গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:০৬ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৩ পিএম
পদ্মা নদীর একটি বালু মহাল। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে বাল্কহেড বা ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ওই এলাকার বালু মহালকে দেওয়া ইজারা বাতিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৯ মার্চ) জনস্বার্থে করা এ সংক্রান্ত এক রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিটটি করেন সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ আইনজীবী। তারা হলেন- ফরিদ হাসান মাহাদী, মো. রাশেদুজ্জামান রানা, মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মুরাদ মিয়া ও কাজী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন হাবিব-উন-নবী ও মো. আশিকুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী হাবিব উন নবী বলেন, ‘আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে গোয়ালন্দ-পাকশী পর্যন্ত এলাকার সকল বালুমহালকে দেওয়া ইজারা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে বাল্কহেড বা ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
রিটকারী আইনজীবী ফরিদ হাসান মাহাদী বলেন, ‘রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মার যে নৌপথ রয়েছে, এই নৌপথ দিয়েই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ভারি ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে সরকার বিআইডব্লিউটিএর অধীনে এ নৌপথের নাব্য উন্নয়নের প্রকল্প নেয়। ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে পদ্মার ১৫টি অংশে খনন কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘গোয়ালন্দ থেকে পাকশী পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন অংশে বাল্কহেড বা ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে কৃষি জমি ও বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে এ নৌপথ আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারি মালামাল পরিবহন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চরম হুমকির মুখে রয়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধটিও। এসব বিষয় নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। যে কারণে আমরা জনস্বার্থে সেসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গত বছরের ১৪ জুন ভূমি সচিব, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও পাবনার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আইনি নোটিশ পাঠাই। কাজ না হওয়ায় আমরা হাইকোর্টে রিট পিটিশন করি। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারি করেন। সে রুলটি বিচারাধীন রেখে সম্প্রতি সম্পূরক আবেদন করি।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারি ও ঝুঁকিপূর্ণ মালামাল পরিবহন নিরাপদ করতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মার বিভিন্ন অংশে বাল্কহেড বা বাংলা ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলন ও বালু মহালের ইজারা বন্ধে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
ভূমি সচিব, নৌপরিবহন সচিব, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিটিএর চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও পাবনার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।