প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪২ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৪ পিএম
মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে ২ হাজার ১৬২ জন বন্দি রয়েছেন। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে কারা অধিদপ্তরের দাখিল করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদির এক রিট আবেদনের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
গত বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত তৈরি করা প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য সেলের সংখ্যা মোট ২ হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য ২ হাজার ৫১২টি আর নারীদের জন্য ১৪৫টি সেল রয়েছে। এসব সেলে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দি ২ হাজার ৯৯ এবং নারী বন্দি রয়েছে ৬৩ জন।
ঢাকা বিভাগের কারাগারগুলোতে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে। ১ হাজার ৭৮৪টি সেলের মধ্যে এ বিভাগে মোট বন্দি রয়েছে ১ হাজার ২৯৫ জন। আর সর্বনিম্ন সেল রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের কারাগারগুলোতে। ওই বিভাগে ৫৪টি সেলের মধ্যে মোট বন্দি রয়েছে মাত্র পাঁচজন। সেখানে কোনো নারী বন্দি নেই।
কারাগারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে ১ হাজার সেলের মধ্যে রয়েছে ৯৫১ জন বন্দি। তবে জেলা কারাগারগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে সেল থাকলেও কোনো বন্দি নেই। আর সেল নেই ঠাকুরগাঁও এবং কুড়িগ্রাম জেলায়।
প্রতিবেদনটি দাখিলের পর কনডেম সেলের ভেতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির।
২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি। আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট।
রিটের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯-এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই আসামিকে রাখা হয় কনডেম সেলে।