× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১২ বিচারপতির বেঞ্চ বাদ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৪৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ১২ বিচারপতি অপসারণে বিদ্যমান কোনো বিধান না থাকায় আপাতত তাদেরকে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। গতকাল বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘হাইকোর্ট ঘেরাও’ কর্মসূচির মধ্যে ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকাল চারটার দিকে তিনি এ ঘোষণা দেন। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো দীর্ঘ ছুটি শেষে আগামী ২০ অক্টোবর কোর্ট খুললে ওই বিচারপতিরা আর বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট বিচারপতি’দের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং।

এর আগে গত ১০ আগস্ট সমন্বয়কদের ডাকে হাইকোর্টে জমায়েত হয়েছিল একদল শিক্ষার্থী। তাদের দাবির পর ওইদিন পদ ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। পরে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিও পদত্যাগ করেন।

গতকাল বিকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞার কক্ষে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও এ আর রায়হান এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব শরীফুল আলম ভূঁঞা এবং বাংলাদেশ আইন সমিতির সদস্য সচিব অ্যডভোকেট এম মাহবুবুর রহমান খানও উপস্থিতি ছিলেন সেই বৈঠকে। ওই বৈঠক শেষে প্রধান বিচারপতির কক্ষে যান রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, ‘আপনাদের যে দাবি, আপনাদের যে লিডার, তারা আমার চেম্বারে বসেছিলেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। আপনারা জানেন, বিচারপতির পদত্যাগ বা অপসারণÑ এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। বর্তমানে দেশে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন বিদ্যমান নেই। বিগত সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল। একটা সংশোধনী হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছেন। সেটা আবার সরকার রিভিউ আকারে পেশ করেছে। আগামী ২০ অক্টোবর সেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগে (ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ) শুনানি হবে। আশা করছি, এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো শুরু হবে।’

আজিজ আহমদ ভূঞা আরও বলেন, ‘অন্যদিকে বিচারপতিদের পদত্যাগের আপনাদের যে দাবি, বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ বা অপসারণের সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে সুপ্রিম কোর্টের, প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয়, উনি সেটা করেছেন।’ তিনি জানান, ‘বিচারপতি অপসারণের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এককভাবে জড়িত নন; রাষ্ট্রপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও আইন উপদেষ্টা জড়িত আছেন। আপাতত ১২ জনকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে বাকিগুলো আপনাদের সামনে আসবে।’

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।

প্রধান বিচারপতির ‘চায়ের আমন্ত্রণ’ পাওয়া ১২ জন

যে ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদেরকে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ‘চায়ের আমন্ত্রণ’ জানান বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির ‘চায়ের আমন্ত্রণে’ দুপুর পর্যন্ত ছয়জন বিচারপতি হাজির হন। তাদেরকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন বলে জানা যায়। 

১২ জন বিচারপতির মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন– বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আকতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি আতোয়ার রহমান, বিচারপতি খিজির হায়াৎ, বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশিষ রঞ্জন ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।

তাদের মধ্যে এস এম মনিরুজ্জামান, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, শাহেদ নূরউদ্দিন, মো. আকতারুজ্জামান, মো. আমিনুল ইসলাম ও এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অন্তত ৩০ জন বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। তারা প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০ জনের নাম ও অভিযোগ সংবলিত তালিকা জমা দেন। ওই তালিকা থেকেই ১২ জন বিচারপতিকে ‘চায়ের আমন্ত্রণ’ জানানো হয় বলে জানা গেছে।

প্রধান বিচারপতির চায়ের আমন্ত্রণ পাওয়াদের মধ্যে থাকা বিচারপতি আতোয়ার রহমান নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে গত মঙ্গলবার হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এর পর ওই বেঞ্চের বিচারক বদলে দেন প্রধান বিচারপতি। বেঞ্চ অফিসাররা ‘দুর্নীতির’ মাধ্যমে কার্যতালিকায় মামলা তোলায় অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ওই বেঞ্চের বিচারকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন একজন আইনজীবী। কিন্তু তার প্রতিকার না করে বিচারপতি আতোয়ার রহমান সেই আইনজীবীর সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেন বলে প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ দেন আইনজীবীরা। তারপর বিচারপতি আতোয়ার রহমান খানকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ নতুন করে গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে মঙ্গলবার ঢাকার হাকিম আদালতেও আরেকটি ঘটনা ঘটে। দুই মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খানকে আদালতে নেওয়া হলে দলটির সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। সে সময় তারা জয় বাংলাসহ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর আওয়ামীপন্থি বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যাদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

ছাত্রদের হাইকোর্ট ঘেরাও

‘আওয়ামীপন্থি ফ্যাসিস্ট বিচারকদের’ পদত্যাগের দাবিতে গতকাল ‘হাইকোর্ট ঘেরাও’ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এনেক্স ভবনের সামনের চত্বরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে বক্তব্য রাখেন এবং এ সময় ‘শেখ হাসিনার বিচারক, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিস্ট সরকার’, ‘দলবাজ বিচারপতি’ বলে স্লোগান দেন।

দুপুর ১টায় হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। কর্মসূচি পালনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামীপন্থি ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের অপসারণ করতে হবে। সুপ্রিমকোর্ট, জজকোর্ট, দায়রা জজ আদালত থেকে আওয়ামী প্যানেলের আইনজীবীদের অপসারণ করতে হবে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে হবে। তিনি দুপুর ২টার মধ্যে বিচারকদের অপসারণ করার আল্টিমেটাম দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে ঘোষিত ৮ দফার মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদের বিলুপ্ত ঘোষণা। শেখ হাসিনা যেসব বিচারক দিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল তাদের অপসারণ করতে হবে। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হাজার হাজার ভাইবোনেরা এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।’ 

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে যাত্রা করে ছাত্রদের মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্র হল ঘুরে মিছিলটি কলাভবনের সামনে দিয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসে। পরে দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে মিছিল বের করে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে হাইকোর্টের দিকে যান তারা। মিছিল থেকে ‘লড়াই লড়াই, লড়াই করো, হাইকোর্ট ঘেরাও করো,’ ‘আওয়ামী লীগের বিচারক, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘শেখ হাসিনার বিচারক, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার রাতে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল 

একই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে অবস্থান নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ’। এ সময় কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এ ছাড়া সারা দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ হওয়া পিপি, এপিপিদের অপসারণ দাবি করেন আইনজীবীরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা