গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩১ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৪ পিএম
জেলা ও দায়রা জজ আদালত। প্রবা ফটো
গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক একাই তিনটি আদালতের বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। বেগম শামীমা আফরোজ নামে এই বিচারককে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মামলার শুনানিসহ বিভিন্ন বিচারিক কাজ সম্পাদন করতে হয়।
বর্তমানে তার হাতে তিন আদালত মিলে ৬ হাজার ৬৬২টি মামলার বিচার চলছে, যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে বিচারকাজ, বাড়ছে মামলাজট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি। অন্য দুটি আদালত হচ্ছে মানব পাচার অপরাধ আদালত ও শিশু আদালত।
জেলা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বারিউল সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিদিন ৬০-৭০টি মামলার কার্যক্রম চালানো একজন বিচারকের পক্ষে খুবই কঠিন কাজ। এত মামলার জন্য বিচারক মাত্র একজন হওয়ায় অনেক দিন পরপর মামলার তারিখ পড়ছে। এতে মামলার কাজ শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এ জন্য খুবই সমস্যার মধ্যে আছি।’
একজন বিচারককে নথিবদ্ধ করা, জামিন শুনানি, অভিযোগ গঠন, সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড, মামলা শেষ হলে রায় ঘোষণা প্রভৃতি কাজ করতে হয়। এসব কাজ শামীমা একাই করে যাচ্ছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার মো. মাইনুদ্দিন জানান, তিন আদালত মিলে ৬ হাজার ৬৬২টি মামলা রয়েছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি মামলা থাকে এই বিচারকের কার্যতালিকায়। এসবের মধ্যে প্রতিদিন ১৪-১৫টি নতুন মামলার নথি হয়। অন্য আদালত থেকে দুই-তিনটা মামলা স্থানান্তরিত হয়ে আসে। প্রতিদিন পাঁচটি কোর্ট পিটিশন দাখিল হয়।
এ ছাড়া গড়ে প্রতিদিন পাঁচ মামলায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়। প্রতিদিন ১৫-১৬টি জামিন শুনানি হয়ে থাকে। দৈনিক সাত-আটটি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়।
গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এ বি এম আফফান বলেন, তিনটি আদালতে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার মামলা আছে, যা একজনের হাতে থাকা সবার জন্য বিপজ্জনক। জেলা জজ আদালতের আইনজীবী শামিম হোসেন বলেন, ‘বিলম্বিত বিচারও অবিচার হিসেবে বিবেচিত হয়। বিচারকাজে যত দেরি হয়, ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ততই কমে যায়। তাই দ্রুত বিচারকাজ শেষ হওয়া দরকার।’
আইনজীবীরা জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ২ হাজার মামলার জন্য একজন বিচারক থাকার কথা। সে অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনজন বিচারক নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু গাজীপুরে বিশাল মামলা জট থাকলেও এখানে মাত্র একজন বিচারক। তাই এখানে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
আদালত সূত্র বলছে, একজন বিচারক ও চারজন সহকারীর সমন্বয়ে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চলছে। এই আদালতের বিচারক বেগম শামীমা আফরোজ অতিরিক্ত হিসেবে মানব পাচার অপরাধ আদালত ও শিশু আদালতের বিচারকের কাজ করছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৮৪৮টি, শিশু আদালতের মামলা ১ হাজার ১৮১টি, মানব পাচার মামলা ৮৫টি এবং সিপি বা কোর্ট পিটিশন মামলা রয়েছে ৫৪৮টি। এ ছাড়া জেলার পাঁচটি ও মহানগরীর আটটি থানায় প্রতিদিনই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নতুন নতুন মামলা রেকর্ড হচ্ছে। সেগুলোও যুক্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে হাজার হাজার মামলা থাকায় বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে বিচারকের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। বিচার প্রার্থীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘কয়েক মাস আগে গাজীপুর আদালত পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধান বিচারপতি ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব। আমরা তাদের এখানে একাধিক বিচারক নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছি।’