প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ২১:৫৬ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ২২:০৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ঢাকার সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেপ্তার দুই ভবন মালিকসহ তিনজনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আসামিরা হলেন দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান, তার ভাই মতিউর রহমান ও ভবনের বেজমেন্টের স্যানিটারি ওয়্যার ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া।
রবিবার (১২ মার্চ) তাদেরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল মাবুদ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলমের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এখনও বন্ধ সড়ক, যানজটে ভোগান্তি
বিস্ফোরণের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংলগ্ন সড়কের একটি লেন বন্ধ রয়েছে। বিপরীত পাশের একটি লেইন দিয়েই চলছে দুই দিকের গাড়ি। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যানচালকদের। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি মেরামতের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, যানবাহনগুলো এক লেন দিয়েই উভয় দিকে চলাচল করছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন গুলিস্তান-সদরঘাটে যাওয়া-আসা করা যাত্রী ও পথচারীরা। আল-আমিন বলেন, ‘এই রাস্তায় এমনিতেই জাম থাকে। তার ওপর এই রাস্তা বন্ধ। অন্যদিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি কষ্ট হয়েছে বংশাল আসতে।’
সড়কটি কবে খোলা হবে তা এখনও বলতে পারেনি কেউ। ঘটনার পর রাজউক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেছেন, দিনের বেলা উন্মুক্ত করে রাতে বন্ধ রাখার সুপারিশ তৈরি করা হয়ছে। অন্যদিকে ভবনে বিস্ফোরণের জন্য তিতাস গ্যাস দায়ী নয় বলে জানিয়েছেন তিতাসের কর্মকর্তা।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী রবিবার রাতে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সড়কটি ব্যবহারের জন্য তারা এরই মধ্যে একটি সুপারিশ তৈরি করেছেন। ভবন মেরামতের কাজ চলমান থাকায় রাতে সড়ক বন্ধ এবং দিনে খোলা রাখতে চান তারা।
ভবন মেরামত
ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত কলামের সঙ্গে স্টিলের পাইপ দিয়ে অস্থায়ী সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের সামনের অংশে ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর পাশে পাইপগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৭টি পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভবনের ভেতরের অংশে এখনও কোনো পাইপ বসানো হয়নি। এই কাজ শেষ হলে সড়ক খোলা হতে পারে। তবে মেরামতের পরও ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে কী করা হবে সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
বিস্ফোরণ তিতাস গ্যাস থেকে নয়
বিস্ফোরণের পর গণমাধ্যমে খবর আসে, তিতাস গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিন্তু তিতাসের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং দক্ষিণ) শামসুদ্দিন আল আজাদ বলছেন, ‘তিতাসের গ্যাস থেকে ভবনে বিস্ফোরণ হয়নি।’ রবিবার দুপুরে তিনি সংবাদিকদের সামনে এই বক্তব্য দেন। এর আগে তিনি ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও গ্যাসের আলামত পাইনি। আামাদের আগে তিতাস গ্যাসের একটি বিশেষজ্ঞ টিম ভবন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছে। সে প্রতিবেদনেও গ্যাসের আলামত নেই। সুতরাং এই দুর্ঘটনা ন্যাচারাল গ্যাস সৃষ্ট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ন্যাচারাল গ্যাসের তুলনায় এলপিজি গ্যাস দিয়ে সাধারণত বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনের যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সে জায়গায় তিতাস গ্যাসের লাইন থেকে দূরে। তিতাসের রাইজার অক্ষত আছে। আমাদের গ্যাস লাইন দিয়ে যদি বিস্ফোরণ হতো তাহলে লাইনটা ব্লাস্ট হতো; আগুন ধরে যেতো। সে রকম কিছুই হয়নি।’
গত মঙ্গলবার বিকালে সিদ্দিকবাজারে কুইন ক্যাফে হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা বিধ্বস্ত হয়। প্রাণ হারান ২৪ জন। আহত হন শতাধিক। বিস্ফোরণে সেদিন পাশের সাত তলা ও পাঁচ তলা দুটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।