× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভিন্ন ধর্মে প্রেম চাকরি গেল পুলিশের

হিরা তালুকদার

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৮ পিএম

প্রতিকী ফটো

প্রতিকী ফটো

মুসলিম তরুণী তারানা মেহজাবীন সিদ্দিকী ন্যান্সির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে সার্জেন্ট পদে প্রশিক্ষণকালে চাকরিচ্যুত করা হয় অরুণ চৌহান চৌধুরীকে। ন্যান্সির পরিবার অরুণের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দেয়। এই হলো তাকে চাকরিচ্যুত করার অজুহাত। কিন্তু স্বয়ং ন্যান্সি বলছেন, তার পরিবার অরুণের বিরুদ্ধে চুরির মিথ্যা অভিযোগ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তদন্ত করে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে। তবু তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি পুলিশ কর্তৃপক্ষ। অরুণ শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আদালতে যাওয়ার আগে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেন অরুণ চৌহান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় ওই বছর ২৮ জুন। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত সুপারিশে বলা হয়, ‘অরুণ চৌহান ও তারানা মেহজাবীন সিদ্দিকীর প্রেম নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার, অরুণ চৌহানের প্রতি তারানার অতি আগ্রহ ও বিয়ে করার ঝোঁক, প্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য চৌহানের বিরুদ্ধে তারানার বাবা-মায়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ ও দরখাস্ত প্রেরণ ইত্যাদি কারণে পুলিশ একাডেমি কর্তৃপক্ষ চৌহানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। কিন্তু যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলো খুবই দুর্বল এবং তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। সাত বছর আগের অপ্রমাণিত একটি চুরির অভিযোগের ভিত্তিতে চৌহানকে চাকরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তগ্রহণ যৌক্তিক হয়নি। একাডেমির ক্লাসে চৌহানের অমনোযোগিতার যুক্তিযুক্ত কারণ উল্লেখ নেই। এটি ‘তৈরি করা হয়েছে’ বলে প্রতীয়মান হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করা প্রাপ্তবয়স্ক একজন মেয়ের সঙ্গে কেবল প্রেমের সম্পর্ক থাকার কারণেই একাডেমি কর্তৃপক্ষ চৌহানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, যা অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এসব তথ্য মিলেছে।

পুলিশের মতো পেশাদার বাহিনী শুধু ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে ভালোবাসার কারণে চাকরিচ্যুত করার এই ঘটনাকে চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় ও বেআইনি বলে উল্লেখ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে অরুণ চৌহানকে চাকরি ফিরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ পুলিশ হেড কোয়ার্টারের তোয়াক্কা না করাকে চরম ধৃষ্টতা বলে মন্তব্য করেন তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অরুণ চৌহান চৌধুরী ও তারানা মেহজাবীন সিদ্দিকী ন্যান্সি এমএসসি সম্পন্ন করেন। একই বিভাগে পড়ার সুবাদে প্রথমে তাদের বন্ধুত্ব ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অরুণ ২০০৯ সালে পাস করার পরের বছর শিক্ষানবিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি পান। একই বছর ১ আগস্ট তিনি রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগ দেন। এরই মধ্যে অরুণ ও ন্যান্সির প্রেমের বিষয়টি জেনে যান ন্যান্সির বাবা-মা। ন্যান্সির বাবা আব্দুর রহমান সিদ্দিকী ও মা আকলিমা আক্তার দুজনই তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আট বছর আগের একটি মিথ্যা চুরি ঘটনায় অভিযুক্ত করে রাজশাহীর মতিহার থানায় মামলা করেন ন্যান্সির মা আকলিমা আখতার। এ ছাড়া ২০১০ সালের ১২ ও ২৮ ডিসেম্বর যথাক্রমে ন্যান্সির মা ও বাবা সারদায় পুলিশ একাডেমিতে অরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন; অরুণ চৌহান চৌধুরী হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও ন্যান্সিকে ভালোবাসেন এবং বিয়ে করতে চান। মামলা ও এসব অভিযোগের পর ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ট্রেনিংয়ের শেষ দিনে অরুণকে বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরে অরুণ ও ন্যান্সি বিয়ে করেন। এখন তাদের ছয়টি সন্তান রয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু অন্য ধর্মের একটি মেয়েকে ভালোবাসার কারণে পুলিশের চাকরি চলে যাওয়া অবাক করার মতো। এটা সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের আইনগত দিক পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। ২০১২ সালের ৩ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় তাদের মতামত দেয়। তাতে বলা হয়, অরুণ চৌহানের পুনর্বহালের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই মতামতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন সচিব আবু সালেহ। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব ফারজানা জেসমিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি আইজিপি বরাবর পাঠানো হয়। তাতে বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে অরুণ চৌহানকে পুনর্বহালের জন্য বলা হয়। পুনর্বহালের বিষয়টি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পিআরবি ১৯৪৩-এর ৮৮৪ বিধিমোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী সরকার পুলিশ বাহিনীর সকল কাজ তত্ত্বাবধান করবে। পিআরবি বিধি ৮৮৮-এর (ই) উপবিধি মোতাবেক সরকার যেকোনো দরখাস্ত বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

কিন্তু আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত-নির্দেশনায় কর্ণপাত না করে উল্টো পুলিশ হেডকোয়ার্টার অরুণ চৌহানকে চাকরি না দেওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। এরপর চলতি বছরের নভেম্বর অরুণ চৌহান পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। পুলিশের এমন আচরণকে ধৃষ্টতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু অন্য ধর্মের একটি মেয়ে ভালোবাসার কারণে পুলিশের চাকরি চলে যাওয়া অবাক করার মতো। এটা সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে অরুণ চৌহানের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। সেখানেও উঠে এসেছে ভিন্ন ধর্মের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে পুলিশের সার্জেন্ট পদ থেকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে অরুণ চৌহানকে। ওই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারকে অরুণের চাকরি ফিরিয়ে দিতে মতামত ও নির্দেশনা দেয়। অথচ এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি পুলিশ হেডকোয়ার্টার। এটা দুই মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার এক্ষেত্রে খুবই কট্টর মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। একদিকে সাম্প্রদায়িক মনোভাব, অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষা। পুরো ঘটনা যাচাই-বাছাই না করে একজন শিক্ষানবিশ সার্জেন্টকে এভাবে চাকরিচ্যুত করা বেআইনি। তা ছাড়া যাদের অধীনে পুলিশ বাহিনী, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ গ্রহণ না করা উগ্রতার মধ্যে পড়ে।’ মানবাধিকার নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বিষয়টিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সাম্পদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া এটি চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয়। পুলিশ বাহিনীর উচিত এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা।’

এ বিষয়ে ন্যান্সি তার বাবা-মায়েরও সমালোচনা করেছেন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অরুণ শুধু ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় আমার বাবা-মা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও পুলিশ একাডেমিতে অভিযোগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করিয়েছে। আমার বাবা-মা এর আগেও রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক ও ব্যক্তিগত মতপার্থক্যজনিত কারণে তাদের সহকর্মীসহ বহু পরিচিত মানুষকে ফাঁসিয়েছে।’ ন্যান্সি আরও বলেন, ‘অরুণ চৌহান এখন আমার স্বামী। আমাদের ছয়টি বাচ্চা আছে। তার চাকরিটা খুব দরকার। অরুণের চাকরি ফিরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশও শুনছে না পুলিশ হেডকোয়ার্টার। তাই বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে অন্যায়ভাবে চাকরি হারানো অরুণ।’

দিতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ পুলিশ হেড কোয়ার্টারের তোয়াক্কা না করাকে চরম ধৃষ্টতা বলে মন্তব্য করেন তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অরুণ চৌহান চৌধুরী ও তারানা মেহজাবীন সিদ্দিকী ন্যান্সি এমএসসি সম্পন্ন করেন। একই বিভাগে পড়ার সুবাদে প্রথমে তাদের বন্ধুত্ব ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অরুণ ২০০৯ সালে পাস করার পরের বছর শিক্ষানবিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি পান। একই বছর ১ আগস্ট তিনি রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগ দেন। এরই মধ্যে অরুণ ও ন্যান্সির প্রেমের বিষয়টি জেনে যান ন্যান্সির বাবা-মা। ন্যান্সির বাবা আব্দুর রহমান সিদ্দিকী ও মা আকলিমা আক্তার দুজনই তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আট বছর আগের একটি মিথ্যা চুরি ঘটনায় অভিযুক্ত করে রাজশাহীর মতিহার থানায় মামলা করেন ন্যান্সির মা আকলিমা আখতার। এ ছাড়া ২০১০ সালের ১২ ও ২৮ ডিসেম্বর যথাক্রমে ন্যান্সির মা ও বাবা সারদায় পুলিশ একাডেমিতে অরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন; অরুণ চৌহান চৌধুরী হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও ন্যান্সিকে ভালোবাসেন এবং বিয়ে করতে চান। মামলা ও এসব অভিযোগের পর ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ট্রেনিংয়ের শেষ দিনে অরুণকে বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরে অরুণ ও ন্যান্সি বিয়ে করেন। এখন তাদের ছয়টি সন্তান রয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু অন্য ধর্মের একটি মেয়েকে ভালোবাসার কারণে পুলিশের চাকরি চলে যাওয়া অবাক করার মতো। এটা সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের আইনগত দিক পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। ২০১২ সালের ৩ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় তাদের মতামত দেয়। তাতে বলা হয়, অরুণ চৌহানের পুনর্বহালের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই মতামতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন সচিব আবু সালেহ। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব ফারজানা জেসমিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি আইজিপি বরাবর পাঠানো হয়। তাতে বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে অরুণ চৌহানকে পুনর্বহালের জন্য বলা হয়। পুনর্বহালের বিষয়টি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পিআরবি ১৯৪৩-এর ৮৮৪ বিধিমোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী সরকার পুলিশ বাহিনীর সকল কাজ তত্ত্বাবধান করবে। পিআরবি বিধি ৮৮৮-এর (ই) উপবিধি মোতাবেক সরকার যেকোনো দরখাস্ত বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

কিন্তু আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত-নির্দেশনায় কর্ণপাত না করে উল্টো পুলিশ হেডকোয়ার্টার অরুণ চৌহানকে চাকরি না দেওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। এরপর চলতি বছরের নভেম্বর অরুণ চৌহান পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। পুলিশের এমন আচরণকে ধৃষ্টতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু অন্য ধর্মের একটি মেয়ে ভালোবাসার কারণে পুলিশের চাকরি চলে যাওয়া অবাক করার মতো। এটা সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে অরুণ চৌহানের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। সেখানেও উঠে এসেছে ভিন্ন ধর্মের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে পুলিশের সার্জেন্ট পদ থেকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে অরুণ চৌহানকে। ওই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারকে অরুণের চাকরি ফিরিয়ে দিতে মতামত ও নির্দেশনা দেয়। অথচ এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি পুলিশ হেডকোয়ার্টার। এটা দুই মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার এক্ষেত্রে খুবই কট্টর মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। একদিকে সাম্প্রদায়িক মনোভাব, অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষা। পুরো ঘটনা যাচাই-বাছাই না করে একজন শিক্ষানবিশ সার্জেন্টকে এভাবে চাকরিচ্যুত করা বেআইনি। তা ছাড়া যাদের অধীনে পুলিশ বাহিনী, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ গ্রহণ না করা উগ্রতার মধ্যে পড়ে।’ মানবাধিকার নেত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বিষয়টিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সাম্পদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া এটি চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয়। পুলিশ বাহিনীর উচিত এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা।’ এ বিষয়ে ন্যান্সি তার বাবা-মায়েরও সমালোচনা করেছেন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অরুণ শুধু ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় আমার বাবা-মা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও পুলিশ একাডেমিতে অভিযোগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করিয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা