কার্যকর করতে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে আল আমিনের পরিবার। এলাকাবাসী তাকে নিদোর্ষ দাবি করে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৪ মে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের নরসিংহ গ্রামের আইয়ুব আলী ও তার স্ত্রী বাড়িতে কিশোরী মেয়ে শাহিনা ও নাতনি শান্তনাকে রেখে লালমনিরহাটে বিয়ের দাওয়াত খেতে যান। ওই দিন রাত ৯টায় আইয়ুব আলী বাড়িতে ফিরলে নাতনি শান্তনা জানায়, শাহিনাকে গ্রামের আবুজার, আলমগীর, নাজির হোসেন, আব্দুল করিম, আমিনুর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গেছে। এরপর রাত ১২টা পর্যন্ত মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করে পাননি আইয়ুব আলী। পরদিন ভোরে প্রতিবেশীরা জানায়, স্থানীয় মহুবর রহমানের ধৈঞ্চাক্ষেতে শাহিনার গলাকাটা লাশ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নাতনি শান্তনা আইয়ুব আলীকে জানায়, শাহিনার সঙ্গে স্থানীয় আবুজারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শাহিনা তাকে বিয়ের কথা বললে আবুজার বিভিন্নভাবে টালবাহনা করেন। বিষয়টি শাহিনা পরিবারকে জানিয়ে দেবে বলে হুমকি দিলে আবুজার ও তার বন্ধুরা মিলে কৌশলে শাহিনাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। শাহিনার ১৬ মে গঙ্গাচড়া থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হত্যামামলা দায়ের করেন।

হত্যা মামলার পর পুলিশ আবুজার, নাজির, আব্দুল করিম, আমিনুরকে গ্রেপ্তার করে। পলাতক ছিলেন আসামি আলমগীর। মামলাটি আট বছর চলার পর ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে রংপুরের নারী ও শিশুনির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তাছাড়া প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। তাছাড়া অন্য একটি ধারায় প্রত্যেককে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। আলমগীরের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৮ মার্চ রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে শহরের কেল্লাবন্দের মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে পুলিশ আদিতমারী সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে তার নাম আলমগীর ওরফে আল আমিন দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী আল-আমিন ওই ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নান ও মোছা. আশিদা বেগমের ৭ নম্বর সন্তান। জন্মনিবন্ধনে আল আমিনের বাবার নাম মো. আব্দুল হান্নান উল্লেখ রয়েছে। অপরদিকে শাহিনা হত্যা মামলায় আলমগীরের বাবার নাম মো. হান্নান উল্লেখ করা হয়েছে। জন্মনিবন্ধনে আল আমিনের জন্মতারিখ ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। ২০১৫ সালের মামলায় আসামি আলমগীরের বয়স ছিল ২০ বছর। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী সেই সময় কিশোর আল আমিনের বয়স ছিল ১৫ বছর। ২০১৫ সালে আল আমিন হারাগাছের দরদী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাস করে। নগরীর উত্তম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করে। এরপর আদিতমারী সরকারী কলেজে ২০২০-২০২১ সেশনে ইসলামের ইতিহাস ও সংষ্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন আল আমিন। বর্তমানে আল আমিন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এছাড়া আল আমিনের ভোটার নিবন্ধন তালিকা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চারিত্রিক সনদপত্রের তালিকাতেও নাম মো. আল আমিন, বাবার নাম মো. আব্দুল হান্নান। 

পরিবার ও এলাকাবাসীর বক্তব্য

হাজীপাড়ায় জরাজীর্ণ টিনের ঘেরা বাড়ির একটি ঘরে আল আমিনের মা ও বোনেরা বাস করেন। একটি ঘরে দুটি খাট, একটি কাঠের আলমারি ও একটি ট্রাঙ্ক রয়েছে। আলমারির ওপরে আল আমিনের কিছু বই। সাংবাদিকরা বাড়ির ভেতরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আশিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘গত ৫ বছর আগে আল আমিনের বাবা মারা যান। আমি এলাকায় ধাত্রী হিসেবে কাজ করে অভাবের সংসার চালাই। আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে শহরে লেখাপড়া করে। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে বাড়িতে আসে। ওই মার্ডার মামলার আসামিদের সাথে আমার ছেলের কোনো যোগাযোগের প্রশ্নই ওঠে না। কোনো দিন আমার বাসায় পুলিশ আসে নাই। আল আমিনের খোঁজও করে নাই। আমার নিরাপরাধ ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে চালান দিয়েছে। আমার দুই ছেলে আলী হোসেন ও আল আমিন। আমার আলমগীর নামে কোনো সন্তান নেই। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলের মুক্তি চাই। ন্যায় বিচার চাই।’

এলাকাবাসী গোলজার রহমান বলেন, ‘আল আমিন নির্দোষ। তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’ এলাকার আরও অনেকে একই দাবি জানিয়েছেন। মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী জোবাইদুল ইসলাম বুলেট বলেন, ‘আল আমিনকে গ্রেফতারে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়নি। একজন নিরাপরাধ লোক যদি রায় দেওয়া হত্যামামলায় গ্রেফতার হয় তাহলে তার জামিন পাওয়া অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আল আমিনের বাবার নামের সাথে আলমগীরের বাবার নামের আংশিক মিল থাকায় আলমগীরকে ছেড়ে গ্রেফতার করা হয়েছে আল আমিনকে। একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে জেলে রাখা মানবাধিকারের চরম লংঘন। এছাড়া মামলায় আলমগীরকে যুবক দেখানো হলেও তখন আল আমিন ছিল কিশোর। যদি আল আমিন অপরাধ করেও থাকত তাহলে তার বিচার হতো শিশু আদালতে। সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি হতো ১০ বছর। পুলিশ ওয়ারেন্ট তামিল দেখিয়ে দায় সেরেছে। গ্রেফতারের গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে।’

পুলিশের বক্তব্য

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা আদালত কর্তৃক আলমগীরের ওয়ারেন্ট পেয়েছিলাম। এন্টিটেররিজম রংপুর ইউনিট তাকে রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আমাদের জানিয়েছিল। আমরা গিয়ে আলমগীরকে নিয়ে এসে আদালতে সোপর্দ করেছি মাত্র।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা